বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ও প্রবাসীদের নিয়ে কিছু কথা
চলমান করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে প্রবাসীদের নিয়ে দেশে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। অবাক লাগে কিছু মানুষের কান্ড জ্ঞানহীন কিছু কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তা শুনলে। প্রবাসীরা দেশে আসাটা কি শুধু তাদেরই দোষ? সেক্ষেত্রে দেশের সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের কোন দোষ নেই? যদি রাষ্ট্র সব দিক দিয়ে কন্ট্রোল করতে না পারে তাইলে ফ্লাইট বন্ধ করে দিতে পারতো! সেটা না করার কারণ কি?
এই সময়ে প্রবাসীরা দেশে যাওয়াটাকেও আমি সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করিনা। কিন্তু এটা মানতেই হবে সরকার তাদেরকে দেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। দেশে নিয়ে তাদের এরকম অপবাদ চাপিয়ে দেওয়া কখনোই কাম্য নয়। আর এতোসব উন্নয়ন কোথায় যায়? যদি ৫০০ জন প্রবাসীকে ১৪ দিন একটা ভালো জায়গায় কোয়ারেন্টাইনে রাখতে না পারেন? সরকার তো অনেক ক্ষেত্রেই কঠোর হতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে বালুর ট্রাক অথবা রাতের আধারে ঢাকা শহরের লাইট বন্ধ করে অনেক বড় বড় জিনিস আটকে ফেলে। তাইলে এই জায়গায় এসে এতো ফাকা কেন? প্রবাসীদেরকে গুলি করে কোয়ারেন্টাইনে রাখার তো প্রয়োজন ছিল না। একটু ভালো থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে আইন জোরদার করলেও তো তারা থাকতে পারতো।
গতকাল বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে দেখলাম আমেরিকার কিছু নাগরিক অন্যান্য দেশে ছিলো। বিশেষ ফ্লাইটে করে তার দেশের সরকার এই দুর্যোগেও তাদের নাগরিকদের বুকে টেনে নিছে। আমি এটাও মানতে বাধ্য আমার দেশ আমেরিকার মতো না। আমার দেশের জনগণও তাদের মতো না। তবে যারা দেশে চলে গেছে তাদের জন্য কেন একটু ভালো ব্যবস্থা করা কি সম্ভব হতো না? ক’দিন আগেই তো দেশকে স্যাটেলাইট থেকে সিঙ্গাপুর, কানাডা, আমেরিকার মতো দেখা গিয়েছিল। তাইলে আজকে এই অবস্থা কেন?
জনগণের সব খাইতে খাইতে আমলাদের মাথা কোথায় গিয়ে পৌছেচে তা বুঝাটা-ই মুশকিল। তাদের লাগামহীন অগোছালো কথাবার্তা শুনলে, দেশে এটা নিয়ে ৯০% মানুষ ট্রল করে।
চলমান এই ভাইরাসকে কেন্দ্র করে প্রবাসীদের প্রতি, বিশেষ করে যারা ইতালি ফেরত, তাদের উপর অহেতুক ঘৃণা বেড়েই চলছে। যেটা বিবেকহীনতার পরিচয়।
২০১৯ সালে প্রবাসীরা ১৮.৪২ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। যেটা জাতীয় রাজস্ব আয়ের ১৫ শতাংশেরও বেশী। শুধু ইতালি থেকেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছে ৭৫৭.৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ৬.৩৬৫ কোটি টাকা।
যেসকল দেশে গিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকরা এভাবে কঠোর পরিশ্রম করে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। সেসকল দেশের নাগরিকরা যদি পৃথিবীর অন্য কোন দেশে কাজ করে তার দেশের অর্থনীতি কে এভাবে সচল করতো তাইলে বিশ্বাস করেন ওইসব দেশের যদি কোন জাতীয় বীর হিসেবে কোন ব্যক্তির নাম লিখা হতো তাইলে এগুলো থাকতো তাদের দেশের প্রবাসীদের নাম।
পরিবার পরিজন সবকিছু ছেড়ে পৃথিবীর অন্যকোন প্রান্তে একটা দেশে আমাদের এই যোদ্ধার পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে স্বাবলম্বী করে।আমাদের দেশে প্রবাসীরা তো সারা জীবন শুধু দিয়েও যায়। নেয় কি? কিছুই তো নেয় না। রাষ্ট্র তাদের কি দেয়? কখনো কি কোন সঠিক মর্যাদা দিতে সক্ষম হয়েছে? সামান্য এয়ারপোর্টে যা অবস্থা হয় তা দেখেও আমাদের লজ্জা হয়।
প্রবাসীরা প্রবাসে কঠোর পরিশ্রম করে সেখানেও তার কাজের ট্যাক্স দিতে হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশেরও নাগরিক হিসেবে দেশে থাকা তার ঘরবাড়ি সম্পদের ট্যাক্স প্রদান করে। আবার পরিবারের জন্য যে টাকা প্রেরণ করে সেখান থেকেও একটা অংশ আমলাদের ব্যাংক ভরতে সাহায্য করে। সেটাকে আপনারা দেশের উন্নয়ন কাজে যোগ হচ্ছে বলতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় তার ৬০% আমলাদের খপ্পরে চলে যায়। নইলে ওরা দেশ থেকে টাকা পাচার করে কিভাবে?
প্রবাসীরা দেশে গিয়ে একা করোনাভাইরাস চড়িয়ে দেয়নি। তার পিছনে রয়েছে রাষ্ট্রের বিশাল ব্যার্থতা। আজ সেগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ হচ্ছে। তাই প্রবাসীদের প্রতি সতর্কতার পাশাপাশি সম্মানজনক ও মানবিক আচরণ করুন। বৈরিতা আর অবজ্ঞা নয়, প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি দিন।
প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
এশিয়াবিডি২৪/ডেস্ক/কামরান