জিলহজ্জের প্রথম দশকের করণীয় (পর্ব এক)

আল্লাহ তায়ালা একটি বছরে বারটি মাস নির্ধারণ করে রেখেছেন। সে হিসেবে আমরা বছরের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই আমাদের মাঝে আগমন করছে বছরের শেষ মাস পবিত্র জিলহজ্জ। এ মাসটি আমাদের জন্য একটি মহিমান্বিত ও ফজিলত পূর্ণ মাস। কেননা আল্লাহ তায়ালার বিধান অনুসারে চারটি মাস পবিত্র ও সম্মানীত। তার মধ্যে অন্যতম একটি হল জিলহজ্জ মাস। সূরা তাওবাহ এর ৩৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমীনের সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনায় মাস বারটি। তার মধ্যে চারটি হুরুম তথা নিষিদ্ধ/সম্মানিত মাস। আর এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন”।

বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন – বারো মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক- জিলকদ, জিলহজ্ব, মুহাররম আর চতুর্থটি হল রজব, যা জুমাদীউল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস”।

হযরত আবু বকর আল-জাসসাস (রহঃ) বলেন, এই চারটি মাসকে ‘হুরুম’ তথা সম্মানিত বলার কারণ দুটি। প্রথম কারণ- এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম। যা মুশরিকরাও মানত। দ্বিতীয় কারণ- অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে গোনাহের পরিণতি বেশি ভয়াবহ এবং এবাদতের প্রতিদান অনেক বড়। প্রথমোক্ত বিধানটি সর্বসম্মতিক্রমে রহিত হয়ে গেছে। দ্বিতীয়টি আপন অবস্থায় বহাল আছে। এই চারটি মাসের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এই মাসগুলোতে ইবাদতে অভ্যস্ত হলে অন্য মাসেও ইবাদতের প্রতি আগ্রহ অটুট থাকবে। আর এই মাসে গুনাহ ও মন্দ কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারলে অন্য মাসেও এর থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। কারণ প্রতিটি জিনিসের স্বজাতের প্রতি আকর্ষণ থাকে, ভিন্ন জাতের প্রতি বিকর্ষণ। অতএব এ মাসে বেশি ইবাদতকারী অন্য মাসেও ইবাদতের প্রতি আকৃষ্ট হবে। আর নাফরমান গুনাহের প্রতি বেশি ঝুঁকবে। (আহকামুল কুরআন)

উপরে বর্ণিত আয়াতে কারীমা ও হাদীসের আলোকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাসগুলোর সংখ্যা বারটি’ অর্থাৎ যেদিন আল্লাহ তায়ালা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই আল্লাহ তায়ালার নিকট মাসের সংখ্যা বারটি। তার মধ্যে চারটি মাস হল সম্মানীত মাস যাতে পাপ কাজ থেকে সবাই বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঝগড়া-বিবাদসহ রক্তপাত হারাম করা হয়েছে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এখানে বছরের সমস্ত মাসকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং আল্লাহ পাকের এ উক্তির মর্মার্থ হচ্ছে- তোমরা সমস্ত মাসে পাপকার্য থেকে বিরত থাকবে, বিশেষ করে এই চার মাসে। কেননা, এগুলো বড়ই মর্যাদা সম্পন্ন মাস। এ মাসগুলোতে পাপ শাস্তির দিক দিয়ে এবং পুণ্য বা সাওয়াব প্রাপ্তির দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন যে, এই সম্মানিত মাসগুলোতে পাপের শাস্তির বোঝা বেড়ে যায় ।হযরত ইমাম শাফিঈ (রঃ) এবং আলেমদের একটি বৃহৎ দলের মতে এই মাসগুলোর মধ্যে কেউ কাউকেও হত্যা করলে ওর রক্তপণও কঠিন হবে। এ রকমই হারাম শরীফের ভিতরের হত্যা ও নিকটতম আত্মীয়ের হত্যা। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

বর্তমানে হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধের সূচনা করা যাবে কিনা এ নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। প্রথম মত হচ্ছে- এসব মাসে যুদ্ধ করার যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা রহিত হয়ে গেছে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “সুতরাং তোমরা তার মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম করো না”। আবার আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশও দিয়ে বলছেন- “এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে”।

আসলে এখানে বিষয়টি অনেক ব্যাপক। যদি হারাম মাসে যুদ্ধ করা নিষেধ থাকত তাহলে তা শর্তযুক্ত করে দেয়া হত। কিন্ত এখানে কোন শর্ত যুক্ত করা হয়নি। তাছাড়া নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুলক্বাদা মাসে তায়েফ অবরোধ করেছিলেন যা সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে একটি মাস। আবার সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে এসেছে- যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাওয়াল মাসে হাওয়াযেন গোত্রের বিরুদ্ধে অভিযানে বের হন। তারা পরাজিত হয়। তাদের মধ্যে যারা প্রাণে বেঁচে যায় তারা পালিয়ে তায়েফে আশ্রয় গ্রহণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গমন করেন এবং চল্লিশ দিন পর্যন্ত তায়েফ অবরোধ করে রাখেন। তারপর ওটা জয় না করেই তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাহলে জানা গেল যে, তিনি হারাম মাসে তায়েফ অবরোধ করেছিলেন।

দ্বিতীয় মত হচ্ছে- হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ করা হারাম। এ বিধান রহিত হয়নি। সূরা বাকারার ১৯৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “নিষিদ্ধ মাসের পরিবর্তে নিষিদ্ধ মাস এবং নিষিদ্ধ মাসেও বদলার ব্যবস্থা রয়েছে ঐ অবস্থায় যদি কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করে, তবে তোমরাও তার প্রতি সে পরিমাণ অত্যাচার কর যতটুকু সে করেছে। আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন”।(তাফসীরে ইবনে কাসীর)

ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন, মূলত যুদ্ধ জারি রাখা এক কথা এবং যুদ্ধের সূচনা করা আরেক কথা। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাই সবচেয়ে ভাল জানেন। এ সম্পর্কে যেসব হাদীস এসেছে সেগুলো আমি সীরাত এর কিতাবে বর্ণনা করেছি। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাপেক্ষা বেশী জ্ঞানের অধিকারী।

 আল্লাহ শপথ করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা সময় ছাড়া শপথ করেন না। তাই জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার শপথ করে সূরা ফজরের শুরুতেই বলেছেন- “শপথ ফজরের ও দশ রাতের”।

প্রথমত এখানে ফজর তথা প্রভাতকাল বলতে জিলহজ্জ মাসের দশ তারিখের প্রভাতকালকে বুঝানো হয়েছে বলে মত দিয়েছেন হযরত ইকরিমা (রাঃ) ও মুজাহিদ (রহঃ)। বিশেষ করে এদিনের শপথ করার কারণ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক দিনের সাথে একটি রাত সংযুক্ত করে দিয়েছেন, যা ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী দিনের পূর্বে থাকে। কিন্ত একমাত্র জিলহজ্জের দশম দিন যার সাথে কোন রাত নেই। কারণ এর পূর্বের রাত এই দিনের রাত নয়। বরং আইনত তা হচ্ছে আরাফার রাত। এ জন্যই কোন হাজী সাহেব যদি ইয়াওমে আরাফা তথা জিলহজ্জের নবম তারিখে দিনের বেলায় আরাফার ময়দানে হাজির না হতে পারেন এবং সামনের রাতের প্রভাতকালের পূর্বে কোন এক সময়ের মধ্যেই পৌঁছে যান তাহলে আরাফাতে অবস্থান ও হজ্জ শুদ্ধ হয়ে যায়। আর এজন্যই আরাফার দিনের রাত দুটি। একটি পূর্বে ও একটি পরে। (তাফসীরে কুরতুবী)

দ্বিতীয়ত এখানে দশ রজনী দ্বারা জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ রাত্রিকে বুঝানো হয়েছে, যেমন এ কথা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত ইবনে যুবায়ের (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) এবং পূর্ব ও পর যুগীয় আরো বহু গুরুজন বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, যে, এর দ্বারা মুহররমের প্রথম দশদিনকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো রামদ্বান মাসের প্রথম দশ দিন। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সঠিকতম। অর্থাৎ জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

 আল্লাহর স্মরণ করা।

একজন মুমিন মুসলমান সারা বছর, সারা জীবন ও সদা সর্বদা আল্লাহর স্মরণে লিপ্ত থাকাই হচ্ছে মুত্তাকীর পরিচয়। কিন্ত বিশেষ করে যেহেতু হারাম মাস তথা সম্মানিত মাস সমুহের মধ্যে জিলহজ্জ মাস একটি এবং তার প্রথম দশ দিন খুব ফজিলত পূর্ণ তাই এই দিন সমুহে মহান আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। সূরা হজ্জের ২৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও”।

এখানে নির্দিষ্ট দিনগুলো দ্বারা মূলত কোন দিন? সে বিষয়ে অনেকগুলো মতামত পাওয়া যায়। যেমন তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে এগুলো হচ্ছে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। আবার তাফসীরে মুয়াস্সারে বলা হয়েছে জিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ এবং পরবর্তী তিন দিনকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো হলো কুরবানীর দিন এবং পরবর্তী তিন দিন। আবার ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মাযহাব হচ্ছে আরাফার দিন, ঈদুল আযহার দিন এবং এর পরবর্তী একদিনকে বুঝানো হয়েছে। মূলত সবাই জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফজিলতের কথাই বলেছেন। অতএব আমাদের উচিত হবে এই দিনগুলোতে গাফলতি না করে আল্লাহর স্বরণে কাটিয়ে দেওয়া।

নফল রোজা রাখা।

জিলহজ্জ মাসের প্রথম দিন থেকে নবম দিন পর্যন্ত রোজা রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা (আঃ) কে ৪০ টি রোজা রাখার যে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই রোজাগুলো পূর্ণ হয়েছিল জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনে। সূরা আরাফের ১৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “আমি মূসা (আঃ) এর সাথে ওয়াদা করেছি ত্রিশ রাত্রির এবং তা পূর্ণ করেছি আরো দশ দ্বারা, বস্তুতঃ এভাবে চল্লিশ রাতের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেছে। আর মূসা তাঁর ভাই হারুনকে বললেন, আমার সম্প্রদায়ে তুমি আমার প্রতিনিধি হিসাবে থাক ও তাদের সংশোধন করতে থাক এবং হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীদের পথে চলো না”।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদে এসেছে- এখানে ত্রিশরাত বলতে জিলক্বাদ মাসের ত্রিশরাত আর দশ রাত বলতে জিলহজ্জের দশ রাত। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও মুজাহিদসহ প্রমুখ মুফাসসিরগণ বলেন, এ হিসেবে হযরত মূসা (আঃ) এর নির্দিষ্ট সময় কুরবানীর দিন পূর্ণ হয়। এ দিনেই মূসা আল্লাহ তায়ালার সাথে কথা বলেন আর এ দিনেই আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর দ্বীন ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ করে দেন। যেমন সূরা মায়িদার ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”।

সুনানে তিরমিজী ও বায়হাকী শরীফে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোর (নফল) ইবাদাত আল্লাহ তায়ালার নিকট জিলহাজ্জ মাসের দশ দিনের ইবাদাত হতে বেশী প্রিয়। এই দশ দিনের প্রতিটি রোজা এক বছরের রোজার সমকক্ষ এবং এর প্রতিটি রাতের ইবাদাত ক্বদরের রাতের ইবাদাতের সমকক্ষ”।

সুনানে আবু দাউদ শরীফে এসেছে- “হযরত হুনাইদাহ ইবনে খালিদ (রহঃ) তার স্ত্রী হতে এবং তিনি নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন এক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিলহাজ্জ মাসের নয় তারিখ পর্যন্ত, আশূরার দিন, প্রত্যেক মাসের তিনদিন এবং প্রতি মাসের প্রথম সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন”।

সুনানে আন-নাসায়ীতে এসেছে- “হযরত হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চারটি আমল নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো পরিত্যাগ করতেন না। আশুরার দিনের রোজা, জিলহজ্জ মাসের নয় দিনের রোজা, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের রোজা এবং ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ”।

 শরীরের অবাঞ্ছিত চুল ও নখ না কাটা।

শরীয়তের দৃষ্টিতে পুতও পবিত্র থাকার জন্য প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্কদের চল্লিশ দিনের ভিতরে শরীরের অবাঞ্ছিত চুল ও নখ কাটা সুন্নাত। তবে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের মধ্যে এগুলো না কাটা সুন্নাত। তবে যদি চল্লিশ দিন অতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে অবশ্যই কেটে নিবেন। সুনানে আন-নাসায়ী শরীফে এসেছে- “হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন (জিলহজ্জ মাসের) প্রথম দশক শুরু হয় এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তার চুল ও শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে (তথা না কাটে)”।

সুনানে আবু দাউদ শরীফে এসেছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমি কুরবানীর দিন সম্পর্কে আদিষ্ট হয়েছি (অর্থাৎ এ দিবসে কুরবানী করার আদেশ করা হয়েছে।) আল্লাহ তায়ালা তা এ উম্মতের জন্য ঈদ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানীহা থাকে অর্থাৎ যা শুধু দুধ পানের জন্য দেওয়া হয়েছে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না বরং সেদিন তুমি তোমার চুল কাটবে (মুন্ডাবে বা ছোট করবে), নখ কাটবে, গোঁফ এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর কাছে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে”।

আল্লাহ তায়ালা কত যে মহান তার কোন সীমানা নেই। যারা আর্থিক ভাবে সামর্থ রাখে না পবিত্র কাবা ঘরের সামনে গিয়ে হজ্জ পালন করবে বা কুরবানী দিয়ে ঈদের খুশি উদযাপণ করবে।তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি সুন্নাত পালন করার মাধ্যমে ঈদের খুশি প্রকাশ করা আবার হাজীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করার সুযোগ দান করে দিলেন। হাজীগন যেভাবে ইহরাম বেঁধে হজ্জের নিয়ত করার পর থেকে শরীরের অবাঞ্ছিত চুল বা নখ কাটা থেকে বিরত থাকে ঠিক সেভাবেই গরিবরাও যেন একি অবস্থায় থেকে মনের দিক থেকে খুশী থেকে সবার সাথে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে পারে সেই মহান সুযোগ দান করে দিলেন।

 আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল।

বান্দার যে কোন নেক আমল আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়। কিন্ত এটা যখন কোন বিশেষ দিনে বা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকে তখন এটা আল্লাহর কাছে আরো অধিক পছন্দনীয় হয়ে যায়। সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- এই দিনগুলির (অর্থাৎ জিলহজ্জের প্রথম দশকের) তুলনায় এমন কোন দিন নেই, যাতে কোন সৎকাজ আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে কোন মুজাহিদ যদি তার জান মালসহ বের হয়ে যায় এবং তার কোন কিছুই নিয়ে আর ফিরে না আসে”।

আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত এই দিনগুলোর মধ্যে যেন সব ধরনের পাপ কাজ ছেড়ে দিয়ে নেক আমল করে তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি সেই তৌফিক তিনি আমাদের দান করুন। (আমিন)

চলবে ইনশা আল্লাহ

লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান 
আরও সংবাদ