আজ প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ৭৫তম জন্মবার্ষিকী
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য,চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, আনোয়ারা কর্ণফুলি থেকে বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ৭৫তম জন্মদিন আজ।
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ১৯৪৫ সালের ৩ মে আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নুরুজ্জামান চৌধুরী ও মাতা খোরশেদা বেগম।
বিশাল হৃদয়ের অধিকারী আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সকল মানুষের বিপদে আপদে দরদী হৃদয় নিয়ে এগিয়ে আসতেন,সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন,তিনি সকলের নিকট দানবির বাবু মিঞা নামে পরিচিত ছিল।
তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও চার বারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন পাট বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
শিক্ষা জীবনে , ১৯৫৮ সালে তিনি পটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ওই বছর ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার সময়ে শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে যান। পরে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা প্রশাসনে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আসেন। ব্যবসায়ীক ও রাজনৈতিক জীবনে , ১৯৬৫ সালে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন।তিনি ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।
তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দল পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় কারাভোগসহ নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তিনি চট্টগ্রাম থেকে ১৯৭০, ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তার পাথরঘাটা জুপিটার হাউস থেকে সংগ্রাম কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামে আসার পর ওই হাউস থেকেই সাইক্লোস্টাইল করে প্রচার করা হয়। তার বাসা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি বিশ্বজনমত গড়তে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে যান। তিনি প্রথমে লন্ডনে যান। সেখান থেকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে আমেরিকায় যান। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হন এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণে ভূমিকা রাখেন।তিনি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মেয়ে নূর নাহারুজামানকে বিয়ে করেন। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ২০১২ সালে ৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
বৃহত্তম চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবক আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মৃতি চিরন্জীব হয়ে থাকবে।
এশিয়াবিডি/কামরান/জাহিদ

