অসহায় বনী আদমের যত্ন নিন

বর্তমান সময় বনী আদমের জন্য কঠিন একটা সময় অতিবাহিত হচ্ছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কৃতকর্মের ফল হিসেবে করোনা ভাইরাস নামে যে মহামারী দেখা দিয়েছে সেটা সারা বিশ্বের মানবজাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। প্রায় বিশ্বের দুইশত অধিক দেশের মানুষ ঘর বন্ধি হয়ে আছে। আর এই সময়ে বিশেষ করে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে যারা গরিব, মিসকিন ও অসহায়। যারা দিন আনেন দিন খান। এই সমস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের যত্ন নেওয়া আমাদের সবার উপরে একান্ত কর্তব্য। বিশেষ করে যাদের আল্লাহ ধন সম্পদ দিয়েছেন তারা এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। নতুবা এজন্য হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে।

কিন্তু যদি এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেন তাহলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মহান পুরস্কার প্রাপ্ত হবেন এবং তাদের ধন সম্পদ আরো বৃদ্ধি পাবে। যেমন সূরা বাকারাহ ২৬১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

مَثَلُ الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ کَمَثَلِ حَبَّۃٍ اَنۡۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِیۡ کُلِّ سُنۡۢبُلَۃٍ مِّائَۃُ حَبَّۃٍ ؕ وَ اللّٰہُ یُضٰعِفُ لِمَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ.

যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।

আল্লাহর রাস্তায় দান করলে পাহাড় পরিমান সাওয়াব পাওয়া যাবে। যেমন বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে-

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) مَنْ تَصَدَّقَ بعَدلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيبَ، فَإنَّ اللهَ يَقْبَلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهَا كَمَا يُرَبِّي أحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ.

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি (তার) বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে একটি খেজুর পরিমাণও কিছু দান করে, আর আল্লাহ তো বৈধ অর্থ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণই করেন না, সে ব্যক্তির ঐ দানকে আল্লাহ ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা ঐ ব্যক্তির জন্য লালন-পালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার অশ্ব-শাবককে লালন-পালন করে থাকে। পরিশেষে তা পাহাড়ের মত হয়ে যায়।

আর এই বর্তমান বিপদের সময় যদি তাদের প্রতি যত্ন নেওয়া হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিপদ থেকে মুক্তি দিবেন। যেমন বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে-

عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا قال – قال رسول الله (ﷺ) مَنْ كَانَ في حَاجَة أخيه، كَانَ اللهُ في حَاجَته، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِم كُرْبَةً، فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ بها كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَومِ القِيَامَةِ.

হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন।

শুধু তাই না বরং এই বিপদে কাউকে দান করলে ফেরেশতারা দোয়া করবেন ও দোযখের আগুন থেকেও আল্লাহ নাজাত দান করবেন। যেমন বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে-

عن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ – قَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) مَا مِنْ يَوْمٍ يُصبِحُ العِبَادُ فِيهِ إِلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ، فَيَقُولُ أحَدُهُمَا: اَللهم أعْطِ مُنْفِقاً خَلَفاً، وَيَقُولُ الآخَرُ اَللهم أعْطِ مُمْسِكاً تَلَفاً.

হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- প্রতিদিন সকালে দুজন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।

عَن عَدِي بنِ حَاتمٍ رضي الله عنه قَالَ قال رسول الله (ﷺ) اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.

হযরত আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো, যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়! (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

আবার সমাজে যারা দুর্বল আছেন তাদের প্রতি আমাদের খেয়াল রাখা বা সেবা যত্ন করার অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে, তাদের জন্য আমাদের সাহায্য ও রুযী দেওয়া হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। যেমন বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে-

عن مُصعَبِ بنِ سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا قَالَ رَأى سَعدٌ أنَّ لَهُ فَضْلاً عَلَى مَنْ دُونَهُ – فَقَالَ النَّبيُّ (ﷺ) هَلْ تُنْصَرُونَ وتُرْزَقُونَ إلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ.

হযরত মুসআব ইবনে সাদ ইবনে আবী অক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (তাঁর পিতা) সা‘দ ধারণা করলেন যে, তার চেয়ে নিম্নশ্রেণীর লোকের উপর তাঁর মর্যাদা রয়েছে। নবী (ﷺ) বললেন- তোমাদেরকে দুর্বলদের কারণেই সাহায্য করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়।

অতএব বর্তমান কঠিন সময়ে আপনার ভালবাসার উত্তম জিনিস ব্যয় করতে হবে মহান আল্লাহর পথে। আর এজন্য সূরা আল-ইমরান ৯২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

لَنۡ تَنَالُوا الۡبِرَّ حَتّٰی تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ ۬ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فَاِنَّ اللّٰہَ بِہٖ عَلِیۡمٌ.

তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা থেকে, যা তোমরা ভালবাস। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।

 সূরা বাকারাহ ২৬৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا کَسَبۡتُمۡ وَ مِمَّاۤ اَخۡرَجۡنَا لَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ ۪ وَ لَا تَیَمَّمُوا الۡخَبِیۡثَ مِنۡہُ تُنۡفِقُوۡنَ وَ لَسۡتُمۡ بِاٰخِذِیۡہِ اِلَّاۤ اَنۡ تُغۡمِضُوۡا فِیۡہِ ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ.

হে মুমিনগণ, তোমরা ব্যয় কর উত্তম বস্ত্ত, তোমরা যা অর্জন করেছ এবং আমি যমীন থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে এবং নিকৃষ্ট বস্ত্তর ইচ্ছা করো না যে, তা থেকে তোমরা ব্যয় করবে। অথচ চোখ বন্ধ করা ছাড়া যা তোমরা গ্রহণ করো না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত।

আর এই দান গুলো আপনি প্রকাশ্যে বা গোপনে করতে পারেন। তবে গোপনে করাটাই সর্বোত্তম। সূরা বাকারাহ ২৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

اِنۡ تُبۡدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا ہِیَ ۚ وَ اِنۡ تُخۡفُوۡہَا وَ تُؤۡتُوۡہَا الۡفُقَرَآءَ فَہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَ یُکَفِّرُ عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ.

তোমরা যদি সদাকা প্রকাশ কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন কর এবং ফকীরদেরকে তা দাও, তাহলে তাও তোমাদের জন্য উত্তম এবং তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আর তোমরা যে আমল কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।

 সূরা বাকারাহ ২৭৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

اَلَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ بِالَّیۡلِ وَ النَّہَارِ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً فَلَہُمۡ اَجۡرُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ ۚ وَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ.

যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। অতএব, তাদের জন্যই রয়েছে তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।

কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে আপনার সাদাকাহ বাতিল যেন না করেন। সূরা বাকারাহ ২৬৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُبۡطِلُوۡا صَدَقٰتِکُمۡ بِالۡمَنِّ وَ الۡاَذٰی ۙ کَالَّذِیۡ یُنۡفِقُ مَالَہٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِؕ فَمَثَلُہٗ کَمَثَلِ صَفۡوَانٍ عَلَیۡہِ تُرَابٌ فَاَصَابَہٗ وَابِلٌ فَتَرَکَہٗ صَلۡدًا ؕ لَا یَقۡدِرُوۡنَ عَلٰی شَیۡءٍ مِّمَّا کَسَبُوۡا ؕ وَ اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡکٰفِرِیۡنَ.

হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদাকা বাতিল করো না। সে ব্যক্তির মত, যে তার সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে এবং বিশ্বাস করে না আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি। অতএব তার উপমা এমন একটি মসৃণ পাথর, যার উপর রয়েছে মাটি। অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ল, ফলে তাকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেলল। তারা যা অর্জন করেছে তার মাধ্যমে তারা কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। আর আল্লাহ কাফির জাতিকে হিদায়াত দেন না।

সমাজের গরিব মানুষের পাশাপাশি এক দল মিসকিন আছেন যাদের আমরা প্রায় ভূলে যাই । কারণ আমরা সবাই কমবেশি সমাজের গরিব যারা তথা নিম্নবিত্ত মানুষ তাদের সাহায্য করে থাকি। কারণ আমরা দেখি তাদের অভাব আছে বা অনেক সময় তারা এসে বলে। কিন্তু মিসকিন যারা তারা সহজে কাউকে বুঝতে দেয় না বা কাউকে বলে না তাদের অভাবের কথা। এজন্য অনেক সময় তাদের প্রতি আমাদের কোন খেয়াল থাকে না। কিন্তু এদেরকে খাদ্য দিতে উৎসাহ দেখাতে হবে।

যেমন সূরা মাউনের ১ – ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

اَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ یُکَذِّبُ بِالدِّیۡنِ – فَذٰلِکَ الَّذِیۡ یَدُعُّ الۡیَتِیۡمَ – وَلَا یَحُضُّ عَلٰی طَعَامِ الۡمِسۡکِیۡنِ.

তুমি কি তাকে দেখেছ, যে হিসাব-প্রতিদানকে অস্বীকার করে? সে-ই ইয়াতীমকে কঠোরভাবে তাড়িয়ে দেয়, আর মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহ দেয় না।

আর মিসকিনদের পরিচয় দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বলেছেন-

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) لَيْسَ المِسْكينُ الَّذِي تَرُدُّهُ التَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلا اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ إِنَّمَا المِسكِينُ الَّذِي يَتَعَفَّفُ.

وَفي رِوَايَةٍ في الصَّحِيحَينِ – لَيْسَ المِسكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ واللُّقْمَتانِ، وَالتَّمْرَةُ والتَّمْرَتَانِ، وَلَكِنَّ المِسْكِينَ الَّذِي لاَ يَجِدُ غنىً يُغْنِيه، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدَّقَ عَلَيهِ، وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ.

হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- মিসকীন সে নয়, যাকে একটি খেজুর এবং দু’টি খেজুর এবং এক গ্রাস বা’ দুগ্রাস (অন্ন) ফিরিয়ে দেয়। বরং মিসকীন তো ঐ ব্যক্তি, যে (অভাব থাকা সত্ত্বেও) চাওয়া থেকে দূরে থাকে।(বুখারী ও মুসলিম)

আর এই সমস্ত মিসকিনদের অভাব দূর করলে জিহাদের সাওয়াব মিলে। যেমন বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে-

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله (ﷺ) السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ، كَالمُجَاهِدِ في سَبيلِ اللهِ.

হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করায় চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।

এই সময় আমাদের প্রতিবেশীর প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ প্রতিবেশীর অনেক হক রয়েছে। যেগুলো কুরআন হাদিসে পাওয়া যায়। তাদের হক সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে-

عن ابنِ عُمَرَ وَعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالاَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) مَا زَالَ جِبْريلُ يُوصِينِي بِالجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ.

হযরত ইবনে উমর ও আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- জিবরীল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।

 মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে-

عَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) يَا أَبَا ذَرٍّ، إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً، فَأكثِرْ مَاءهَا، وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ.

হযরত আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে আবূ যার! যখন তুমি ঝোল ওয়ালা তরকারি রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর এবং তোমার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখ।

♻️ বর্তমান মহামারীর সময় যদিও রোগীদের কাছে না যাওয়া উত্তম। কিন্তু যতটুকু সম্ভব তাদের খোঁজ খবর নিতে হবে। কারণ মুসলিম শরীফের একটা লম্বা হাদিসে এসেছে-

عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) إِنَّ اللهَ – عَزَّ وَجَلَّ – يَقُولُ يَومَ القِيَامَةِ: يَا ابْنَ آدَمَ، مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدنِي ! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أعُودُكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمِينَ ؟! قَالَ: أمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَناً مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ ! أمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَني عِنْدَهُ ! يَا ابْنَ آدَمَ، اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمنِي ! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمِينَ ؟! قَالَ: أمَا عَلِمْتَ أنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلانٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ ! أمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي ! يَا ابْنَ آدَمَ، اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي ! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمينَ ؟! قَالَ: اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ ! أمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي !.

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন- আল্লাহ আয্‌যা অজাল্ল কিয়ামতের দিন বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি। সে বলবে, হে প্রভু! কিভাবে আমি আপনাকে দেখতে যাব, আপনি তো সারা জাহানের পালনকর্তা? তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে?

হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি। সে বলবে, হে প্রভু! আমি আপনাকে কিভাবে খাবার দেব, আপনি তো সারা জাহানের প্রভু?’ আল্লাহ বলবেন, তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাবার দিতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে?

হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি। বান্দা বলবে, হে প্রভু! আপনাকে কিরূপে পানি পান করাবো, আপনি তো সমগ্র জগতের প্রভু? তিনি বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে?

এই লম্বা হাদিস শরীফ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যাদের খাবার নেই তাদের খাবার দিতে হবে। যাদের পানির দরকার তাদের পানির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। অসুস্থ হলে খোঁজ খবর নিতে হবে। তাদের চিকিৎসা ঠিক মত হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা এজন্য হাশরের ময়দানে জবাবদিহি করতে হবে মহান মালিকের সামনে।

সবকিছুর পর যদি এই কঠিন বিপদে কেউ আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হয় তাহলে আমরা কি করব? আমাদের কি দায়িত্ব। সেটি জানার জন্য আমরা নিচের লিংক পড়তে পারি ইনশা আল্লাহ কিছুটা হলেও উপকার হবে।

লিংক

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়ত ও হেফাজত করুন। (আমিন)

লেখক: ইমাম ও খতিব
ওল্ডহাম জামে মসজিদ,যুক্তরাজ্য

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

আরও সংবাদ