মহামারী করোনায় এখন সচেতন না হলে এর চরম মূল্য দিতে হবে
প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের জেরে পুরো পৃথিবী স্থবির হয়ে গেছে। চারদিকে এখন শুধুই নিস্তবতা। পৃথিবীর সকল মানুষ করোনা ভাইরাসে উদ্বিগ্ন ও আতংকিত। করোনাভাইরাসের ভয়ংকর থাবায় থমকে গেছে জনজীবন। চীনের উহান থেকে প্রথম উৎপত্তি হয় এই করোনাভাইরাসের। পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। আমাদের দেশ রয়েছে বিশাল ঝুঁকিকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করোনা ভাইরাসের অবস্থা হবে ভয়াবহ।
কিন্তু আমরা এখনো সচেতন নয়। শহরের মানুষ কিছুটা সচেতন হলেও গ্রামের মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছেনা। লকডাউন থাকার কারণে গ্রামের মানুষ গ্রাম থেকে বের হতে পারছেনা। এখন আগের তুলনায় গ্রামের চা স্টল গুলোতে মানুষের জনসমাগম বেশি। গা ঘেঁষে চা স্টলে বসে আড্ডা দিচ্ছে, সিগারেট টানছে, চা খাচ্ছেন।
করোনা ভাইরাস নিয়ে গ্রামের এই মানুষগুলোর মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা নেই। মহামারী করোনা ভাইরাস নিয়ে কোন সচেতনতা গ্রামে নেই বললেই চলে।
গ্রামের অধিকাংশ মানুষ করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অজ্ঞ। যদি তাদের সচেতন হতে বলেন, দিনে কয়েকবার হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে হাত ধুতে বলেন অথবা মানুষের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে বলেন, তাঁদের উত্তরটা অনেকাংশেই গোঁড়ামিতে ভরা থাকে। তাঁরা ধর্মের ব্যাপারটি টেনে আনেন। তাদের উত্তর আল্লাহ চাইলে মৃত্যু হবে ভাইরাস টাইরাস কি??
অথচ তাদের জানা নেই এটা এমন এক ছোয়াচে ভাইরাস একজন আক্রান্ত হলে হাজার লোক সংক্রমিত হতে পারে। নিজের জন্য না হলেও পরিবারের জন্য সমাজের জন্য দেশের জন্য সবাইকে সচেতন হওয়া জরুরি।
সম্ভবত লাশের স্তূপ না দেখা পর্যন্ত তাঁরা বুঝতে চাইবেন না।
এখন যদি করোনাভাইরাসের ভয়ে হ্যান্ডশেক না করে, মুসাফা না করে অথবা ঘরে বসে কেউ থাকতে বলেন এটা তাঁদের ইমানের প্রশ্নে সন্দেহের জন্ম দেয়।
আর কোনোভাবেই ইমান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেওয়ার মতো মানুষ গ্রামে খুব একটা নেই। ইমান আর কুসংস্কারের মধ্যে অনেকেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। ছোটবেলা থেকে যা দেখেছেন, শুনেছেন, বেশির ভাগ গ্রামের মানুষ সত্যতা যাচাই না করেই ধর্মীয় বিধিনিষেধ হিসেবে মেনে নিয়েছেন, পৃথিবীর খারাপ সময়েও তাঁরা সেভাবেই চিন্তা করছেন। এই চিন্তাভাবনা গ্রামে বয়ে নিয়ে আসবে ভয়াবহ দুর্যোগ।
যা কেউ কল্পনা করতে পারবেনা।
পৃথিবীর এক নাম্বার দেশগুলো করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত। ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, আমেরিকার মতো দেশে লাশের সারি।
তারা লাশের ব্যাগ বানাচ্ছে। আমরা যদি গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে না পারি লাশের স্তুপ মাটিতে পড়ে থাকবে কেউ হাত দিবেনা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চাই সচেতনতা।
যদি আমরা সচেতন না হই কিছুদিন পর লাশের স্তুপ
দেখতে হবে।
আর কালক্ষেপন না করে খুব শীঘ্রই করোনাভাইরাস রোধে গ্রামের মানুষকে সচেতন করা জরুরি। টিভি চ্যানেল ও দৈনিক পত্রিকাগুলো যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সচেতনতা বৃদ্ধিতে। কিন্তু এসবের আবেদন এখনো শহরের মতো গ্রামে গ্রামে পৌঁছায়নি। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, মসজিদের ইমাম সাহেব, মুয়াজ্জিন সাহেব
রাখতে পারেন প্রধান ভূমিকা। গ্রামে গ্রামে মাইকিং হতে পারে ফলপ্রসূ। চেয়ারম্যান মেম্বারদের সমন্বয়ে সচেতনতা ক্যাম্পিং, মসজিদের মাইকে মাইকিং করে সচেতন করতে হবে।
গ্রামের লোকজন যেহেতু একটু বেশি ধর্মভীরু হয়, তাই তাদের সচেতন করতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা অগ্রণী ভূমিকা পালনে সক্ষম হবেন। গ্রামে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশাসন থেকে ইমামদের দিকনির্দেশনা ও ইমামগনের দায়িত্ব হলো মহামারীতে
ইসলামের নির্দেশনা কি, মহামারী হলে মুসলমানদের করণীয় কি সে বিষয়ে মুসল্লীদের সামনে তুলা ধরা।
কোনভাবেই যাতে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বাহির না হয় সে বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা তুলে ধরলে ভালো ফল নিয়ে আসবে। ইসলামে কোয়ারেন্টিনে থাকার প্রমাণ, পরিপূর্ণ সচেতন থাকার পর যদি মহামারীতে মৃত্যুবরন করলে শহীদ যদি অসচেতন হই তাহলে আত্মহত্যার শামিল সেই বিষয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে৷ মহামারীতে ইসলামের সুস্পষ্ট ব্যাখা ও বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ মেনে চলার জোর তাগিদ দিতে হবে।
এখনো সময় আছে শহরের পাশাপাশি গ্রামের দিকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর। আরও দেরি হলে চড়া মূল্যে এই ভুলের জন্য জাতিকে চরম মূল্য দিতে হবে।
লালন শাহ্ এর গানের ঐ লাইনটি মনে পড়বে,” সময় গেলে সাধন হবে না”
সময় থাকতে সচেতন হোন, না হলে এর চরম মূল্য দিতে হবে।
মোঃ মোশাররফ হোসেন
প্রভাষক সমতা স্কুল এন্ড কলেজ।
প্রধান উপদেষ্টা, আস–শামস সমাজ কল্যাণ সংস্থা।
সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক জোট সুনামগঞ্জ।
সদস্য সচিব, জননী সাহিত্য সংসদ সিলেট।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান