দাঁড়াও! দেখো মেঘের আড়ালে রৌদ্রছায়া

আসল কথা কী? আসল কথা হলো- সবার আগে তোমাকে মানুষের হতে হবে, তবেই মানুষ হবে তোমার। পৃথিবী যখন সে এক অদৃশ্য দানবের ভয়ে জড়োসড়ো, শুধু জড়োসড়ো নয় দমবন্ধ; চোখবন্ধ করে ভেতর থেকে সিটকিনি দিয়ে দরজা আটকায়ে রেখেছেন। মৃত্যুর মিছিল থেকে নিজেকে সরায়ে রাখার কঠিন থেকে কঠিনতর যুদ্ধ করছেন- তখন কিছু মানুষ, আবারও বলছি- কিছু মানুষ নিজের কথা, নিজের পরিবার, পরিজনের কথা চিন্তা না করে, অন্য মানুষের [জনগণ] জন্যে মাঠে-ঘাটে, পাড়ায়-মহল্লায় ছুটছেন তো ছুটছেনই।

বিশ্বাস করি মহাদুর্যোগের ভিতর দিয়ে আমাদের এই পৃথিবীটা সুন্দর একটা পৃথিবীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে- আবার জোছনা গলে পড়বে আমাদের মাটির ডেরায়, ভোর হবে, সূর্য উঠবে। সোনালী দিন আসবে। ভয়েভাঙা চেহারাগুলো আবার জোড়া লাগবে, সজিব হবে সব। স্বাভাবিক হবে মানুষজীবন। আতঙ্ক কাটবে। চোখের নিচের লেপটানো কালি মুছে যাবে। বলিরেখাগুলো আপনাআপনি মিশে যাবে। স্থির হওয়া স্বপ্নগুলো আবার ডানা মেলবে। মানুষের মন থেকে ভয় কাটবে। হাট-বাজার খুলবে। রাস্তার পাশে চা-এর দোকানে আড্ডা জমবে। নদীর পানি ছলছল শব্দে ভাটির পানে ছুটবে। খেয়ার মাঝি নৌকার গলুয়ের বাঁধন ছাড়বেন ঘাট থেকে- এপাড়ের মানুষ ওপাড়ে যাবেন, এ দেশের মানুষ ঐদেশে…।

আমরা যখন ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’, তখন কোন সে দায়মুক্তির লক্ষ্যে তারা মাঠে ছুটছেন? তারা কতটুকু নিরাপদ, যদি তারা আক্রান্ত হয়েই যান; এ আক্রান্ত তো একা হবেন না-! তবু লড়ছেন, তারা লড়েন, তারা লড়ে যাবেন মানুষের জন্য, আমরা যারা নাগরিক অথবা জনগণ আমাদের জন্য। এসব মানুষের দেখা খুব কমই মিলে। এঁরা সংখ্যায় খুবই কম, যারা মানুষ বুঝেন, বোঝবার চেষ্টা করেন। মানুষের বিপদের সময় আলাদা করে নিজের দিকে তাকানোর সময় পান না।

আর ওদের সংখ্যা অনেক বেশি, যারা- এ কঠিন মুহূর্তে দেশের কিংবা বিদেশের নামিদামি হোটেলে সপরিবারে ‘কোয়ারেন্টাইন’ যাপন করছেন। তিন বেলার জায়গায় ছয় বেলা গিলছেন ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের রসনা। তারা আসলে বরাবরই স্বার্থপর শ্রেণির। তারা ম্যান্টেইন করেন- দুনিয়া গোল্লায় যাক, রসাতলে যাক, আমি ঠিক আছি তো? আমার ভাইবেরাদর, বহাল তবিয়তে আছে তো?

কই, তাদেরকো তো এই কয়দিন ধরে দেখছিনা। তারা কোথায়? কোথাও তাদের কোনো রকমের এক্টিভিটি চোখে পড়ছেনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই বলেন আর খবরের মাধ্যমই বলেন, কোথাও নেই তারা। তারা মৃত্যু থেকে বাঁচতে গা-ঢাকা দিয়েছেন ঠিকই। তারা গা ঢাকবেন এটাই সত্য।

লকডাউনের মতো একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি যখন দেশে বিরাজ করছে- দিন আনে দিন-খাওয়া মানুষগুলো খিদের যন্ত্রণায় যখন কুঁকড়ে যাচ্ছেন- অন্তত এই সময়েও তোমাদের চেহারাখানা দেখাও। সাহায্যের হাত বাড়াও।

আর যারা মাঠে-ময়দানে আছেন রাতদিন, তাদেরকে একটু হলেও ধন্যবাদ জানাও, হাত শক্তিশালী করো, মনোবল দৃঢ় করো তাদের। বিশ্বাস করি মহাদুর্যোগের ভিতর দিয়ে আমাদের এই পৃথিবীটা সুন্দর একটা পৃথিবীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে- আবার জোছনা গলে পড়বে আমাদের মাটির ডেরায়, ভোর হবে, সূর্য উঠবে। সোনালী দিন আসবে। ভয়েভাঙা চেহারাগুলো আবার জোড়া লাগবে, সজিব হবে সব। স্বাভাবিক হবে মানুষজীবন। আতঙ্ক কাটবে। চোখের নিচের লেপটানো কালি মুছে যাবে। বলিরেখাগুলো আপনাআপনি মিশে যাবে। স্থির হওয়া স্বপ্নগুলো আবার ডানা মেলবে। মানুষের মন থেকে ভয় কাটবে। হাট-বাজার খুলবে। রাস্তার পাশে চা-এর দোকানে আড্ডা জমবে। নদীর পানি ছলছল শব্দে ভাটির পানে ছুটবে। খেয়ার মাঝি নৌকার গলুয়ের বাঁধন ছাড়বেন ঘাট থেকে- এপাড়ের মানুষ ওপাড়ে যাবেন, এ দেশের মানুষ ঐদেশে…।

তখন তোমরা ভিআইপি, সিআইপি, পয়সাওলারা! হোটেল থেকে লোকালয়ে নামবে। কিন্তু কেমন করে মুখ দেখাবে! পথ একটাই- এই ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে বসার প্রয়োজন নেই; একটু দাঁড়াও। একটু খবর নেও পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমানের মতো- আরো যারা এই দেশের মানুষকে অদৃশ্য দানব করোনার ছুঁবল থেকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, রাস্তা-ঘাট, শহর-বন্দর নিজ হাতে ধুয়ে বিপদমুক্ত করছেন ব্লিচিং মেশানো পানি দিয়ে…।

লেখক:: মুজাহিদ আহমদ
সম্পাদক: সাপ্তাহিক পূর্বদিক।

সূত্রঃ আই নিউজ।

এশিয়াবিডি/ ডেস্ক/ মুবিন 

আরও সংবাদ