কবি আবদুল হাই ইদ্রিছীকে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা – ওমর ওয়াশী

১ লা জুন উদীয়মান মানবতাবাদী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মী আবদুল হাই ইদ্রিছীর জন্মদিন। ১৯৮৬ সালের এই দিনে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পিতা মরহুম আলহাজ্ব মাওলানা ইদ্রিছ আলী ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, মাতা মোছাম্মাদ আছমা বেগম গৃহিনী। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

কবি আবদুল হাই ইদ্রিছী জাতীসত্ত্বার মৌলিক ঐতিহ্যকে দৃঢ়ভাবে লালন করে বাংলা সাহিত্যে পথচলা শুরু করেছিলেন শূন্য দশকে। আমার যতটুকু মনে পড়ে মৌলভীবাজার শহরের একসময়ের পাঠকপ্রিয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা অফিসে তাঁর সাথে প্রথম পরিচয়। আড্ডা আলোচনায় মনে হয়েছিলো খুব প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাবান এক কবিকে পেতে যাচ্ছি আমাদের মাঝে। কবি ইদ্রিছী ১লা জুন ২০২০-এ ৩৫ বছরে পা রাখতে যাচ্ছেন। এই অল্প বয়সেই তিনি দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার বাস্তব দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন। লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন দূর্যোগ ও সংকটে সকল প্রতিকূলতাকে পেছনে রেখে আশ-পাশের চেনা-অচেনাজনের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবতাবাদী এই তরুণ কবি। কেননা তাঁর নেশাই হলো- নীরবে নিভৃত্যে যে মানুষগুলো দুঃখে অশ্রু ফেলছে তাঁর সামর্থ মত তাদের মুখে খানিকটা হাসি ফোটানো। এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। এলেখাটি যেহেতু তার জন্মদিনকে উদ্দেশ্য করে, তাই এখানে নিঃস্বার্থ সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর কর্মকাণ্ড উল্লেখের দিকে যাচ্ছি না।

কবি আবদুল হাই ইদ্রিছী শূন্য দশক থেকে লেখালেখির জগৎএ এলেও বর্তমানে তিনি দেশের আঞ্চলিক ও জাতীয়ভাবে প্রকাশিত লিটল ম্যাগ থেকে শুরু করে জাতীয় পত্রিকাতে প্রকাশিত সামসময়িক বিষয় নিয়ে লেখা, ছড়া, কবিতা ও প্রবন্ধ পাঠকমহলে বিপুল সমাদৃত হয়েছে। সাহিত্যের সকল বিষয়ে বলিষ্ঠতার সাথে লিখে যাচ্ছেন নিরবছিন্নভাবে। বিশেষত ছড়া সাহিত্যে তাঁর মুন্সিয়ানা লক্ষণীয়। প্রথিতোযশা ও নবীন লেখকদের মেলবন্দনে তাঁর সম্পাদিত লিটল ম্যাগ ‘অভিযান’ এবং ‘নির্যাস’। এর প্রতিটি সংখ্যাই সমহিমায় সাহিত্য পাড়ায় আলোচনা-সমালোচনায় স্থান করে নিয়েছে।

কবি ইদ্রিছী বর্তমান সময়ে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আধুনিক কবি ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্যের ধারক মোশারফ হোসেন খান এর ৬০ তম জন্মবার্ষিকীতে “আরাধ্য অরণ্যের কবি” নামে একটি পাঠক নন্দিত স্মারক গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। তিনি রচনা করেছেন লোক বিজ্ঞানী ‘ “চৌধুরী হারুন আকবর; জীবন ও সাহিত্য” নামে একটি প্রবন্ধ গ্রন্থ। বিশ্ব জাহান এর শ্রেষ্ঠমানুষ হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর হিরন্ময় জীবনের অংশবিশেষের সমন্বয়ে “রাসূল (সা:) আমার ভালবাসা” নামে একটি সিরাত গ্রন্থ। যা পাঠক মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। যন্ত্রস্থ আছে “স্বপ্নের পলেস্তারা” নামে তাঁর একটি ছড়া গ্রন্থ। সাহিত্য ও মানব সেবার পাশাপাশি তিনি একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবেও যোগ্যতার সাথে স্থান করে নিয়েছেন। জাতীয়, দৈনিক, সাপ্তাহিক ও অনলাইন পত্রিকার উপজেলা ও জেলার প্রতিনিধি, জেলা ব্যুরো, বিভাগীয় ব্যুরো চীফ ও চীফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

কবি আবদুল হাই ইদ্রিছী একজন সফল সংগঠক হিসেবে যা করেছেন তাও ঈর্ষণীয়। তিনি জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির উপসহকারী পরিচালক, শব্দচর সাহিত্য ফোরাম (শসাকো) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চৌধুরী গোলাম আকবর সাহিত্যভূষণ স্মৃতি সংসদ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ,কমলগঞ্জ রিপোটার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি, অক্ষর সাহিত্য সংসদ (অসাস) এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় কবিতা মঞ্চ এর জেলা সভাপতি, কমলগঞ্জ উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য, বন্ধন প্রবাসী সমাজকল্যাণ এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত আছেন।
কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ এই ছোট্ট জীবনে তিনি জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের খ্যাতিমান সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে অনেকগুলো পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন- তরুণ লেখক সংবর্ধনা ও পুরস্কার ২০১৫, ঢাকা। বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি সম্মাননা ২০১৫, ঢাকা। কাব্য কথা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৫, ঢাকা। বাংলাদেশ মিডিয়া ইনষ্টিটিউড সম্মাননা ২০১৬, ঢাকা। শিরোনাম সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ আত্রাই, নওগাঁ। লাল-সবুজ সাহিত্য সম্মাননা ২০১৮, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার। শব্দকলা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। কমলগঞ্জ প্রেসক্লাব সম্মাননা ২০১৯, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার ইত্যাদিতে গর্বিত হয়েছেন গুণি এই তরুণ কবি।
জন্মদিনের শুভলগ্নে কবি আবদুল হাই ইদ্রিছীর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। কবি বেঁচে থাকুন কবিতার জগতে মুকুটময় সম্রাট হয়ে। অনন্ত- আজীবন।

ওমর ওয়াশী: কবি ও শিক্ষক।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান 

আরও সংবাদ