‘প্রশ্ন’
অনিকের রেখে যাওয়া একটা প্যান্টের পকেট থেকে আজ অনেকদিন পর হঠাৎ করেই বেরিয়ে এলো এক টুকরো কাগজ। কাগজ তো নয় একটা চিঠি! খুলে দেখে আঁখি, লেখা আছে- “আর কত খেয়ালী ভাবনায় পড়ে রবে ক্লান্ত নীল জ্যোৎস্নায়?” শুধু এই একটা বাক্য! কার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে বুঝা না গেলেও অনিকের হাতের লেখাই প্রমাণ করে চিঠিটা তারই। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আঁখির মনের গহীন কোণ থেকে।
কালবৈশাখী ঝড়ের মতো নবনিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক অনিক, আঁখির বাবার সাথে তাদের বাড়িতে এসেছিল। লজিং মাস্টার হিসেবে থেকেছিলও তিন মাস। এর মধ্যেই আঁখি আর অনিকের মাঝে ঘটে গিয়েছিল অনেক কিছু। তবে স্পষ্ট করে কেউই বলতে পারেনি ভালোবাসি শব্দটা। তারপর একদিন সকালে সবকিছু ফেলে রেখে অনিক সেই যে গ্রাম থেকে বেরিয়ে গেল আর ফিরেনি কোনদিন; ফিরেনি আঁখিদের আঙিনায়।
অনিকের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র মহুয়া বেশ যত্ন করে কেন যে রেখেছে, নিজেও জানে না তার কারণ। তবে আঁখি অনুভূব করে- কেউ একজন তার মন ছুঁয়ে দিয়েছিল সে সময়।
আঁখির চোখ ঝাপসা হয়ে যায় তার অজান্তেই। তারপরও ঝাপসা দৃষ্টিটা আবারও চলে যায় লেখাগুলোয়। পড়ে সে, তারপর আবার পড়ে, আবার। নেশা ধরিয়ে দেয় কথাগুলো। ক্ষণকাল পরে নেশা কেটে যায়। অনুভব করে বাক্যটার গভীরতা। শূন্যতা গ্রাস করে তার অস্তিত্ব।
বাক্যটা আঁখিকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দেয়। সিদ্ধান্ত নেয় অনিককে সে খোঁজে বের করবে। বলে দেবে- “আর রব না পড়ে খেয়ালী ভাবনায়, ক্লান্ত নীল জ্যোৎস্নায়”।
অনমনা থেকেই কেটে যায় বেশ কিছুটা সময়। তারপর হঠাৎ করেই প্যান্টটার অন্য পকেট তার মনযোগ আকর্ষণ করে। হাত ঢুকিয়ে দ্রুত বের করে আনে আরেকটা কাগজ। ভাঁজ খুলে চমকে উঠে! কাগজটা ভরে আছে তারই ছোট বোন রাখির কচি হাতের লেখায়। কেউ জানেনা আঁখির দুই হাত- অনিক আর রাখির প্রেম কাহিনীর খন্ডাংশ বহন করছে তখন।
চিঠিটা পড়ে শেষ করার পর আঁখি বুঝতে পারল- কেন অনিক পলাতক হয়েছিল। রাখি তাকে বাধ্য করেছিল শরীরের খেলায়।
আঁখি এক বাক্যের চিঠিটা আবার মেলে ধরে দৃষ্টিতে। ভেবে পায়না সে- “আর কত খেয়ালী ভাবনায় পড়ে রবে ক্লান্ত নীল জ্যোৎস্নায়?” এই প্রশ্নটা অনিক কাকে করেছিল! হয়তো রাখির অত্যাচারের উত্তরের খোঁজে সে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করেছিল! কিন্তু সব ভাবনা ছাড়িয়ে তার মনে হলো এটাও তো সত্যি হতে পারে- প্রশ্নটা সে আঁখির জন্যই সাজিয়েছিল!
লেখকঃ
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান