জান্নাতীদের কবর কেমন হবে

কুরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত মৃত্যু নামক শরবতের পেয়ালা সবাইকে পান করতে হবে। আর কবর নামক ঘরের দরজা দিয়ে সবাইকে আখেরাতের দিকে যেতেই হবে। এই কবর কারো জন্য হবে ফুলের বাগিচা ও জান্নাতের টুকরা।আবার কারো জন্য হবে আগুনের কুণ্ডলী ও জাহান্নামেরগর্ত। যারা নেককার বান্দা তথা জান্নাতী তাদের জন্য অন্ধকার কবর কেমন হবে কুরআন-হাদিসের লোকে খুব সংক্ষেপে আমরা জানব। ইনশা আল্লাহ

মৃত্যুর পর কবর হলো প্রথম মানযিল

দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন শেষ হওয়ার পর আখেরাতের দিকে সবাইকে যেতেই হবে। আর আখেরাতের প্রথম মানযিল হচ্ছে অন্ধকার কবর। যা তিরমীজী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বাহির (রাঃ) হযরত উসমান (রাঃ) এর মুক্তদাস হানী থেকে বর্ণনা করেন, হযরত উসমান (রাঃ) কোন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এত কাঁদতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। তাকে প্রশ্ন করা হলো, জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করা হলে তো আপনি কাঁদেন না, অথচ এই কবর দর্শনে এত বেশি কাঁদেন কেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আখিরাতের মানযিলসমূহের (প্রাসাদ) মধ্যে কবর হলো প্রথম মানযিল। এখান হতে কেউ মুক্তি পেয়ে গেলে তবে তার জন্য পরবর্তী মানযিলগুলোতে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে যাবে। আর সে এখান হতে মুক্তি না পেলে তবে তার জন্য পরবর্তী মানযিলগুলো আরো বেশি কঠিন হবে। তিনি (উসমান) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন- আমি কবরের দৃশ্যের চাইতে অধিক ভয়ংকর দৃশ্য আর কখনো দেখিনি”।

 মৃত্যু ব্যক্তির কবরে প্রশ্ন করা হবে

মৃত্যু ব্যক্তিকে কবরে দাফন করার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতারা কিছু প্রশ্ন করবেন এটা সত্য। আর এই সময় মুমিন বান্দারা তাদের ঈমানের উপর অবিচল থেকে সঠিক জবাব দিবেন। সূরা ইব্রাহিমের ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “আল্লাহ অবিচল রাখেন ঈমানদারদেরকে সুদৃঢ় বাণী দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। আর আল্লাহ যালিমদের পথভ্রষ্ট করেন এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন”।

উক্ত আয়াতে কারীমার ব্যাখ্যায় হাদীসে এরূপ এসেছে যে, মৃত্যুর পর কবরে কোন মুসলিমকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে উত্তরে এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। সুতরাং এটাই অর্থ হচ্ছে আল্লাহর এই বাণীর। (বুখারী- তাফসীর সূরা ইবরাহীম, মুসলিম- কিতাবুল জান্নাতি ওয়া সিফাতি নাঈমিহা)।

অন্য এক হাদীসে আছে যে, যখন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীরা চলে আসে, তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শোনে। অতঃপর তার নিকট দুজন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করেন যে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মত কি? সে মুমিন হলে উত্তর দেয় যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। ফেরেশতাগণ তাকে জাহান্নামের ঠিকানা দেখিয়ে বলেন যে, আল্লাহ এর পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতে ঠিকানা বানিয়ে দিয়েছেন। সে উক্ত উভয় ঠিকানা দেখে এবং তার কবর সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেওয়া হয় এবং তার কবরকে কিয়ামত অবধি নিয়ামত সম্ভার দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়। (মুসলিম, উপরোক্ত পরিচ্ছেদ)। আরেক হাদীসে আছে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? তোমার নবী কে? সুতরাং আল্লাহ তায়ালা অটলতা দান করেন এবং সে উত্তর দেয়, আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম এবং আমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

আবু দাউদ শরীফের এসেছে- “হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃতের দাফন শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেন- তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সে যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে সেজন্য দোয়া করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে”।

 কবরকে প্রশস্ত করে দেওয়া হবে

মুমিন বান্দা যখন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম হবে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের নির্দেশ দেওয়া হবে কবরকে প্রশস্ত করে দেওয়ার জন্য। সহিহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দুজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং তাঁরা বলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তুমি কী বলতে? তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থান স্থলটির দিকে নযর কর, আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থান স্থল দান করেছেন। তখন সে দুটি স্থলের দিকেই দৃষ্টি করে দেখবে। কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, সে ব্যক্তির জন্য তাঁর কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে”।

 জান্নাত দেখানো হবে

অন্ধকার কবরে সকাল সন্ধা প্রতিটি মানুষের কৃতকর্মের ফলাফল দেখানো হবে। যা দুনিয়ার জমীনে থাকা অবস্থায় কামাই করেছেন। সহিহ বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়”।

বাসর ঘরের ঘুমের মত ঘুম হবে

একজন যুবক বিয়ের রাতে যেমন আরামের ঘুম ঘুমায় তাকে কেউ বিরক্ত করে না শুধুমাত্র তার নতুন প্রিয়জন ব্যতীত। ঠিক এভাবেই একজন জান্নাতী কবরে যাওয়ার পর দুনিয়ার সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে কবরে জান্নাতী বিছানায় আরামের ঘুম দিবেন। সুনানে আত-তিরমিজী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দুজন ফেরেশতা আসেন তার নিকট। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকীর বলা হয়। তারা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেন, তুমি এ ব্যক্তির তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রসঙ্গে কি বলতে? মৃত ব্যক্তিটি যদি মুমিন হয় তাহলে পূর্বে যা বলত তাই বলবে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। তারা উভয়ে তখন বলবেন, আমরা তো জানতাম তুমি একথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সত্তর গজ করে প্রশস্ত করা হবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সে লোককে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের নিকট ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবেন, বাসর ঘরের বরের মত তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয়জন ব্যতীত আর কোন ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামাতের দিন তাকে তার বিছানা হতে জাগিয়ে তুলবেন”।

 জান্নাতী পাখিদের রুপে তাদের রুহ

কোন জান্নাতী বান্দার রুহ কবজ করার পর আল্লাহ তায়ালার হুকুমে এটাকে জান্নাতী পাখিদের মত করে রাখা হবে। সুনানে আন-নাসায়ীর হাদীসে এসেছে- “হযরত কাব ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- মুমিনদের রুহ জান্নাতের গাছের পাখীর রুপ ধারন করে থাকবে, কিয়ামতের দিন তাদের স্বীয় শরীরে পুনঃ স্থাপন করা পর্যন্ত”।

 নামাজ পড়ার ইচ্ছা করবেন

দুনিয়ার জমীনে একজন নামাজী ব্যাক্তি যেভাবে সময় মত নামাজ আদায় করার জন্য অপেক্ষা করতেন ঠিক কবরে যাওয়ার পরও তিনি নামাজ আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করবেন। ইবনে মাজাহ ও মিশকাত শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- মুমিন ব্যাক্তিকে কবরে প্রবেশ করানো হলে, তার মনে হবে যেন সূর্য অস্তমিত হচ্ছে। অতঃপর তার দেহে পুনরায় আত্মাকে ফিরিয়ে দেবার পর সে চোখ মেলে তাকায়। এবং উঠে বসে।আর ফেরেশতাদের বলে, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এখন নামাজ পড়ব”।

আল্লামা মোল্লা কারী (রঃ) লেখেন , তখন মৃত ব্যাক্তি নিজেকে দুনিয়াতেই আছে বলে ধারনা করতে থাকে। সে বলে জিজ্ঞাসা বাদ এখন রেখে দাও। আমাকে ফরজ আদায় করার সুযোগ দাও। সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার নামাজ চলে যাবে। এ কথা গুল তারাই বলবে , যারা নামাজের অনুরাগি ছিল। এবং যাদের মন সর্বদা নামাজেরই ধ্যানে নিমগ্ন থাকতো। (মিরকাত)

কবর নিজেই সেজে অপেক্ষা করে

দুনিয়ার নিয়ম হচ্ছে আপনার ঘরে কোন ভালো মেহমান আসলে আপনার ঘরকে আপনি ঐ মেহমানের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে রাখবেন। ঠিক তেমনিভাবেই কবরের মেহমান হলেন একজন জান্নাতী ব্যাক্তি। আর ঐ মেহমানের জন্য কবর নিজেই সাজিয়ে অপেক্ষা করবে। হাকেম ও নূরুস সুদূর কিতাবে এসেছে- “হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, যখন কোন মুমিনের মৃত্যু হয়, তখন কবরস্থান নিজেই নিজেকে সজ্জিত করে নেয় এবং কবরস্থানের প্রতিটি অংশই তাঁকে নিজেরবুকে দাফন হওয়ার আশা পোষণ করতে থাকে”।

 মুমিনের প্রতি কবরে সুখকর চাপ

“হযরত সাইদ ইবনে মুসায়েব (রাঃ) বলেন, হযরত আয়েশা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যখন কবরে মুনকার-নাকির এর বিভৎস কণ্ঠ এবং মৃত ব্যাক্তিকে কঠোর ভাবে চাপ দেয়ার কথা বলেছেন, তখন থেকে আমি কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না। এবং কিছুতেই আমার মনের অস্থিরতা দূর হচ্ছে না। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ওহে আয়েশা ! মুনকার-নাকিরের কণ্ঠস্বর মুমিনের কাছে অনুরুপ সুখকর মনে হবে, সুরেলা কন্ঠের আওয়াজ যেমন মনমুগ্ধকর হয়ে থাকে। নয়ন জুগলে সুরমা ব্যাবহার করলে যেমন চোখে সুখ ও শান্তি অনুভুত হয়, কবরে মুমিনদের প্রতি মাটির চাপ ও অনুরুপ সুখকর ও শান্তি দায়ক হবে, কারো মাথা ব্যথা হলে যেমন তাঁর স্নেহ ময়ি মা পুত্রের মাথা আস্তে আস্তে চাপতে থাকেন, আর পুত্র তখন খুব আরাম ও শান্তি অনুভব করতে থাকে। ওহে আয়েশা মনে রাখবে, আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ কারীদের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্য। তাদেরকে এমন ভাবে মাটির চাপ দেয়া হবে, যেমন ডিমের ওপর পাথর রেখে চাপ দেয়া হয়”। (শরহে সুদূর)

 মুমিনের কাছে অন্যান্য কবরবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ

“হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফেরেশতাগন যখন মুমিন ব্যাক্তির যান কবজ করে অন্যান্য মুমিন আত্মার কাছে নিয়ে যান, যাদের অনেক পূর্বেই মৃত্যু হয়েছে, তখন সে আত্মা সমুহ এর আগমনে এমন ভাবে খুশী হয়, যেমন এই দুনিয়ায় কেউ কোন উপস্থিত আপন জনের আগমনে খুশী হয়ে থাকে। তখন তারা এই আত্মার কাছে জিজ্ঞাস করেন অমুকের অবস্থা কি? অতঃপর তারা নিজেরাই বলে খান্ত হও, যেহেতু সে দুনিয়ার বিভিন্ন চিন্তায় নিমগ্ন ছিল, তাই কিছু সময় বিশ্রাম করতে দাও। অতঃপর ওই মৃত ব্যাক্তি তাদের কে বলেন অমুক এ অবস্থায় আছে ,অমুক এভাবে আছে। সে তাঁর অনেক পূর্বে মৃত জনৈক মৃত ব্যাক্তি সম্পর্কে বলে, অনেক পূর্বেই সে মৃত্যু বরন করেছে। সে কি তোমাদের কাছে আসে নি? তারা বলে যখন সে দুনিয়া ছেড়ে এসেছে এবং আমাদের কাছেও আসেনি তাহলে অবশ্যই তাঁকে জাহান্নামে নেয়া হয়েছে”। (আহমদ, নাসাই ও মিশকাত শরীফ)

 জান্নাতী পোষাক ও বিছানা পাবেন

সুনানে আবু দাউদ শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত আল-বারাআ ইবনে আবিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে আনসার গোত্রের এক ব্যক্তির জানাজায় শরীক হওয়ার জন্য রাওয়ানা হয়ে কবরের নিকট গেলাম। কিন্তু তখনও কবর খনন শেষ হয়নি। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসলেন এবং আমরাও তাঁর চারিদিকে নীরবে তাঁকে ঘিরে বসে পড়লাম, যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। তখন তাঁর হাতে ছিল একখানা লাঠি, তা দিয়ে তিনি মাটিতে আঁচড় কাটছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা তুলে দুই বা তিনবার বললেন, তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের আযাব হতে আশ্রয় চাও। বর্ণনাকারী জারীর আরো উল্লেখ করেন, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় যখন তারা ফিরে যেতে থাকে, আর তখনই তাকে বলা হয়, হে অমুক! তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কি এবং তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে? হান্নাদ (রহঃ) বলেন, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অতঃপর তার নিকট দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে উভয়ে প্রশ্ন করে, তোমার রব কে? তখন সে বলে, আমার রব আল্লাহ। তাঁরা উভয়ে তাকে প্রশ্ন করে, তোমার দ্বীন কি? সে বলে, আমার দ্বীন হলো ইসলাম। তারা প্রশ্ন করে, এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? তিনি বলেন, সে বলে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তারপর তারা উভয়ে আবার বলে, তুমি কি করে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি। জারীর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, এটাই হলো আল্লাহর এ বাণীর অর্থঃ “যারা এ শাশ্বত বাণীতে ঈমান এনেছে তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন” (সূরাহ ইব্রাহীম ২৭)। এরপর বর্ণনাকারী জারীর ও হান্নাদ উভয়ে একইরূপ বর্ণনা করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- অতঃপর আকাশ হতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, আমার বান্দা যথাযথ বলেছে। সুতরাং, তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও। এছাড়া তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সুতরাং, তার দিকে জান্নাতের স্নিগ্ধকর হাওয়া ও তার সুগন্ধি বইতে থাকে। তিনি আরো বলেন, ঐ দরজা তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করা হয়”।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানের সহিত জান্নাতী হিসেবে কবরে যাওয়ার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
লেখকঃ ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ