মানবপাচারকারী প্রবাসী সুয়েদের বেপরোয়া কর্মকান্ড!

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার দাশটিলা গ্রামের ফ্রান্স প্রবাসী তিন ভাই অবৈধ মানব পাচারের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তারা বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে ফ্রান্সে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করে আসছে৷ ভুক্তভোগিরা ফ্রান্সে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ঐ দেশের আইনের সহযোগীতা নিতে পারছেন না৷ এই সুযোগে সুয়েদ মিয়া বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে।

এমনই এক ভুক্তভোগির কাছে চাঁদাবাজির টাকা না পাওয়ায় তাঁর ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও সোশাল সাইটে ছড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর ভাই রাজনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন৷

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজনগরের দাশটিলা গ্রামের মৃত তছকির মিয়ার ছেলে মসুদ মিয়া, সুয়েদ মিয়া, রাসেল মিয়া মিলে গত বছর ১৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে একই উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের সুমন আহমদকে ফ্রান্স নিয়ে যায়। ফ্রান্সে যাওয়ার আগে ১৩ লক্ষ টাকার পুরোটাই পরিশোধ করতে হয়৷ সুমন ফ্রান্সে পৌঁছার পর থেকে সুয়েদ মিয়ার দোকানে প্রায় ১ বছর বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এক পর্যায় সুমন ঐ দোকান থেকে অন্যত্র কাজ খোঁজে নেয়। এতেই সুয়েদ মিয়া সুমনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে তার ভাই মিলে সুমনকে একটি রোমে আটকে রাখে৷ এবং তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এক পর্যায় সুমন সেখান থেকে প্রাণ রক্ষায় অন্যত্র পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ফ্রান্সে বাঙালি কমিউনিটি নেতাদের কাছে বিষয়টি জানালে তারা সালিশ-বৈঠক করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

কমিউনিটি নেতাদের কাছে বিচার প্রার্থী হওয়ায় সুয়েদ মিয়া আরোও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে তখন সুমন আহমদের ভাই সৌদিআরবে বসবাসকারী আব্দুল গনির কাছে আরোও ১৩ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে সুমন আহমদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল ফোনে থাকা ব্যক্তিগত ছবি, পরিবারের অন্যদের ছবি সোশাল সাইটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। চাঁদাবাজির টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সুমন ও তার ভাইসহ পরিবারের কয়েকজনের নামে ফেইসবুকে ফেইক আইডি খুলে (abal ahmed, sumon ahmed, rahmania gulam, mahi bin) ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেয় সুয়েদ। যা দেশে বিদেশে ভুক্তভোগীর সম্মানহানি ঘটে।

ফ্রান্সে বসবাসকারী রাজনগরের বিশিষ্টজনরা সুয়েদ মিয়ার এমন অসামাজিক কাজের নিন্দা জানান।

ভুক্তভোগীর ভাই ছাদিক জানান, এবিষয়ে তিনিসহ আরো দুজন গত ৭ই মে দাশটিলা গ্রামে সুয়েদ এর বাড়ীতে বিচার চাইতে গেলে তার ভাই মাহমদ মিয়া ও সুয়েদের বউ পক্ষের ভাই সাজু মিয়া তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ধাওয়া করে। প্রাণ ভয়ে তারা পালিয়ে আসেন৷
ভুক্তভোগি সুমনসহ তার পরিবারের মানহানী ও মানব পাচার করে চাঁদাবাজির অভিযোগে সুমনের ভাই ছাদিক গত ১৩ই মে রাজনগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী জানান, মানব পাচারকারী সুয়েদ অবৈধ পথে ফ্রান্সে লোক নেয়। সাগর পথে কিংবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সহজসরল লোক কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে সুয়েদের ফাঁদে পা বাড়ায়। দেশে তার দালাল হয়ে কাজ করে তার সমন্ধি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বড়মান গ্রামের হারিস মিয়ার ছেলে সাজু মিয়া ও সুয়েদের ভাই মাহমদ মিয়া।

রাজনগর সমাজ কল্যাণ সমিতি ফ্রান্স এর সিনিয়র সহসভাপতি, ফ্রান্স আওয়ামীলীগের পর্যটন সম্পাদক বাদল মিয়া মোটোফোনে জানান, সুয়েদ মিয়ার সাথে এ বিষয়ে সালিশি বৈঠকের চেষ্টা করলে তিনি তাতে সাড়া দেন না। বারবার বসতে চাইলেও তিনি আসেন নি।

এবিষয়ে রাজনগর থানার এসআই জাহাঙ্গীর জানান, এরকম লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবৈধ্য মানব পাচার আইনত অপরাধ। অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মানব পাচারে বাংলাদেশে সুয়েদের মাধ্যম হয়ে কাজ করা সাজু মিয়া ও মাহমদ মিয়াকে আইনের আওতায় এনে অবৈধ মানবপাচার বন্ধের দাবী করেছেন ভুক্তভোগী।

এশিয়াবিডি/কামরান/তুহিন 

আরও সংবাদ