সম্মুখ সারি থেকে করোনা আক্রান্ত; অতঃপর জয়

চীনের উহান প্রদেশে মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের জন্ম হলেও এটা এখন বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নিয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখেrও বেশি।

বাংলাদেশেও করোনার বিস্তার দিনদিন বেড়েই চলছে। তবে সেক্ষেত্রে পৃথিবীর সকল দেশের মতো অদেখা এই ভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি যারা সামনে থেকে লড়ছেন তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক বেশি। যুদ্ধের মাঠে সৈন্যেরা যেভাবে শত্রুকে মোকাবিলা করবে টিক সেভাবে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার নার্সরা করোনা মোকাবিলায় সম্মুখ সারিতে থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন অনবরত।

এমনই এক ডাক্তারের কথা বলছিলাম আজ। ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম। রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রামের মো. লকুছ মিয়া ও দিলারা বেগমের বড় ছেলে। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস শেষ করে স্বাস্থ্য ক্যাডারে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। উত্তীর্ন হয়েছিলেন ৩৮ তম এবং ৪০ তম বিসিএসের প্রিলিমিনারীতে কিন্তু পেশার প্রতি ভালোবাসা এবং দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখতে স্বাস্থ্য ক্যাডারেই থিতু হোন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে উপজেলার সাধারন মানুষকে নিয়মিত চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন তিনি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটিরত অবস্থায় জানতে পারলেন তিনি মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।

এশিয়াবিডির প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে ডা. ফয়জুল জানান, মূলত গত ১৭ মে বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ওয়ার্ডবয় করোনা আক্রান্ত হয়। তারপর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবাই নমুনা দেন টেস্টের জন্য। ২১ মে জরুরী বিভাগে ডিউটিরত অবস্থায় আমাকে জানানো হয় আমি সহ আরও দু’জন করোনা আক্রান্ত।

যুদ্ধের প্রান্তে বুঝি জীবনের অবসান হয়ে যাচ্ছে। তবুও বিচলিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় রোগীদের সাথে কথাবার্তা শেষ করে বাসায় এসে নিজেকে আইসোলিউসিনে নিয়ে যাই। প্রথমে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ জেনে অনেক বিচলিত হয়ে যাই আমি। বিশেষ করে আব্বা আম্মার জন্য টেনশনে পড়ে যাই। ওরা যদি জানে তাইলে অনেক সমস্যা হবে। তাই সবাইকে অনুরোধ করলাম নাম টা যেন মিডিয়ায় না যায়। এদিকে বড় বড় পত্রিকায় বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার করোনা আক্রান্ত নিয়ে নিউজ হয়েগেছে। সবাই ফোন করছেন কারা কারা আক্রান্ত। আমি টিক আছি তো? আমি নিজেকে সামলে রেখে জানালাম, নাম জানা জরুরি নয়। সবাই ভালো আছে। দোয়া করবেন। তারপরও কিভাবে জানি অনলাইনে নাম চলে আসে। একটু বিচলিত হলাম। ছোটভাইকে ফোন দিয়ে বললাম ভার্চুয়াল জগতে তো আম্মা আব্বা নেই। আমি আক্রান্ত সত্য। তবে ভালো আছি। আব্বা আম্মাকে জানানোর দরকার নেই। তারপরেও আম্মাকে অনেকেই অনেক ভুয়া সংবাদ দিয়ে বিচলিত করেছেন। তবে আমি হাসিমুখে প্রতিদিন কথা বলে উনাকে বুঝতে দেই নি। তাছাড়া আমার সহকর্মীরা আমাকে অনেক বেশি মানসিকভাবে শক্তি দিয়েছেন। বিশেষ করে বড়লেখা থানা থেকে ফল উপহার দেওয়া হয়। আইসোলেশনে থেকে থেকে ঈদের দিন চলে আসে। ঘরে বসে ঈদ কাটালাম। সহকর্মীরা রান্না করে বাসায় পাঠালেন। টেনশনে সবার ভালোবাসা পেয়ে বেশ ভালোই লাগছিল।

তারপর ২৭ মে টেস্টের জন্য আবার নমুনা দেই। একজন সহকর্মীর নেগেটিভ আসলেও আমার আর আরেকজন সহকর্মীর আবারও পজেটিভ আসে। মানে আমরা এখনো করোনাকে পরাজিত করতে পারিনি।

সবাই নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন। সবার এতোসব ভালোবাসায় আমার করোনা যে আছে সেটাই ভুলে গেছিলাম। এভাবে টানা একুশ দিন পর ১০ জুন জানতে পারি আমি করোনা মুক্ত।

আসলে করোনাভাইরাস তেমন ভয়ংকর কিছু নয়। মানষিক ভাবে শক্ত থাকলে এবং সচেতন ভাবে নিজেকে চালাতে পারলে করোনা যুদ্ধে সফল হওয়া কঠিন কিছু নয়। ভাইরাস টা আমাদের মানসিক দূর্বলতাকে বেশি কাজে লাগায়। ফ্রন্ট লাইনে থেকে আগে যেভাবে কাজ করেছি এখনো সেভাবে কাজ করবো। আমার পেশা আমার কাছে অনেক বড়।

এশিয়াবিডি/কামরান/মুবিন

আরও সংবাদ