করোনা আতঙ্কে নীরব নিস্তব্ধ জুড়ী শহর


মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে সবচেয়ে ছোট উপজেলা হলো জুড়ী উপজেলা। এই উপজেলায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। যে শহরটিতে প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষের আনোগোনা থাকতো, সেই শহরের রাস্তা-ঘাটগুলো এখন একদম ফাঁকা। কোথাও কোনো লোকজন নেই। চারিদিকে শুধুই নিরব নিস্তব্ধতা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উপজেলা প্রশাসনের ঝটিকা অভিযান শুরু হয়। শহরে সব ধরনের জনসমাগম এড়াতে কিছু গাড়িচালক ও মানুষদের ধাওয়া করা হয়েছে। এরপর থেকেই পুরো শহরটি যেন মানুষ শূন্যে হয়ে পড়ে। পাশাপাশি আকস্মিক সেনাবাহিনীর একটি টিম শহরে টহল দেয়।গতকাল শনিবার
কুলাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাদেক কাওছার দস্তগীর,
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বণিক, সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা শহরের রাস্তায় লোকজনকে বের না হয়ে বাসা-বাড়িতে থাকার জোরালো আহবান জানান। তারা উপজেলার স্থানীয় গোয়ালবাড়ী বাজার, সীমান্তবর্তী ফুলতলা বাজারে গিয়ে ও লোকজনকে সরিয়ে দিতে বাধ্য করেন।জেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও প্রতিরোধসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন স্বাক্ষরিত একটি গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে এবং জেলার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাঁচা বাজার, খাবার, ফার্মেসী, হাসপাতাল এবং জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া এ জেলার সকল শপিংমল, দোকান-পাট, রাস্তার পাশের চায়ের দোকান, সেলুন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।
তাছাড়া এ জেলার সকল উপজেলার সাপ্তাহিক বাজার ও গবাদি পশুরহাটও বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা দেওয়ার পরপরই জেলা পুলিশ সুপার মো ফারুক আহমদ পিপিএম জুড়ীতে এসে প্রচারনা চালান।এতে জুড়ীর সকল দোকানি তাদের দোকানপাট বন্ধ করে দেন এবং সকলেই তাদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন। জরুরি প্রয়োজনে কিছু মানুষ শহরে আসছেন। সরেজমিন শনিবার সন্ধ্যায় জুড়ী শহরের প্রাণকেন্দ্রে কামিনীগন্জ বাজার,ভবানীগন্জ বাজার সহ বেশ কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানুষের তেমন কোন আনাগোনা নেই।
গণপরিবহন চলাচল নেই।ফার্মেসী আর সামান্য কয়েকটা মুদি দোকান খোলা রয়েছে। প্রশাসনের লোকদের নজরদারি দিতে দেখা গেছে। পাশাপাশি জায়ফর নগর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাজারে জীবাণুনাশক ব্লিচিং পাউডার ছিঁটাতে দেখা গেছে। প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে জুড়ী শহর সহ গ্রামাঞ্চলের বাজার এবং রাস্তাগুলো জনশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।আগের মতো আর মানুষের আনোগোনা না থাকলে ও ছোট খাটো কোন দোকান খোলা হলে প্রশাসন তাতে বাধা দেওয়ায় তাও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।এ যেন এক জনশূন্যে পরিণত হয়েছে গোঠা উপজেলা।আজ রবিবার সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরকারের পক্ষ থেকে ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়া হচ্ছে। ফলে অতীব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের হতে দেখা যাচ্ছে না। এলাকার রাস্তাগুলোতে রয়েছে প্রশাসন ও পুলিশের রয়েছে কড়া নজরদারি। প্রথম দিন থেকে বন্ধ রয়েছে শহরের সকল দোকানপাট। করোনা আতঙ্কে আশপাশের মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না বা বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ। করোনা প্রতিরোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সর্বাত্বক প্রস্তুস্তি নেওয়া হয়েছে।এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অসীম চন্দ্র বণিক জুড়ী হাসপাতালের ডাক্তার,সক্রিয় সাংবাদিকদের প্রয়োজনমাফিক পিপিই প্রদান করা করেছেন।বিদেশ ফেরত দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোজ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন স্টিকার লাগানো হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে।

এদিকে করোনা আতঙ্কে বেশ প্রভাব পড়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা সমরজিৎ সিংহের দেওয়া তথ্যমতে,বর্তমানে
হাসপাতালে কোন ভর্তি রোগী নেই । গতকাল পর্যন্ত ২জন রোগী ভর্তি ছিল। পাশাপাশি আজ রবিবার হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন মাত্র ১০ জন রোগী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক মানুষের নিরাপত্তার জন্য আমরা সর্বদা মাঠে রয়েছি। করোনার কারনে দিনমজুর,অসহায়দের জন্য সরকারের দেওয়া ত্রান ইতিমধ্যে আমরা বাড়ি বাড়ি পৌছে দিচ্ছি।

জুড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, জনসমাগম এড়াতে জুড়ী উপজেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ বাজারে পুলিশের মনিটরিং টিম কাজ করছে । করোনা ভাইরাসে কাউকে আতঙ্কিত না হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থেকে বাড়িতে অবস্থান করার জন্য সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি।
এশিয়াবিডি/বেলাল/কামরান

আরও সংবাদ