স্বপ্ন ও প্রবাস

অভিবাসী শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে ইমিগ্রান্ট যার অর্থ হল অভিবাসী। যে কেউ নিজ দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও এক বছরের বেশি সময় থাকলে থাকে সাধারণ অর্থে অভিবাসী বলা যায়। সহজ অর্থে যে যায় তাকে প্রবাসী বলে, আর যে দেশে যায় ওই দেশের মানুষের জন্য সে অভিবাসী হয়ে উঠে।
মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অভিবাসী হতে পারে, কেউ পেটের দায়ে, কেউ অর্থনীতির চাকা সচল করতে অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রবাসের জীবন কে বরন করে নেয়, কেউ আবার ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের ঊদ্দেশ্য উন্নত জীবন ধারনের জন্যে প্রবাসীর খাতায় নাম লেখায়। অনেকেই আবার পড়ালেখা বা পারিবারিক উদ্দেশ্য ও অন্যদেশে স্হায়ী বা অস্হায়ী ভাবে বসবাস করেন।
আর আমার মতে এক বুক আশা আর ভালোবাসা নিয়ে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কোন এক অচেনা জনগোষ্ঠীর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার নাম হচ্ছে প্রবাসী।
আমার সোনার বাংলা ছেড়ে অন্য যে কোন দেশেই যাই না কেনো ভাষাগত সমস্যা সহ অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা বাংঙালীরা অনেকটা আরাম প্রিয় জাতি জন্মগত ভাবেই আমরা অনেকটা উদাসীন ভাবে বড় হই। কিন্তু এ কথা সত্য আমরা অন্যদের তুলনায় অনেক পরিশ্রমী।
যে মানুষটা রাজার হালে দেশে জীবন কাটিয়েছে তাকে আজ একরাশ স্বপ্ন ও আশা নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাজের মধ্যে থাকতে হয়। খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা সহ কত কিছু বিসর্জন দিতে হয় একজন প্রবাসীকে। অনেক হিসেব করে চলতে হয় প্রতিটি মূহুর্ত, নিজের চাহিদা মিটিয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে হয় নিজের সূখ গুলো।
প্রবাস হল
প্রবাস মানে- সোনালী স্বপ্নের পেছনে ছুটার সূচনা।
প্রবাস হল- বাস্তব শিক্ষা ভূলিয়ে দেয় সব কল্পনা।
প্রবাস মানে- হাসির পেছনে অশ্রু ঠলমল
প্রবাস হল -নির্ভীক প্রানে যুদ্ধ করার ফল।
প্রবাস মানে – নয় অট্টালিকা আর টাকা কড়িকড়ি
প্রবাস হল- হিসেব করে কেমনে জীবন গড়ি।
প্রবাস মানে -পরের ঘরে নীজের সূখটি খূঁজা
প্রবাস হল – ভুলে যাওয়া তুমি ছিলে রাজা।
প্রবাস মানে-বিষন্নতা আর স্বপ্নের ফুলঝুড়ি
প্রবাস হল-শুধুই বেঁচে থাকা আপনজনদের ছাড়ি।
প্রবাস মানে-প্রতি মুহূর্তে শুধু স্বপ্ন বিসর্জন
প্রবাস হল- স্বাধীনতাহীন বন্দি এক জীবন।
প্রবাস মানে- ইচ্ছা অনিচ্ছায় মানিয়ে নেয়ার নাম
প্রবাস হল- এক পরীশ্রমীর গায়ে ভেজা ঘাম।
প্রবাস মানে-বোনের আবদার, ভাইয়ের চাওয়া পাওয়া
প্রবাস হল -বেঁচে থাকা শুধু মা বাবারি দোয়া।
প্রবাস মানে- মানিয়ে নেয়া মানিয়ে নিতে হয়
প্রবাস হল -অদৃশ্য যুদ্ধে, যাতে একদিন মরে যেতে হয়।
কে দায়ী আমাদের এই প্রবাস জীবনের জন্য এই আমরা? না সমাজ না রাষ্ট্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বোধহয় আমরাই। রাষ্ট্র হয়তো আমাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।আমাদের চাহিদার যোগান দিতে পারেনি। কিন্তু আমাদের উচিত ছিল দেশের জন্য, সমাজের জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করেও কিছু একটা করা যেভাবে মেধাবীরা বিদেশ গমনে ইচ্ছুক না হয়। এভাবে চলতে থাকলে দেশের জন্য অদূর ভবিষ্যতে অন্য দেশ থেকে মেধাবীদের ভাড়া করে নিয়ে আসতে হবে।
বিদেশে আমরা যে কটিন পরিশ্রম করে ব্যবসা বা কাজ করি সঠিক পথে তা দেশে বাস্তবায়ন করলে দেশেও অনেক কিছু করা সম্ভব হবে।জানি আমাদের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরুতে হবে। জানা অজানা হাজার ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তারপর ও বতর্মানে আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং ডিজিটাল ওয়েব ব্যবহার করে অনেক কিছু অতি সহজেই করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতটা নিজের মনের মতো করে উপভোগ করা যাবে। হারজিত জীবনে থাকবেই, তেমনি লাভ-লোকসানও।
দেশে থাকলে প্রতিটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কাজ কর্মে নিজে কে নিয়োজিত রাখতে পারতাম।প্রবাসে মারা গেলে লাশটি দেশে যাবে কিনা সেটাই সন্দেহ, আর প্রবাসে অসুস্থ হলে আনুধাবন করা যায় আপনজন ছাড়া জীবন কতটা দূর্বিসহ কষ্টের অনেকেই হয়তো বলবে বিদেশে থেকে বলছি বিদেশ ভালো না।
তা ঠিক অনেকেই আবার বিদেশে এসে অনেক সুখি জীবন যাপন করছেন নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে।গাড়ী বাড়ী ব্যবসা করে অনেক ভালো অবস্তান গড়ে তুলেছেন। নীজের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। আজ অবদি নিজ দেশকে ছাড়া এতটুকু শান্তি খুজে পাইনি যতটুকু পেয়েছি আমার মাতৃভূমিতে। আজও যে মূহুর্তেই দেশের কথা মনে পড়ে না কেনো প্রানটা যেনো আনন্দে আত্নহারা হয়ে উঠে।প্রবাসীদের সুখ বলতে দেশকে বুঝায় দেশে সবাই ভালো তো আমরা প্রবাসীরাও ভালো।
দেশে হয়তো বিদেশের মতো এতো টাকা নেই। আছে এক আকাশ সুখ নিজের নিজস্ব এক জীবন ধারা, মৌসুমের ফল, পুকুরের মাছ, নিজের লাগানো শাক সব্জি,পরিবারের সান্নিধ্য, মায়ের ভালোবাসা, বাবার শাসন, বোনের আদর প্রবাসী হলে তা শুধু বিসর্জন দিয়ে যেতে হয়।
আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্যে হলেও অন্তত একটা কিছু করতে হবে।
বিদেশে আসার পর যে সবকিছু মিলিয়ে আমরা যে কষ্ট করি দেশে আমাদের এতো কষ্ট করতে হতো না যারা বিদেশে আসি তাদের জন্য। তাদের বদৌলতে যাদের সামর্থ ছিল না তারা ও কিছু একটা করার ঊৎস পেতো তাতে তারাও অনেক উপকৃত হতো।
আমাদের অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ব্যবস্তাকে ভূলে যেতে হবে। বুঝতে হবে সবার ভাগ্য সমান নয়। কোন অবস্তাতেই যেন অবৈধ ভাবে বিদেশে আসার অপচেষ্টা না করি। জীবন একটাই এটা আমাদের অনুধাবন করতে হবে।
আগামী তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহবান দেশের প্রতিটি ধাপে যেন নিজেকে নিয়োজিত রাখার শক্ত মনোবল নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলি আমরা সবাই। মনে রাখতে হবে কোন কাজ-ই ছোট নয় আর ছোট-ছোট কাজ দিয়ে বড় কাজ শুরু করতে হয়। নিজে উদ্যোক্তা হয়ে নিজের মেধা শ্রম ও স্বপ্ন নিজের দেশে তা বাস্তবায়নের জন্যে মনে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সবাই এক সাথে কাজ করি। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে আর প্রবাসীদের ব্যথাটাও ধীরে ধীরে কমে আসবে। আর কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলতে শিখি। পরিশ্রম করা লজ্জা নয় বরং চুরি করা লজ্জা এটা আমাদের বুঝতে হবে।
লেখকঃ বার্সেলোনা, স্পেন থেকে
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
