অক্সিজেনের উদ্দিপনায় হরিপুরে নিমের বাতায়ন

রাস্তার পাশে নিম গাছ রোপন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই। ছবি:: আরিফ হাসান

হরিপুরের স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘অক্সিজেন’ এর উদ্যোগে ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, সৌন্দর্যবর্ধন ও দেশে ঔষধি গাছের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষা তোররা সাতাহাজারা থেকে বসালগাঁও ক্যাম্প পর্যন্ত নিম গাছ রোপন করা হচ্ছে।

নিম গাছকে বলা হয় গ্রামের ডাক্তার খানা। আধুনিকতার নামে আজ বাংলাদেশে ঔষধি গাছ বিলপ্তির পথে। অক্সিজেন চেষ্টা করছে এই বিলুপ্ত প্রায় নিম গাছটিকে হরিপুরের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার। প্রতিবছর চলবে অক্সিজেনের এই মিশন। গত মাসেও অক্সিজেন হরিপুরে কৃষ্ণচূড়ার লাল-সবুজ মিশন করেছে। হরিপুর বটতলী থেকে হরিপুর ফায়ার সার্ভিস পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপন করেছে।

স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘অক্সিজেন’ সভাপতি মোজাহেদুর ইসলাম ইমন বলেন, বর্ষাকাল অর্থাৎ জুন-জুলাই মাস গাছের চারা রোপণের উৎকৃষ্ট সময়। দিনদিন ঔষধি গাছগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নিমের বহুবিধ গুণের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। সকলেই জানি নিম একটি অভূতপূর্ব ঔষধি গাছ। প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের জন্য এত উপকারী গাছ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি। এজন্য বলা হয় নিম পৃথিবীর সবচেয়ে দামি।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি নিমতলে বিশ্রাম নেয় কিংবা শুয়ে ঘুমায় তাহলে তার বিমার কমে যায় সুস্থ থাকে মনেপ্রাণে শরীরে অধিকতর স্বস্তি আসে। নিম মাটির ক্ষয় ও মরুময়তা রোধ করে। কৃষি বনায়ন বা কৃষি জমির আইলে নিম গাছ লাগালে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। নিম ফল পাখির প্রিয় খাদ্য। বর্ষায় নিম ফল পাকলে শালিকসহ আরও অনেক পাখি এসে নিম গাছে ভিড় জমায়। নিম থেকে উৎপাদিত হয় প্রাকৃতিক প্রসাধনী,ওষুধ,জৈবসার ও কীটবিতাড়ক উপাদান। নিম স্বাস্থ্য রক্ষাকারী, রূপচর্চা, কৃষিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। নিমকাঠ ঘূণে ধরে না, নিমের আসবাবপত্র ব্যবহারে ত্বকের ক্যান্সার হয় না। নিম পানি স্তর ধরে রাখে শীতল ছায়া দেয় ও ভাইরাসরোধী। এজন্য আমরা হরিপুর উপজেলায় প্রতি বছর নিম গাছ রোপন করার পরিকল্পনা করেছি।

অক্সিজেন সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান সাগর বলেন, একটু ভেবে দেখেছেন কি! একটি গাছ পঞ্চাশ বছরে যে উপাদান ও সেবা দিয়ে থাকে তার আর্থিকমূল্য প্রায় চল্লিশ লাখ টাকা। একটি গাছ এক বছরে দশটি এসির সমপরিমাণ শীতলতা দেয়, ৭৫০ গ্যালন বৃষ্টির পানি শোষণ করে, ৬০ পাউন্ড ক্ষতিকর গ্যাস বাতাস থেকে শুষে নেয়। এক হেক্টর সবুজ ভূমির উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ চলাকালে প্রতিদিন গড়ে নয়শ’ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং ৬৫০ কেজি অক্সিজেন প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়। এছাড়াও বৃক্ষরাজি ৮৯ থেকে ৯০ ভাগ শব্দ শোষণ করে দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। আসুন আমরা সকলে অধিক পরিমান বৃক্ষরোপণ করি।

উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হরিপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিম, ৫নং হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মংলা, হরিপুর বশালগাঁও ক্যাম্পের সকল বিজিবি সদস্যসহ স্থানীয় সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গ।

এশিয়াবিডি/আরিফ/ মুবিন 

আরও সংবাদ