অদ্ভুতুড়ে

এই মাসে চাকরি থেকে অনুপমের বাবা রিটায়ার করবেন। সংসারে একমাত্র রোজগার করা মানুষটা হয়ে যাবেন বেকার। সংসারের আয়ও হবে শূন্য। কিন্তু তা বলে তো মানুষের পেটের ক্ষিদে থেমে থাকবেনা। দুই আইবুড়ো বোন, মা, বাবা আর অনুপমকে নিয়ে বেশ বড়ই সংসার।

গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর চাকরির অনেক চেষ্টা করেছে অনুপম। কিন্তু সামান্য এই ডিগ্রি নিয়ে কে তাকে দেবে চাকরি? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মোহনপুর ব্রিজের ফুটপাত ধরে হাঁটছিল সে।

হঠাৎ দেখলো নদীর ধারে পিকনিক করতে আসা মানুষগুলোর জটলা আর চিৎকার। ব্রিজের সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে অনুপম দেখে একটা দশ কি বারো বছরের মেয়ে হঠাৎ আসা জোয়ারের জলে ভেসে গিয়ে প্রায় মাঝনদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। কালক্ষেপন না করে পায়ের জুতোজোড়া খুলে নদীতে ঝাঁপ দিল অনুপম।

আজ নিয়ে তিনরাতে তিনবার হুবহু এই স্বপ্নটা দেখলো সে। সবচেয়ে খারাপ লাগে ঘুম ভাঙার পর। বিশ্রী একটা অবস্থা নিয়ে অদ্ভুত একটা ঝিমমারা আবেশ পরদিন দুপুর পর্যন্ত সারা শরীরময় বিচরণ করতেই থাকে।

ভাবনার অতলে ডুবে চতুর্থদিন রাত নয়টার সময় টিউশনি থেকে যখন বাসায় ফিরছিল তখন হঠাৎ করেই অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে গেল। দেখলো ব্যস্ত চৌরাস্তার মোড়ের লাইটপোস্টের নিচে দাড়িয়ে আছে স্বপ্নের সেই মেয়েটা।

নিজের অজান্তেই কেঁপে ওঠে অনুপম। কিছু বুঝে উঠার আগেই মেয়েটা অনুপমকে দেখিয়ে একটা পেপার কাটিং ফেলে দিল লাইটপোস্টটার নিচে। তারপর মোড় ঘুরেই উদাও হয়ে গেল। এগিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হতে পেপার কাটিংটা তুলে অনুপম দেখলো- একটা চাকরির বিজ্ঞাপন!

অদ্ভুত একটা তাড়না কাজ করলো অনুপমের মাঝে। অবশেষে চাকরিটা যেদিন হলো, সে রাতে আবার সেই স্বপ্নটা দেখলো অনুপম।

পরদিন বিকেলে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড জ্বর এলো অনুপমের এবং অদ্ভুতভাবে দশ মিনিটেই আবার সুস্থ হয়ে গেল। তারপর একটা সম্মোহনী শক্তি তার অজান্তে তাকে টেনে নিয়ে গেল মোহনপুর ব্রিজের ফুটপাতে।

অদ্ভুতভাবে দেখলো নদীর ধারে পিকনিক করতে আসা মানুষের জটলা আর চিৎকার। ব্রিজের সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে অনুপম দেখে একটা দশ কি বারো বছরের মেয়ে হঠাৎ আসা জোয়ারের জলে ভেসে প্রায় মাঝনদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। কালক্ষেপন না করে পায়ের জুতোজোড়া খুলে নদীতে ঝাঁপ দিল অনুপম।

আর সেই মুহূর্তেই ডুবে গেল মেয়েটা। ব্যর্থতা নিয়ে পাড়ে ফিরে এলো। প্রায় ছয় মাইল পরে মেয়েটার লাশ ভেসে উঠেছিল। অনুপম দেখেছিল লাশটা তাই সে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারে- এ মেয়েটা তার স্বপ্নে দেখা সেই মেয়ে!

লেখকঃ কবি, প্রাবন্ধিক
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ