ইফতার নিয়ে অসহায়দের পাশে ছাত্রলীগ নেত্রী

 

পবিত্র রমজান মাসে প্রতি বিকেলে কখনো ঘামে ভিজে, কখনো বৃষ্টিতে ভিজে মানুষের হাতে ইফতার সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেত্রী।

বাসায় নিজ হাতে ইফতার বানিয়ে বরিশালের রাস্তায় রাস্তায় তা বিলি করছেন খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে। ভিন্ন ধর্মের হওয়া সত্ত্বেও তার এ অনন্য উদ্যোগ এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

ইফতার সামগ্রী বিলি করা ওই তরুণীর নাম তিলোত্তমা শিকদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে। তিনি বর্তমানে ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য।

করোনা দুর্যোগে খেটে খাওয়া মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনায় এ কাজ করার চিন্তা মাথায় এসেছে বলে জানিয়েছেন তিলোত্তমা।

তিনি বলেন, ‘হলে থাকাকালে আমি দেখতাম, আমার মুসলিম বন্ধুরা সবাই মিলে ইফতার করত। আমিও সবার সঙ্গে ইফতার করতাম। এবার চিন্তা হলো, যে মানুষগুলো রাস্তায় রিকশা চালায়, শ্রমজীবী, ছিন্নমূল, যারা রাস্তায় থাকে; এবার ওদের ইফতারে খুব সমস্যা হবে। কারণ, ইফতার সামগ্রীর কোনো দোকান খোলা থাকবে না। ওরা কী করবে? করোনার কারণে ওরা এমনিতেই সংকটে আছে। বিবেকের তাড়না থেকে ভাবলাম যে, আমি তো বাসাতেই আছি… তো ইফতার তৈরি করে তাদের দেই। এতে অনেকের উপকার হবে।’

মানুষের জন্য কাজ করার এই উদ্যোগে পরিবারের সমর্থন আর উৎসাহ পেয়েছেন জানিয়ে তিলোত্তমা বলেন, ‘আমার পরিবারের খুব হেল্প করছে রান্নার কাজে। প্রথম রোজা থেকে শুরু করেছি। আশা আছে, এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখার। প্রতিদিন ৫টার পর বের হই। একেক দিন একেক এলাকায় দিচ্ছি। সত্যি বলতে কি, এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

করোনা সংকটকালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা কখনো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মানুষকে সচেতন করতে প্রচারপত্র বিলি করেছেন, কখনো রাস্তায় রাস্তায় মাস্ক-স্যানিটাইজার বিতরণ করছেন, কখনো ত্রাণ নিয়ে হাজির হচ্ছেন মানুষের দুয়ারে, আবার কখনো ধান কাটতে দল বেঁধে নেমে যাচ্ছেন মাঠে। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের এক নেতা ৮ লাখ টাকা বাড়ি ভাড়া মওকুফ করে প্রশংসায় ভাসছেন।

তিলোত্তমা শিকদারের ইফতার বিতরণের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রশংসা করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বলছেন, এমন উদ্যোগ মানবতার জয়গান। যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ মানুষের জন্য কাজ করছে।

তিলোত্তমা জানান, গত ২০ মার্চ তিনি তার নিজের জেলা বরিশালে এসে লকডাউনের কারণে আটকে পড়েছেন। কিন্তু মন পড়ে আছে ক্যাম্পোসে সহপাঠীদের কাছে। ক্যাম্পাসের অনেক অস্বচ্ছল শিক্ষার্থী আছেন, যারা সংকটে থাকলেও মুখ ফুটে বলতে পারে না। এমন শিক্ষার্থীদের খুঁজে খুঁজে পরিচয় গোপন রেখে তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

তিলোত্তমা শিকদার বলেন, ‘আমি চিন্তা করছিলাম, এমন কিছু মানুষকে সহযোগিতা করব, যারা চাইতে পারছে না। তাই প্রথমে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী, যারা নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য, অথচ কাউকে বলতে পারছে না, তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। নাম-পরিচয় গোপন রেখে আমি শতাধিক শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াই। তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমার নিজের কাছে অনেক ভালো লেগেছে।’

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ