ঘাতক

আজ রবিবার বিধায় রীনার উপর প্রচুর চাপ। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের অফিস ছুটি হলেও জামাকাপড় কাচাকুচি, ঘর পরিষ্কার হরেকরকম কাজ রবিবার ধরেই করতে হয়। তার উপর কাজের মেয়েটা আজ আসেনি।

সুমন আর বাবুনকে চা, জলখাবার খাইয়ে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে রীনা। বাবুনকে আঁকার ক্লাসে বসিয়ে বাজার করে আসবে সুমন। তারপর রান্না। তাই সুমন ফেরার আগেই জামাকাপড় কাচার কাজটা করে নিতে হবে।

জামাকাপড় ধোয়ে নিয়ে ছাদে গেছে রীনা। আজ আর একটা দঁড়িতে হবেনা। অনেক জামাকাপড়। তাই একটা বড় দঁড়ি নিয়ে এসেছে সে। দঁড়ির একটা খুঁট বেঁধে আর একটায় বাঁধতে যাবে এমন সময় রীনার নজরে এলো পাশের ফ্ল্যাটের একটা জানালা থেকে কে যেন হাতের ইশারায় তাকে কিছু বলতে চাইছে! আরে এতো তাদের কাজের মেয়ে লতা!!

কিছু বুঝে আসার আগেই রীনা দেখল লতাকে কেউ হেচকা টানে পিছনে নিয়ে গেল। তারপর জানালার পর্দা টেনে দিল। রীনা জানে ঐ ফ্ল্যাটে দু’দিন আগে নতুন ভাড়াটে উঠেছে। মাত্র দু’জন থাকেন ওখানে- ষাট উর্ধ্বো বয়সের এক বৃদ্ধ আর তার এক নাতনি। অবিবাহিত নাতনির চাকরির সুবাধে তাদের এখানে আসা। কিন্তু লতা ওখানে কি করছে? রীনার সংবিৎ ফিরতেই বুঝলো- লতা ওখানে যাই করুক না কেন তার সাথে খারাপ কিছু হচ্ছে নিশ্চয়!

দৌড়ে নীচে নেমে এলো রীনা। সুমন এখনো ফিরে আসেনি তাই সে বাধ্য হলো পাশের ফ্ল্যাটের অপর্ণা বৌদি কে ডাকতে। এক এক করে বেশ কয়েকজন জড়ো হয়ে গেল কিছুক্ষণের মধ্যে।

দরজাটা বৃদ্ধই খোললেন। নাতনি অফিসে গেছে বিধায় উনি শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলেন। লতার কথা শুনে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। তারপর প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সবাইকে সারা ফ্ল্যাট ঘুরে দেখালেন। কিন্তু সারা ফ্ল্যাটে দ্বিতীয় মানুষের কোন অস্তিত্বই পাওয়া গেল না।

নির্বাক হয়ে সবাই নিচে নেমে এলো। লতার বাবার ফোনটাও সুইচ অফ। সবাই রীনাকে ভুল দেখেছে বলে সান্ত্বনা দিয়ে চলে গেলেও সে স্থির হতে পারলাম না কিছুতেই।

অনেকক্ষণ চলে যাওয়ার পরও রীনার মনের অস্থিরতা কিছুতেই কাটেনা। সে আবারও ছাদে গেল। কাপড়গুলো মেলে দিতে দিতে বারবার ঐ ফ্ল্যাটে দৃষ্টি দিল। ব্যতিক্রম কিছুই তার দৃষ্টিতে পড়ল না আর। তবে রীনার মনে হলো সবকিছু যেন কেমন নীরব নিস্তব্ধ।

ঘন্টাখানেক পর লতা এসে জানাল- তার মা অসুস্থ। মাকে ডাক্তার দেখিয়ে আসাতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু রীনা স্পষ্ট বুঝল লতা মিথ্যে বলছে। তার এলোমেলো চুল, ছেড়া কামিজ, পায়ের গোড়ালির রক্ত, মলিন চেহারা, হাটার ভঙ্গি সবকিছুই অন্য ইঙ্গিত করছে।

রীনা কিশোরী লতাকে কাছে টেনে নেয়। বুকে জড়িয়ে ধরতেই লতা কেঁদে উঠে। রীনা তাকে অনেক করে বুঝায় তবুও সে মুখ খোলে না- শুধু থেমে থেমে কেঁপে ওঠে।

দূরে পুলিশের গাড়ির সাইরেন বেজে উঠে। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে লতা। ক্ষণকালের মধ্যেই খবর আসে- পাশের ফ্ল্যাটের ঐ বৃদ্ধ খুন হয়েছেন।

লেখকঃ কবি, প্রাবন্ধিক
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ