ইসলামের দৃষ্টিতে করোনা পরিস্থিতি নিরসনে আমাদের করণীয়
আজ প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশসহ গোটা পৃথিবী এক সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। মানব জাতি আজ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। আতঙ্কে গোটা বিশ্ব থমকে গেছে। মোট কথা করুণার কার্যত পুরো বিশ্ব অচল। মানুষের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ আনতে দেশে দেশে কারফিউ জারি হচ্ছে ।এর থেকে অনুমান করা যায় করোনা ভাইরাস এর কাছে কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ গোটা পৃথিবী করুনা রোধে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কোন কমতি করছে না। নানা উপায় উপকরণ গ্রহণ করা হচ্ছে, ফল কি হচ্ছে ক্রমান্বয় আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
বিজ্ঞানের এই চরমোৎকর্ষের যুগে,প্রযুক্তি যখন ঘরে ঘরে,উপায়-উপকরণের যখন সয়লাব তখন কেন এত ব্যর্থতা?
এর থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে বিপদাপদ রোধে কেবল বস্তুগত আর বাহ্যিক উপায়-উপকরণ গ্রহনই যথেষ্ট নয়।মূল বা আসল ব্যবস্থাপনা থেকে আমরা দূরে সরে রয়েছি। আসল উপায়-উপকরণ বাদ দিয়ে বস্তুগত আর বাহ্যিক উপায়-উপকরণ নিয়ে পড়ে রয়েছি।
আসুন জেনেনেই বালা মুসিবত,বিপদাপদ আসার কারণ,এখন তা রোধে আমাদের করণীয় সম্পর্কে।
১। বালা মুসিবত আসার কারণ:
জলে-স্থলে যত বিপর্যয়, বালা মুসিবত, বিপদাপদ দেখা দেয় সব মানুষের কৃতকর্মের ফল।অবাধ্যাচরণ ও পাপকর্ম থেকে ফিরে আসতে বালা মুসিবত দিয়ে শতর্ক করেন। যাতে তারা ফিরে আসে।
আল্লাহ তাআলা এমর্মে এরশাদ করেন
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
‘মানুষের কৃর্তকর্মের দরুণ জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দেয়, যা দ্বারা আল্লাহ তাদেরকে তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি ভোগ করান, যাতে তারা (সুপথে) ফিরে আসে, (রূম : ৪১)।
অন্যত্র বলেন-
وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
‘গুরুশাস্তির (অর্থাৎ জাহান্নামের শাস্তির) আগে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘুশাস্তি ভোগ করাব, যাতে তারা ফিরে আসে’ (সাজদা : ২১)। পার্থিব জীবনের বালা-মসিবত ও দুঃখ-কষ্টই হল সেই লঘুশাস্তি, যা আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাদের অবাধ্যাচরণ ও পাপকর্মের কারণে দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَى بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ
অর্থ : আর তোমার পালনকর্তা এমন নন যে, জনবসতিগুলোকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, সেখানকার লোকেরা সৎকর্মশীল হওয়া সত্ত্বেও। (সূরা হুদ; আয়াত ১১৭)
মহামারী কেন আসে নবীজীর এরশাদ
হাদিস শরিফে প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
‘যখন কোনো কওমের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা তা প্রকাশ্যেও করতে শুরু করে তবে তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনু মাজাহ, আসসুনান : ৪০১৯)।
২। আমাদের করণীয়ঃ
আমাদের করণীয় সম্পর্কে যথাক্রমে আলোচনা করা হল।
১ তাওবা ও দোয়া করা:
যখন গুনাহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তখনই আল্লাহ তাআলা বালা মুসিবত বিপদাপদ অবতীর্ণ করেন। তাই এই মুসিবত থেকে পরিত্রাণ পেতে ভবিষ্যতে সকল গুনাহ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ হয়ে তওবা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ (42) فَلَوْلَا إِذْ جَاءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا وَلَكِنْ قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
الأنعام/42، 43
“আর অবশ্যই আমরা আপনার আগে বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি। অতঃপর তাদেরকে সম্পদের সংকট ও শারীরিক দিয়ে পাকড়াও করেছিলাম, যাতে করে তারা কাকুতি-মিনতি করে। আফসোস! তাদের উপর যখন আমাদের শাস্তি আপতিত হল তখন তারা যদি অনুনয়-বিনয় করত? বরং তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং তারা যা করেছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল।”[সূরা আন্আম; ৬:৪২-৪৩]
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاءِ এখানে البأساء অর্থ: দারিদ্র ও জীবিকার সংকট। الضراء: রোগবালাই, ব্যথ্যা-বেদনা। يتضرعون অর্থাৎ যাতে তারা আল্লাহ্কে ডাকে, মিনতি করে এবং ভীত হয়।
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন:
أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُونَ
التوبة/126
“তারা কি দেখে না যে, তারা প্রতি বছর একবার বা দুইবার পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। এরপরও তারা তাওবা করে না এবং উপদেশ গ্রহণ করে না।”[সূরা তাওবা, ৯:১২৬]
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
অর্থ : মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্র সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা নূর; আয়াত ৩১)
কোন পাপ ছাড়া বালা মুসিবত বিপদাপদ অবতীর্ণ হয় না এবং তাওবা ছাড়া বালা মুসিবত বিপদাপদের অবসান হয় না। তাই তাওবার কোন বিকল্প নাই।
২। ইস্তিগফার করা:
যে ব্যক্তি ইস্তিগফার (গুনাহ থেকে মাফ চাওয়া) কে অপরিহার্য করে নিবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রত্যেক সঙ্কট থেকে মুক্তি দিবেন, প্রত্যেক পেরেশানী থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিযিক দান করবেন।
এটি হচ্ছে সুস্বাস্থ্য, শক্তি লাভ ও সুখী জীবন যাপন করার কারণ:
আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ
هود/3
“আরও যে, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর, অতঃপর তার কাছে তাওবা কর (ফিরে আস)। তাহলে তিনি তোমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন এবং তিনি প্রত্যেক সৎকর্মশীলকে তার সৎকর্মের প্রতিদান দান করবেন।”[সূরা হুদ, ১১: ৩]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে ইরশাদ করেন,
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
অর্থ : অথচ আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। তাছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দিবেন না। (সূরা আনফাল; আয়াত ৩৩)
তিনি আরও বলেন:
وَيَاقَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ
هود/52
“হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তাওবা কর (ফিরে আস), তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষুলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন। তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।”[সূরা হুদ, ১১: ৫২]
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ
অর্থ : যে ব্যক্তি ইস্তিগফার (গুনাহ থেকে মাফ চাওয়া) কে অপরিহার্য করে নিবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রত্যেক সঙ্কট থেকে মুক্তি দিবেন, প্রত্যেক পেরেশানী থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে অকল্পনীয় স্থান থেকে রিযিক দান করবেন। (সুনানে আবূ দাউদ; হাদীস ১৫১৮)
এজন্য জালালুদ্দীন রূমী রহ. বলেছেন,
گم چوں بینی زود استغفار کن، گم بامر خالق آمد کار کن۔
গম চুঁ বীনী যূদ ইস্তিগফার কুন, গম বাআমরে খালেক আ-মাদ কা-র কুন।
অর্থ : যখনই কোন পেরেশানী দেখ সাথে সাথে ইস্তিগফার করো। কেননা এই পেরেশানী আল্লাহর হুকুমে এসেছে, সুতরাং তার হুকুম মত আমল করো।
৩। তাসবীহ পাঠ করা:
আল্লাহ্ তাআলা জানিয়েছেন যে, ইউনুস (আঃ) তাসবীহ পাঠ করার মাধ্যমে বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, এর দ্বারা মুমিনগণও মুক্তি পাবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
وَذَا النُّونِ إِذْ ذَهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَنْ لَنْ نَقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَى فِي الظُّلُمَاتِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ * فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ وَكَذَلِكَ نُنْجِي الْمُؤْمِنِينَ
الأنبياء/87 – 88
“আর স্মরণ করুন, যুন্-নূনকে যখন তিনি ক্রোধ ভরে চলে গিয়েছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে, আমরা তাকে পাকড়াও করব না। তারপর অন্ধকারে থেকে তিনি لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ (আপনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই; আপনি কতইনা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি) বলে ডাকলেন। তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করেছিলাম। আর এভাবেই আমরা মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।”[সূরা আল-আম্বিয়া, ২১: ৮৭-৮৮]
সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “মাছের পেটে থেকে মাছওয়ালা (অর্থাৎ ইউনুস আঃ)-এর দোয়া:
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
(আপনি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই; আপনি কতইনা পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছি)
এটি দিয়ে কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন ব্যাপারে দোয়া করলে আল্লাহ্ তার দোয়া কবুল করেন।”[মুসনাদে আহমাদ (১৪৬২) ও সুনানে তিরমিযি (৩৫০৫), মুহাদ্দিসগন হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
৪। দরূদ পাঠ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পড়া দুশ্চিন্তা ও বিপদ দূর হওয়ার মহান একটি কারণ:
উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: দরূদ শরীফ পর তোমার দুশ্চিন্তা দূর করা হবে এবং তোমার গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হবে।[মুসনাদে আহমাদ (২১২৪২) ও সুনানে তিরমিযি (২৪৫৭); এ ভাষ্যটি তিরমিযির দীর্ঘ হাদীসের অংশ বিশেষ]
ইমাম আহমাদের ভাষ্য হচ্ছে: “উবাই বিন কাব (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! যদি আমি আমার দোয়ার পুরাটুকু আপনার উপরে দুরুদ পড়ি? তিনি বললেন: তাহলে আল্লাহ্ তোমার দুনিয়া ও আখিরাতের দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।”(মুসনাদের মুহাক্কিকগণ হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
৫। দুআ করা
সকাল-সন্ধ্যায় সুস্থতার জন্য দোয়া করা শরিয়তসম্মত; এটি আরও তাগিদপূর্ণ হয় মহামারী বিস্তারের সময়:
১। বেশী বেশী এই দুয়াটি পড়া
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُوْنِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الْاَسْقَامِ
অর্থ : হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার নিকট ধবল, মস্তিষ্ক বিকৃতি, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
ফযীলত : হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত দু‘আটি পাঠ করতেন। ( সুনানে আবু দাউদ (৫০৮৮) মুসনাদে আহমাদ (৫২৮), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৮৬৯)] )
২।প্রতিদিন বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব তিনবার করে নিম্নোক্ত দু‘আ পাঠ করা-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ.
অর্থ : (আমি শুরু করছি) আল্লাহর নামে যাঁর নামের সঙ্গে আসমান যমীনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষ দলতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
ফযীলত : হযরত উসমান রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে এই দু‘আটি পাঠ করবে সে আকস্মিক কোন বিপদে পতিত হবে না। (সুনানে আবূ দাউদ; হাদীস ৫০৮৮)
৩. নিচের সূরা তিনটি তিনবার করে পাঠ করা-
قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ. اللهُ الصَّمَدُ. لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ. وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا اَحَدٌ
অর্থ : বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেইতাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ. مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ. وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ. وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ. وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
অর্থ : বল, আমি শরণ নিচ্ছি ঊষার স্রষ্টার তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, রাত্রির অন্ধকারের অনিষ্ট হতে যখন তা গভীর হয়, সমস্ত নারীদের অনিষ্ট হতে যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয় এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতে যখন সে হিংসা করে।
قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ. مَلِكِ النَّاسِ. اِلٰهِ النَّاسِ. مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ. الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ. مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ
অর্থ : বল, আমি শরণ নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, মানুষের অধিপতির, মানুষের ইলাহের, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে জিনের মধ্য হতে এবং মানুষের মধ্য হতে।
ফযীলত : হযরত খুবাইব রাযি. বলেন, একদা আমরা প্রকট অন্ধকারাচ্ছন্ন বৃষ্টি ভেজা রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্ধানে বের হলাম, এ উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন। ইত্যবসরে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। এপর আবার বললেন, বলো। আমি এবারও কিছুই বললাম না। এরপর আবার বললেন, বলো। এবার আমি বললাম, আমি কি বলবো? বলো, قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ (সূরা ইখলাস) এবং মু‘আউওয়াযাতাইন (সূরা ফালাক এবং সূরা নাস)। এ সূরাগুলো সকাল-সন্ধ্যা তিনবার পাঠ করবে। সবকিছু থেকে এগুলো তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। (সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৩৫৭৫)
৪। নিম্নের দু‘আটি সাতবার পাঠ করা-
حَسْبِىَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
অর্থ : আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি তাঁর ওপরই ভরসা করি এবং তিনি মর্যাদাবান আরশের মালিক।
ফযীলত : হযরত আবূ দারদা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যহ সকাল-সন্ধ্যা যে ব্যক্তি এ দু‘আটি সাতবার পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার ইহকাল পরকাল বিষয়ক দুশ্চিন্তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (আ’মালুল ইয়াউমি ওয়াল-লাইলাহ, ইবনুস সুন্নী; হাদীস ৭১)
৫। সন্ধ্যায় এই দুয়াটা পড়া
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন ভোর হত কিংবা সন্ধ্যা হত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়াগুলো পাঠ করা বাদ দিতেন না:
اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي، وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي
[মুসনাদে আহমাদ (৪৭৮৫), সুনানে আবু দাউদ (৫০৭৪), সুনানে ইবনে মাজা (৩৮৭১)]
৬। এই দুয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা
اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
[সুনানে তিরমিযি]
৭।নিম্নের দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করা-
لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থ : আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; আপনি নির্দোষ; আমি গুনাহগার। (সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৮৭)
ফযীলত : হযরত ইউনুস আ. এই দু‘আর মাধ্যমে দু‘আ করে মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, এবং মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন, তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহ্বান করলেন- لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ। অতঃপর আমি তাঁর আহ্বানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনিভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি। (সূরা আম্বিয়া; আয়াত ৮৭-৮৮)
৮।. কাউকে বিপদাক্রান্ত কিংবা রোগাক্রান্ত দেখলে পাঠ করা-
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ عَافَانِىْ مِمَّا ابْتَلَاكَ بِه وَفَضَّلَنِىْ عَلٰى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيْلًا
অর্থ : আমি আল্লাহ তা‘আলার প্রসংশা জ্ঞাপন করছি যিনি তুমি যে বিপদে বা রোগে আক্রান্ত হয়েছো তা হতে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং আমাকে অনেক সৃষ্টজীব হতে ভালো অবস্থায় এবং সসম্মানে রেখেছেন।
ফযীলত : হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনো বিপদাক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখে দু‘আটি পাঠ করবে সে কখনো ওই বিপদে আক্রান্ত হবে না। (সুনানে তিরমিযী; হাদীস ৩৪৩২)
৩ উপায়-উপকরণ গ্রহণ করা:
যেমন কোয়ারেন্টাইন ও চিকিৎসা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শে এর প্রমাণ রয়েছে— চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ দেয়ার মধ্যে, রোগ থেকে সুরক্ষা গ্রহণের ইশারার মধ্যে, অসুস্থকে সুস্থের সাথে একত্রিত না করার নির্দেশের মধ্যে এবং প্লেগরোগে আক্রান্ত এলাকার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ না করার নির্দেশের মধ্যে।
১. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। আল্লাহ্ তাআলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যে রোগের ঔষধ সৃষ্টি করেননি; কেবল একটি রোগ ছাড়া সেটি হল— বার্ধক্য।” [মুসনাদে আহমাদ (১৭৭২৬), সুনানে আবু দাউদ (৩৮৫৫), সুনানে তিরমিযি (২০৩৮) ও সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৪৩৬); আলবানী সহিহ সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
২. আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “উটের মালিক যেন অসুস্থ উটগুলোকে সুস্থ উটগুলোর মাঝে প্রবেশ না করায়।” [সহিহ বুখারী (৫৭৭১) ও সহিহ মুসলিম (২২২১)]
৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: “যদি তোমরা কোন এলাকায় প্লেগরোগ আক্রান্তের কথা শুন তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে আছ সেখানে প্লেগরোগ দেখা দেয় তাহলে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।”[সহিহ বুখারী (৫৭২৮) ও সহিহ মুসলিম (২২১৮)]
মহামারী দেখা দেয়ার যে কারণ রয়েছে, বর্তমান পৃথিবীতে মহামারি দেখা দেয়ার সবগুলো কারণই বিদ্যমান। অশ্লীলতা-বেহায়াপনায় চারদিক যেমন সয়লাব, তেমনি পৃথিবীজুড়ে চলছে ওজনে কম দেয়ার হিড়িক।
গরীব অসহায় মানুষের ক্ষুধা ও দারিদ্রতার চিৎকারে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠলেও সে আওয়াজ পৌছে না সমাজের বিত্তশালীদের কানে। সম্পদশালীরা তাদের মালের যথাযথ যাকাত আদায় করছে না। অথচ ওই ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ। যার কিছুটা দিলেই গরবি-অসহায়ের অভাব মিটে যায়। যখনই মানুষ জাকাত দেয়া থেকে বিরত হয়, তখনই মহান আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে বৃষ্টি দেয়া বন্ধ রাখেন। মহামারী ইত্যাদি দেখা দেয়।
হে আল্লাহ! আমাদেরকে সমস্ত গর্হিত কাজ ও মহামারি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
লেখকঃ
দারুল হাদীস (এম.এ, ইসলামিক স্টাডিস)
জামিয়াতুল আবরার বসুন্ধরা ঢাকা।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান