কল্পবিজ্ঞানের গল্প

(১)

আনিসের জামাকাপড় কাচতে বিরক্তি এসে যায় সুমনার। এ’পকেটে টাকা, তো সে’পকেটে বাজারের বাতিল লিষ্ট, আবার কোনোটাতে হয়তো অফিসের জরুরী কাগজ। শার্ট, প্যান্ট সবেরই এক অবস্থা। উঃ, পাগল হওয়ার জোগাড় সুমনার। রোজকার মত আজও আনিসের জামা, প্যান্টের কাগজপত্র গুছোতে গুছোতে একটাতে এসে আটকে যায় সুমনার চোখ।

এটা তো সেই যন্ত্র- যার সম্পর্কে সুমনা ছদ্মবেশী ইনিলাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। প্রশিক্ষকরা তাকে পৃথিবীতে প্রেরণে আগে, পৃথিবীতে অন্য গ্রহের অনুপ্রবেশকারীকে সনাক্তকরণে ব্যবহৃত সব যন্ত্র সম্পর্কে পুরো পাঁচ ঘন্টা ব্যাপি একটা ব্রিফিং দিয়েছিলেন; তারমধ্যে বোতাম সাদৃশ্য এই যন্ত্রটা সম্পর্কে বারবার সতর্ক করা হয়।

যেভাবেই হোক তার আগমন সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষ একটা ধারণা করেছে- নয়তো পলাশের জামায় এটা রোপন করা হতো না। আর এটাতে যেহেতু স্পর্শ লেগেই গেছে সেহেতু তার অস্তিত প্রকাশ হয়ে গেছে বিজ্ঞানীদের কাছে। অতএব সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত।

(২)

নেপচুন এর প্রতিবেশী এক গ্রহ “ফিন”। সেখানে বসবাসকারী ফিনালীরা (মানুষ সাদৃশ্য একমাত্র সভ্য প্রাণি) হঠাৎ করেই একটা বিপদে পড়ে যায়। এক সন্ধ্যায় তাদের গ্রহে এক তীব্র আলোকরশ্মি এসে পড়ে এবং কিছুক্ষণের মধ্যে এর রেশ মিলিয়ে যায়। কিন্তু পরদিনই এক অসুখ দেখা দেয় ফিনালীদের মাঝে। গ্রহবাসীর অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়। সবাই বুঝতে পারে তাদের কিছু একটা হচ্ছে, আবার স্পষ্ট করে ধরতেও পারছে না আসলে বিষয়টা কি! ঘন্টাখানেক এই যন্ত্রণা ভোগ করে সমস্ত ফিনবাসী। আবার হঠাৎ করেই সবাই সুস্থ্য হয়ে যায়। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা কঠিন এক সত্যের মুখোমুখি হয়। মহিলা ফিনালীরা ঠিক থাকলেও পুরুষ ফিনালীরা সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পড়ে। ডোম (প্রেসিডেন্ট) এর নির্দেশে সারা গ্রহে পরীক্ষা চালানো হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জানা যায়- গ্রহময় শুক্রানু বহনকারী একজন পুরুষও নেই। চার বছর গবেষণা করেও গ্রহের সব ওজান (বিজ্ঞানী) মিলেও এর কোন সমাধান দিতে পারেননি। এমনকি দিন রাত পরিশ্রম করেও তারা শুক্রানু তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। তারপর ডোমের কক্ষে এক গোপন বৈঠক বসে। শুরু হয় পরবর্তী করণীয় সম্পকে ভাবনা। এক এক করে দশ বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয়- স্বেচ্ছায় গ্রহবাসীর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে এগিয়ে আসা ইনিলাকে পৃথিবতে প্রেরণ করা হবে। পর্যবেক্ষক টিম পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করে গিয়ে রিপোর্ট করলো ডোম এর কাছে- আনিসের স্ত্রী সুমনার জায়গায় ইনিলাকে প্রতিস্থাপন করাই হবে যথাযথ। ইনিলার চেহারায় সার্জারি করা হলে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটা টিম পৃথিবীতে আসে এবং প্রতিস্থাপনের কাজটা সম্পন্ন করে।

(৩)

ফিন নামক উপগ্রহ থেকে ইনিলাকে যে উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয়েছিল, সে তা কতটা অর্জন করতে পেরেছে সেটা নিরূপন করার সময় আর নেই। অতএব সে দ্রুত সিগনাল পাঠালো অপেক্ষারত আকাশযানে। পুলিশের গাড়ির সাইরেন যখন আনিসের বাড়ির গেইটে এসে থামলো ঠিক তখন সেই বাড়ি থেকে দশ বাড়ি উত্তরের এক ফুল বাগান থেকে ইনিলাকেসহ একটা আকাশযান তার যাত্রা শুরু করলো।

অপেক্ষারত ডোম ও তার ইনডুনারা ইনিলাকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে খুব সানন্দে অর্ভথনা জানালেন। গ্রহে বসবাসকারী ফিনালীদের অস্তিত রক্ষার এই মিশন কতটা সফলতার মুখ দেখেছে তা জানাতে ইনিলাকে পরীক্ষাকারী যেবন (ডাক্তার) উদাস মুখেই প্রবেশ করলেন। উপস্থিতিদের দ্বিধায় ডুবিয়ে রাখলেন কিছুক্ষণ। তারপর ঘোষণা করলেন- ইনিলা সফল হয়েছে; সে তার জরায়ুতে করে মানুষের শুক্রানু নিয়ে এসেছে। কিন্তু আবার একটা কঠিন সমস্যা দেখা ফিনালীদের জন্য। ভয়ংকর জীবাণু বহন করছিল আনিস নামক মানুষটা। ইনিলা সেই জীবাণু তার লালাতে করে নিজের শরীরে নিয়ে এসেছে। আর এই জীবাণুর আক্রমনে সে ঘন্টখানেকের মধ্যেই মারা যাচ্ছে!

লেখকঃ মোঃ তোফায়েল হোসেন
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

আরও সংবাদ