কর্মের মাঝে বেঁচে থাকবেন আব্দুল আলী
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ফুলতলা ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলী ছেলের প্রথম মাসের বেতন (রেমিট্যান্স)এর টাকা প্রতিবেশীদের মাঝে বিলিয়ে দিলেন।
করোনাভাইরাস কেন্দ্রিক অচলাবস্থায় মিডিয়া ও ফেসবুকের কল্যাণে চাল চুর আর তেল চুরের গল্প জানেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল । পাশাপাশি জেনেছেন বিত্তশালীদের দানের কথা। সেই সাথে কোন এক দরিদ্রের হাতে এক/দুই কেজি চাল দিয়ে অসংখ্য মানুষ নিয়ে সেল্ফি তোলা চিত্তহীন বিত্তবানদের কথাও জানা হয়েছে। এবার আসুন দরিদ্র হলেও মনের দিক থেকে বিত্তবান এক আব্দুল আলীর দৃষ্টান্তমূলক দানের গল্প শুনি।
আব্দুুল আলী (৬৫) পেশায় একজন বর্গাচাষী। ৪ ছেলে এবং নাতী-নাতনীসহ ২৫ সদস্যের সংসার। ২ মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন । তিন ছেলে দিনমজুরের কাজ করেন। খুব ধনী হওয়ার কোন ইচ্ছা তাঁর নেই। তবে সংসারের দুঃখ গুছানোর ইচ্ছা খুবই প্রবল হলেও সাধ্য নেই পরিবর্তন করার।
সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তায় ঋণ করে কিছুদিন আগে ছোট ছেলে আকুল মিয়াকে কাতার পাঠিয়েছেন। আশা ছিল ছেলে প্রথম মাসের বেতন পেয়ে টাকা পাঠালে কিছুটা ঋণ পরিশোধ করবেন। ছেলে ঠিকই টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করা হয়নি। চৌদ্দ হাজার টাকার পুরোটাই অসহায় মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেন এ মানবিক মানুষ।
আব্দুল আলীকে প্রতিনিয়ত দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। জীবনের পড়ন্ত বেলায় লাঙ্গল কাধে নিয়ে যেতে হয় মাঠে। ছেলেরা দিনমজুরের কাজ করে সংসারে যোগান দেয়ার চেষ্টা করলেও পৌছাতে পারছে না কাঙ্ক্ষিত জাওগায় । যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের নেই কোন ব্যাংক-ব্যালেন্স,নেই কোনো সম্বলও। মাত্র তিন শতাংশ জায়গার উপর মাথা গোজার একটি ঘর আছে থাকলেও তা জরাজীর্ণ ।
সংসারের ব্যয় তো দিন দিন বাড়ছেই, বাড়ছে নানান চাহিদা। এমতাবস্থায় সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে ধারদেনা করে ছোট ছেলেকে বিদেশ পাঠান। সাধারণত ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে প্রথম মাসের বেতনের টাকা নিয়ে বাবা-মা অনেক স্বপ্ন দেখেন। কি কি করবেন তারও একটা পরিকল্পনা করেন। আব্দুল আলীর তেমন অনেক পরিকল্পনাও ছিল।
কিন্তু করোনাভাইরাস তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। সম্প্রতি ছেলে প্রথম মাসের বেতন পেয়ে চৌদ্দ হাজার টাকা বাড়ীতে পাঠায়। তবে আব্দুল আলীর মানবসেবক মন তাঁকে সে টাকা ভোগ করতে দেয়নি। করোনাভাইরাস কেন্দ্রিক অচলাবস্থায় নিজের মত প্রতিবেশীদের কষ্টময় জীবন যাপন তাঁকে ঘুমাতে দেয় না। এমতাবস্থায় ওই চৌদ্দ হাজার টাকা উদার মনে দরিদ্র প্রতিবেশীদের মাঝে তিনি বিলিয়ে দেন।
এই সামান্য টাকায় বিওবানদের কাছে কিছুই না কিন্তু আব্দুল আলীর মত মানুষের কাছে অনেক কিছু । দুঃসময়টা প্রতিবেশীর সাথে ভাগাভাগি করে নিয়ে তিনি আনন্দের সাগরে ভাসছেন আব্দুল আলী।
করোনাভাইরাস এর সংক্রমণ এড়াতে কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের দেয়া ত্রাণের চাল গুটি কয়েক জনপ্রতিনিধিরা আত্নসাৎ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন। দেশে বন্যা কিংবা যে কোন দুর্যোগে কিছু মানুষরোপী অমানুষ এভাবে গরিবের হক আত্নসাৎ করে। ঠিক এমনি এক মূূহুর্তে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মানবিক মানুষ আব্দুল আলী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমতিয়াজ মারুফের মাধ্যমে ফেসবুকের মাধ্যমে আব্দুল আলীর মানবিকতার বিষয়টি বেরিয়ে আসে।তিনি বলেন, অসহায়ত্বের সময় মানুষের পাশে কিভাবে দাঁড়াতে হয় তা আব্দুল আলী থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ।
এশিয়াবিডি/মারুফ/কামরান

 
			
