পাজড়

তখন ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি। শনিবার ছুটির পর বাড়ি ফিরছি। যথারীতি আমার সঙ্গী বিকাশ আর মৌসুমী। বেশ কয়েকদিন ধরেই লক্ষ্য করেছিলাম দত্ত বাড়ীর আম গাছে একটা বড় মৌচাক ঝুলে আছে। আমি বললাম, কিরে মধু খাবি ?
— মধু? কোথায় রে? মৌসুমী জিজ্ঞেস করে।
— ঐ যে! দত্তদের আমগাছটা দেখ!
— বাব্বা! কি বিরাট মৌচাক রে! পাড়বি কী করে?
— ওই মৌচাকে হাত দিস না। দত্ত গিন্নি মৌমাছির থেকেও জোরে তেড়ে আসবে। এবারে বিকাশ মুখ খুলল।
— ধুস! সবাই এখন দিবানিদ্রায় ব্যস্ত। কেউ এদিকে আসবেনা। একথা বলেই আমি একটা বিরাট ঢিল নিয়ে মৌচাকের দিকে ছুঁড়লাম।

ঢিলটা একটুর জন্য মৌচাক মিস করল। আর তখনই অনুভব করলাম ভুল হয়ে গেছে। উড়ন্ত ঢিলটা সোজা দত্তবাড়ির টিনের চালের দিকেই উড়ে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে টিনে পড়ছেনা দেখে যেই খুশি হতে যাব, সেই দত্তবাড়ির বিশাল কালো কুকুরটা মরনপণ চিৎকার দিয়ে পা’য়ের নিচের মাটি কাঁপিয়ে দিল। বুঝলাম ঢিলটা কুকুরটার গা’য়েই চুমু দিয়েছে।

দৌড়টা প্রথমে বিকাশই দিল। ক্ষণপর মৌসুমী আর আমি। আবার ভুল করলাম; কুকুরটার দৃষ্টি আকর্ষিত হলো তাতে। কি করে যেন বুঝে গেল কাজটা আমরাই করেছি। ঘেউ ঘেউ করে তীব্র বেগে ধাওয়া করল আমাদের।

বিকাশটা বরাবরই বুদ্ধিমান আর স্বার্থপর ছিল। দৌড়ের মধ্যে থেকেই বানরের মতো এক লাফে রায়বাড়ির জামগাছটার একটা ডাল ধরে আরেক লাফে চড়ে বসল। আমিও তাকে অনুকরণ করতে যাব এমন সময় মৌসুমীর কথা মনে পড়লো। জানি সে গাছে চড়তে জানেনা। তাই স্বার্থপর না হয়ে ধীর গতির মৌসুমীকে একটা ভরসার দেয়ালের মতো আগলে রেখে দৌড়াতেই থাকলাম।

কুকুরটার থামার কোন লক্ষণ নেই। এর মধ্যে রায়বাড়ির কুকুর দু’টোও বেরিয়ে এসে বুঝে না বুঝে তাদের সম্পদায়কে সহযোগীতার পা’ বাড়িয়ে দিল।

ঘেউ ঘেউ কেউ কেউ শব্দের মাত্রা বাড়তেই আরও আতঙ্কিত হলাম। ঠাকুরবাড়ির কুকুরটাও এসবে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য সামনের দিক থেকে ধেয়ে আসতে লাগলো। তার পশ্চাদদেশে আমি যে সিরিঞ্জ ভরা পেট্রল দিয়েছিলাম একদিন- সে কথা ভুলেনি নিশ্চয়।

বাঁচার উপায় না পেয়ে রাস্তার পাশের ডোবায় ঝাঁপ দিল মৌসুমী। ঝাঁপ দেওয়ার মুহূর্তে আমার হাত ধরে এমন টান দিল- আমিও উড়ে গিয়ে পড়লাম। মট্ করে একটা শব্দ হলো, চিৎকার দিয়ে উঠে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল মৌসুমী।

পাড়ার লোকজন যখন আমাদের উদ্ধার করল তখন আমার নিম্নাংশে রক্ত ঝরছে। ডাক্তার অবশ্য আমার উরু থেকে মৌসুমীর হাতের ভাঙ্গা চুড়ির টুকরো বের করতে বেশ হিমশিম খেয়েছিলেন। কিন্তু কাউকে না জানিয়েই আমি কোনো হিমশিম না খেয়েই আমার আরেক জায়গা থেকে আরেক টুকরো ভাঙ্গা চুড়ি বের করেছিলাম।

মৌসুমীর ভাঙ্গা পাজড় জোড়া লেগেছে যে বেলায়। তার বেশ পরে আমরাও জোড়া লেগে গেলাম। তবে এখনো রাত এলে মোসুমীর পাজড় ভাঙ্গার ভয় থেকেই যায়। কিন্তু ভাঙ্গা চুড়ির ভয় আমার আর নেই।

লেখকঃ কবি, প্রাবন্ধিক
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ