‘ঘ্রাণ’

শ্রাবণ মাস। আজ বৃহস্পতিবার। সপ্তাহের শেষ দিন। কেন জানি এ দিনটির শুরু থেকেই একটা অলসতা পেয়ে বসে আতিবের! অফিসে যেতে মনটা একদম সাড়া দেয়না। কিন্তু কোন উপায় থাকেনা বিধায় নিজেকে ঠেলে-টেনে নিয়ে যায় সে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। রোজকার নিয়ম অনুযায়ী যাওয়ার পথে জান্নাতকে স্কুলে ছেড়ে দিয়ে আতিব ভাবনাহীনভাবে তার অফিসে চলে যায়। ছুটির সময় রুনা গিয়ে নিয়ে আসে মেয়েটাকে বিধায় আর কোন চিন্তা থাকেনা।

মেয়েটাকে স্কুলে দিয়ে আতিব দু’টানায় পড়ে গেল। মন ও শরীর দু’টাই যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে হঠাৎ করে। ফুটপাতের চা’য়ের দোকানে গিয়ে বসল সে। টানা দশ মিনিটে এক কাপ চা শেষ করে পকেট থেকে ফোন বের করে বসকে ফোন দিল। জড়ানো কন্ঠে জানালো- হঠাৎ করে তার শরীর খুব খারপ হয়ে গেছে। আজ আর অফিসে আসা সম্ভব হচ্ছে না।

বস আজ সম্পূন্ন ব্যতিক্রম। হাসি হাসি কন্ঠে ছুটি মঞ্জুর করে দিলেন। আতিব সটান দাড়িয়ে বাসার উদেশ্যে দ্রুত রওয়ানা হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে বন্ধ দরজার সামনে দাড়িয়ে বেলটা টিপল- একবার, দু’বার, তিনবার। রুনা হয়তো বাথরুমে। মিনিট দুই পর আরও তিনবার চেষ্টা চালিয়ে যখন চতুর্থবারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় বাড়ির পিছন দিকে কিছু পতনের শব্দ হলো এবং ঠিক তখনই দরজাটা খুলে গেল। রুনা বিমূঢ়, রক্তহীন চেহারায় দরজার একটা কপাট ধরে নিজেকে ফিরে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে! তার শরীরে যেন জ্বর আসা কাপন! তার শাড়ী ও চুলের মাঝে যেন বহে যাওয়া ঝড়ের রেখে যাওয়া তান্ডব চিহ্ন! মিনমিন কন্ঠে রুনা তার ফিরে আসার কারন জানতে চাইল। আতিব কিছু বলল কিনা রুনা তার কিছুই শুনলো না। এমনকি আতিব নিজেও জানলো না সে রুনাকে কি উত্তর দিয়েছে!

আতিব রুমে ঢুকার পর রুনা যেন হঠাৎ করেই নিজেকে ফিরে পায়। যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রান্নাঘরের দিকে ছুটে যায় আর এই সুযোগে আতিব ছুটে বেডরুমের দিকে। ছেড়ে যাওয়া জামা কাপড় যেখানে রেখে গিয়েছিল সেখানেই আছে। এগিয়ে গিয়ে সেগুলো হাতে নিল সে। আর ঠিক সেই মহূর্তে তার ইন্দ্রিয়গুলো সজাগ হয়ে ওঠে। কিছু একটা যেন অনুভব করে আতিব! কি একটা যেন ধরা দিয়েও দেয় না। এখানেই যেন খুব বড় কিছু একটা ঘটে গেছে ক্ষণিক আগে! এখানেই যেন আতিবের কিছু একটা হারিয়ে গেছে! কিন্তু সে যেন দেখেও দেখছে না; বুঝেও যেন বুঝে ওঠতে পারছে না।

নিজের অজান্তেই আতিব রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। রুনা নিজেকে খুব ব্যস্ত দেখাতে চাইলেও আতিব এখানে ব্যস্ততার কিছুই খুজে পেল না। রুনার অস্বাভাবিক আচরণ তার দৃষ্টিতে সজোরে আঘাত করলো। এমন সময় আতিব দেখলো- রান্নাঘরের পিছনের দরজাটার কপাট এক ইঞ্চির মতো ফাঁক হয়ে আছে! কিন্তু সে তো তার নিজের হাতেই গতকাল সন্ধ্যায় কপাট ভাঙ্গা দরজাটা একটা লম্বা কাঠের টুকরো দিয়ে পেরেক বিঁধিয়ে আটকিয়ে দিয়েছিল। মিস্ত্রি আসার কথা আজ বিকেলে। তবে কে খুললো- বাড়ি থেকে পিছন দিকে বেরিয়ে যাওয়ার এই একমাত্র দরজাটা! রুনাও আতিবের দৃষ্টি অনুভব করতে পারলো- থর থর করে কাঁপতে লাগলো জ্বলন্ত চুলার পাশে দাড়িয়ে।

আতিব দ্রুত ফিরে এলো বেডরুমে। এবার সে ধরতে পারল অধরা বিষয়টা। বালিশে দু’টি চুল- যা রুনা অথবা তার চুলের সাথে কোনভাবেই মিলে না। আতিব এগিয়ে গিয়ে হাতে তুলে নিল চুলগুলো। নাকটা বালিশের কাছে এগিয়ে নিয়ে কুকুরের মতো ঘ্রাণ নিল! খুব পরিচিত ঘ্রাণ। সে যার বালিশে শুয়ে রুনার মতো বেইমানি করে- এ যে তার ঘ্রাণ। হয়তো সেও আতিবের ঘ্রাণটার সাথে খুব পরিচিত! কেন হবে না- সেও যে আতিবের বালিশে শুয়ে রুনাকে সুখী হওয়ার কৌশল শেখায়; যেমন করে আতিব শেখায় তার বালিশে শুয়ে তার স্ত্রীকে!!!
লেখকঃ কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ