মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়ার দাবি চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের

বিজেপি শাসিত গুজরাটের হাসপাতালে ধর্মের ভিত্তিতে ওয়ার্ড

ছবি: সংগৃহীত

নেলসন ম্যান্ডেলা যার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন সেই বর্ণবিদ্বেষ, সাদা-কালোর পৃথকীকরণ বোধহয় ফিরে এল ভারতবর্ষে। আহমদাবাদের সিভিল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হিন্দু ও মুসলিম রোগীদের আলাদা-আলাদা ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে ধর্মভিত্তিক এই ধরনের পৃথকীকরণ এই প্রথম। এই ধরনের বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ দেশকে যে কোথায় নিয়ে যাবে, তা নিয়ে এখন ঘোরতর চিন্তায় সচেতন বুদ্ধিজীবীরা। ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সময় মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠদের। তারপর ১৮ বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু, পরিস্থিতি এতটুকু বদলায়নি। আজও সেখানে মুসলিমদের ‘ ব্রাত্য ‘ করে রাখা হয়েছে।

এভাবে ধর্মের ভিত্তিতে আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়ে এবার সরব বিশিষ্ট চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা। এভাবে ধর্মের ভিত্তিতে চিকিৎসা করা নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, তাদের জোরালো দাবি, এই ধরনের ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে হবে মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিকে। সরকারি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হিন্দু রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ওয়ার্ড ও করোনা আক্রান্ত মুসলিম রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করা নিয়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের সংগঠন ‘ দ্য প্রোগ্রেসিভ মেডিকস অ্যান্ড সায়েন্টিস্ট ফোরাম ’ ।

সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, যখন গোটা পৃথিবী মহাযুদ্ধে নেমেছে গত ১০০ বছরের মধ্যে সবথেকে বড় স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে যা সমগ্র বিশ্বকে আবিষ্ট করে রেখেছে তখন গুজরাতের শাসক দল এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ করছে। এরপরই সংগঠনটির তরফে রীতিমতো সুর চড়িয়ে বলা হয়, আমরা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, উনি নিঃশর্তে ক্ষমা চান তাঁর সরকারের এই ধরনের পলিসি গ্রহণ করার জন্য। উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হোক। এ ছাড়াও এই ধরনের পলিসি তৈরির ষড়যন্ত্রে আরও যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হোক। পাশাপাশি, সংগঠনটির তরফে রাজ্যের চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে-গুজরাত সরকারের এই সাম্প্রদায়িক কর্মসূচিতে শামিল না হওয়ার জন্য।

উল্লেখ্য, আহমদাবাদের এই সরকারি হাসপাতালে হিন্দুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড ও মুসলিমদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসার বিষয়টি বুধবার প্রকাশ্যে আসে। হাসপাতালের সুপার ডা. গুণবন্ত এইচ রাঠোর সাফ জানান, হিন্দুদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড ও মুসলিমদের জন্য আলাদা তৈরি করা হয়েছে রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে। যদিও রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী নীতিন প্যাটেল অবশ্য দাবি করেছেন, এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

এশিয়াবিডি/মোজাম্মিল/কামরান

আরও সংবাদ