স্যারকে ৩০ হাজার টাকা দিবেন, আমি বুঝিয়ে দিবো!
ঘুষ নিয়ে কাজ না করার অভিযোগে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করেছে একটি মাদরাসার শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঘুষের টাকা জব্দ করে।
মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল সাড়ে দশটার দিকে এমপিও সংশ্লিষ্ট কাজে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম সাদেকের কার্যালয়ে যান স্থানীয় শাহপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
শিক্ষকরা দাবী করেন- শিক্ষা কর্মকর্তা কাজ করতে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ চাইলে তারা ১৭ হাজার টাকা দেন। পুরো টাকা না দিলে তিনি কাজ করবেন না বলে জানান। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, ঘুষের ১৭ হাজার টাকা অফিস সহকারী আব্দুস সহীদের কাছে রেখে দেন শিক্ষা কর্মকর্তা। সংবাদ পেয়ে সন্ধ্যায় জুড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম সেখানে গিয়ে টাকাগুলো জব্দ করেন।
ঐ মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. আবুল হোসাইন বলেন, “গত ৬ মে আমাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের এমপিওর নথি আমরা এ কর্মকর্তাকে দেই। কিন্তু ৪ মে জমার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি জমা না করে নিজের কাছে রাখেন। পরে ২১ মে থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত জমার মেয়াদ বাড়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আমরা পূর্বের জমা করা নথি তাড়াহুড়ো করে জমা দেয়ায় সংশোধনের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে বললে তিনি এ কাজের জন্য জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে উনার সহকারী আব্দুস শহীদ আমাকে জানায়, স্যারকে ৩০ হাজার টাকা দিবেন, আমি বুঝিয়ে দিবো।
সুপার বলেন, আজ মঙ্গলবার সকালে কার্যালয়ে আসলে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। আমরা বাধ্য হয়ে অনেক কাকুতিমিনতি করে ১৭ হাজার টাকা জোগাড় করে তাঁকে দিলে তিনি ১৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬ জনের নথি সংশোধনের সুযোগ দিয়ে বাকি ৭ জনের নথি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা করে দেন। আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করে না দেয়ায় আমরা তাঁকে অবরুদ্ধ করেছি। এই ১৭ হাজার টাকা দেয়ার পর উনি টাকাগুলো টেবিলে ছুড়ে ফেলে দেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম সাদেকএসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- আমি তাদের কাছে কোনো টাকা দাবী করিনি। তারা আমার টেবিলে কিছু টাকা রেখে ছবি তুলতে চাইছিলো। আমি রিকোয়েস্ট করেছি আমাকে আপনারা খামোখাই টাকা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, তারা পূর্বের জমা করা নথি সংশোধন করে পূণরায় জমার জন্য বললে আমি তা করে দিতে রাজী হই। ৬ জনের তথ্য সার্ভার থেকে মুছে দেয়ার পর সার্ভারের ভূলে পরের ৭ টি জমা হয়ে যায়। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি সেগুলোও মুছে দেয়ার জন্য। তিনি বাইরে থাকায় পরে করবেন বলে জানান। কিন্তু এরা আমার কথা না শুনে আমাকে কার্যালয়ে আটকিয়ে রেখেছে।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, টাকাগুলো জব্দ করা হয়েছে। টাকা জব্দ তালিকাসহ দুদক অফিসে পাঠানো হবে।তারা ব্যবস্থা নিবে।
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।
এশিয়াবিডি/কামরান/সাইফ

