পকেট খরচের টাকা দিয়ে মানুষের পাশে তারা
ওরা বিভিন্ন কলেজ, ইউনির্ভাসিটিতে পড়ুয়া ছাত্র। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারী বিধি-নিষেধের কারণে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারী বেসরকারি অনেক কর্মসংস্থান। মানুষজনও গৃহবন্দী। এ বন্দি দশা পেরিয়েছে ১ মাস। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত সবাই কর্মহীন। ঘরে নেই খাবার। ফলে ঘরে ঘরে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার।
চারদিকে এতো আহাকার এই যুবকদের মনে নাড়া দেয়। তারা অসহায়দের পাশে দাড়াতে চায়! কিন্তু বন্ধুবান্ধব সহ গ্রুপের ছোটবড় কেউ-ই তেমন স্বাবলম্বী নয়। তবুও কিছু একটা করতে চায় তারা। নিজেকে আড়াঁল করে রাখা ওইসব ক্ষুধার্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি উপহার সামগ্রী নিয়ে হাজির হতে চায়। অবশেষে তাদের এই কাজ ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারি ‘করোনাভাইরাস’ প্রতিরোধে দেশব্যাপি চলছে ঘোষিত ও অঘোষিত লকডাউন। যা পেরিয়েছে ১ মাস। ফলে তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বত্রই মানুষজন গৃহবন্দী।
সমাজের হত-দরিদ্র, অতি-দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের সকলেই খাদ্যসঙ্কটে দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পৌর মেয়রসহ সরকারের বিভিন্ন বরাদ্দে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে।
তারপরও অনেক পরিবারে এখনও ত্রান-সামগ্রী পৌঁছয়নি। ফলে এসব মানুষজন না খেয়ে দূর্বিসহ জীবনযাপন করছেন।
এমতাবস্থায় সরকারের হাতকে আরও শক্তিশালী করতে তাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। যদিও একটা প্রাণের একবেলার আহার হয় তবুও স্বার্থক।
বলছিলাম মৌলভীবাজার শহরের কয়েকজন যুবকের কথা। নিজেদের টিউশনির টাকা,পকেট খরচ, চাকরির বেতন দিয়ে একটি উদ্যোগ নেয় তারা।
মধ্যবিত্ত পরিবার যারা এই মহামারিতে লোকচুক্ষর ভয়ে ত্রান নিতে যায় না। এই তরুণরা তাদের একটি গ্রুপের মাধ্যমে উপহার সরূপ মধ্যবিত্তদের ঘরে পৌঁছে দেয়। সেই গ্রুপের নাম ডিস্ট্রয়ার্স। শহরের ছোটবড় ভাই-ব্রাদার নিয়েই তাদের পথ চলা।
ডিস্ট্রয়ার্সের সিনিয়র কয়েকজন সদস্য ইমরান মাহমুদ ইপু, সৈয়দ সৌমিক, সৈয়দ দেলোয়ার, মুহাইমিন ফাহিম, রাফসান, নুরুল ইসলাম, রিমন আহমদ, সৈয়দ সিজান, সৈয়দ শিহাবসহ শহরের কয়েকজন তরুণ মিলে নিজেদের টিউশনির টাকা, পকেট খরচ, চাকরির বেতন দিয়ে এই উদ্যোগ হাতে নেয়।
শুরু হয় তাদের যাত্রা। যাদের মটর সাইকেল আছে সেগুলোকেও এই যাত্রা পথে কাজে লাগানো হয়। যেসকল মানুষরা লাইনে দাড়াতে চায় না বা এই মহামারীর কারণে তারা এখন নিঃস্ব। কোনদিন এমন পরিস্থিতিতে তারা পড়েনি তাদের দরজায় উপহার গুলো রেখে আসে তারা। লিখে দেয় পকেটে, “ডিস্ট্রয়ার্স পরিবারের পক্ষ থেকে আপনার জন্য উপহার”।
ডিস্ট্রয়ার্সের একজন সদস্য মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের ছাত্র সৈয়দ সৌমিক বলেন, আসলে নাম ফোটানো বা ফটোসেশানের জন্য নয়। কারো মুখে একটুখানি হাসি ফুটলে আমাদের এই কষ্ট স্বার্থক। যদিও এটা কোন কষ্টের কাজ না। সামর্থ থাকলে আরও বেশি করার চেষ্টা করতাম। আমাদের কারো এমন সামর্থ্য নেই যে আমরা কয়েক হাজার মানুষের পাশে দাড়াতে পারবো। তবুও আমরা প্রায় কয়েকশত পরিবারের কাছে উপহার পৌছে দিতে পেরেছি। শহরের কিছু বৃদ্ধ রিকশা চালককেও দেওয়ার চেষ্টা করেছি। নিজেদের পকেট খরচ দিয়ে তেমনভাবে দিতে পারিনি। তাও যারা টিউশনি করি এবং ছোটখাটো চাকরি ও ব্যবসা যারা করে আমাদের গ্রুপের তারাও অনেক সহযোগিতা করেছে। এই দুঃসময়ে সবার পরিবারও তেমন স্বচ্ছল নয়। আগামীতে কি হবে কেউ জানিনা। তবুও যতোটা সম্ভব প্রাণের শহরের মানুষের পাশে দাড়াতে পেরেছি এটাই শুকরিয়ায়। সমাজে এখনো এরকম হাজার বিত্তবান মানুষ আছে যারা সহস্রাধিক মানুষকে এরকম উপহার পৌছে দিতে পারবে। তারা যদি আরো এগিয়ে আসেন তাইলে সবাই মিলে এই যুদ্ধে বেচে যেতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। এই শহরে বসবাসকারী একজন ছাত্র হিসেবে বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ, আসুন সবাই মিলে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করি।
এশিয়াবিডি/কামরান/মুবিন

 
			




