আহলে বাইত (আঃ) এর পরিচয় ও মর্যাদা


আহলে বাইত (আঃ) এর পরিচয়।

আহলে বাইত (আঃ) তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবারের সদস্য কারা তাদের পরিচয় প্রসঙ্গে প্রধানত তিন ধরনের অভিমত পাওয়া যায় ।

প্রথম অভিমত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ।

দ্বিতীয় অভিমত : হযরত আলী (রাঃ), হযরত ফাতিমা (রাঃ), ও হযরত হাসান-হুসাইন (রাঃ)।

তৃতীয় অভিমত : হযরত আলী (রাঃ), হযরত আকীল (রাঃ), হযরত জাফর (রাঃ) ও হযরত আব্বাস (রাঃ) এর পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

তবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে হযরত আলী (রাঃ), হযরত ফাতিমা (রাঃ), হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ)। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে বের হলেন। তাঁর পরনে ছিল কালো নক্শী দ্বারা আবৃত একটি পশমী চাদর। হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ) এলেন, তিনি তাঁকে চাদরের ভেতর প্রবেশ করিয়ে নিলেন। হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) এলেন, তিনিও চাদরের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লেন। হযরত ফাতিমা (রাঃ) এলেন, তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। তারপর হযরত আলী (রাঃ) এলেন তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপরে বললেন (সুরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন) – হে আহলে বাইত! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের হতে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করে তোমাদের পবিত্র করতে চান”।

আহলে বাইতকে ভালোবাসা আল্লাহর হুকুম।

সূরা-শুরা এর ২৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “আল্লাহ তাঁর ঈমানদার ও সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে জান্নাতের এই সুসংবাদই দিয়ে থাকেন। হে আমার হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ডাকার জন্য তোমাদের কাছে নিকট আত্মীয়দের প্রতি ভালো ব্যবহার ছাড়া কোন প্রতিদান চাই না। কেউ কোন ভাল কাজ করলে আমি তার জন্য তাতে কল্যাণ বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, প্রতিদান দানকারী”।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন এই আয়াত নাযিল হলো তখন সাহাবাগণ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁরা আপনার নিকট আত্মীয়? যাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনে উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হযরত আলী (রাঃ), হযরত ফাতেমা (রাঃ), হযরত হাসান ওহুসাইন (রাঃ) এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্য)। (যুরকানী আলাল মাওয়াহীব, দুররে মানসুর, সাওয়ায়িকে মুহরিকা, আশরাফ আলী থানভী সাহেবের লেখা কোরআন শরীফ, তাফসীরে মাজহারী, তাফসীরে নুরুল কোরআন ও মাদারেজুন নাবুয়াতসহ আরো বহু কিতাবে এসেছে)।

হযরত ইমাম শাফী (রহঃ) বলেন, হে রাসূলের পরিবারবর্গ, আপনাদেরকে ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয করা হয়েছে, সেই কুরআনে যা তিনি নাযিল করেছেন। আপনাদের মর্যাদার জন্য এটুকু যথেষ্ট, যে ব্যক্তি আপনাদের ওপর সালাত পাঠ করেনা, তার নামাজ পরিপূর্ণ হয়না। (দিওয়ান)

এখানে ইমাম শাফী (রহঃ) এর কবিতা বা বানীতে দুটি বিষয় লক্ষণীয়- এক: তিনি বলছেন আহলে বাইতকে ভালোবাসা আল্লাহ ফরয করে দিয়েছেন কুরআন শরীফের আয়াত নাযিল করে। আর এই আয়াতটি সুরা শুরা এর ২৩ নম্বর আয়াত হওয়ার সম্ভাবনা বেশিই , যেহেতু অনেকেই সে মত ব্যক্ত করেছেন । দুই: আহলে বাইতের মর্যাদার গর্ব করার জন্য তিনি বলেছেন তাদের উপরে সালাত পাঠ করাই যথেষ্ট, কেননা তাদের উপরে সালাত পাঠ না করলে নামাজ পরিপূর্ণ হয় না। যেমন, আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে যখন দুরূদ শরীফ পাঠ করি, তখন বলি- “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ” এখানে আ-লি মুহাম্মদ অর্থ হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার বর্গ। এবং এই দুরূদ ব্যতীত নামাজের পূর্ণতা আসেনা।

এখানে উল্লেখ্য যারা আহলে বাইত বিদ্ধেষী তারা সুরা শুরা এর এই আয়াতের তাফসীরে বুখারী শরীফের একটি হাদীস দিয়ে বলেন যে এখানে কুরাইশদের কথা বলা হয়েছে । হাদীসটি হচ্ছে- “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা তাকে “ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল ক্বুরবা” সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর (কাছে উপস্থিত) হযরত সাঈদ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) বললেন, এর অর্থ নাবী পরিবারের আত্মীয়তার বন্ধন। (এ কথা শুনে) হযরত ইফনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, আপনি তাড়াহুড়া করে ফেললেন। কেননা কুরাইশের এমন কোন শাখা ছিল না যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আত্মীয়তা ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলেছেন, আমার এবং তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে তার ভিত্তিতে তোমরা আমার সঙ্গে আত্মীয়সুলভ আচরণ কর। এই আমি তোমাদের থেকে কামনা করি”।

সুতরাং আমরা তাদের উত্তরে বলব, এখানে দুটি হাদীসের মধ্যে কোন মত বিরোধ নেই, যেহেতু আহলে বাইতের সদস্যরা কুরাইশ বংশেরী মানুষ। সুতরাং উভয় হাদীসকে আমরা মেনে আহলে বাইতকে ভালোবাসতে কোন বাধা নেই।

আহলে বাইতকে ভালোবাসা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হুকুম। আল জামি-উল-সাগীর ও কাশফ আল খিফাসহ বিভিন্ন কিতাবে এসেছে- “হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা তোমাদের সন্তানকে তিনটি আমল শিক্ষা দাও। এক: তোমাদের নবীর ভালবাসা, দুই: তোমাদের নবীর পরিবার বা আহলে বাইতের ভালবাসা, তিন: কুরআনের শিক্ষা। নিশ্চই কুরআনের বাহকরা হাশরের দিন তাঁর ছায়ার নিচে নবীগন ও আল্লাহর মনোনীতদের সাথে থাকবে যেদিন তাঁর ছায়া ভিন্ন আর কোন ছায়া থাকবে না”।

সুনানে তিরমিজী ও মিশকাত শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে মুহাব্বাত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তার নিয়ামাতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ তায়ালার মুহাব্বাতে তোমরা আমাকেও মুহাব্বাত কর এবং আমার মুহাব্বাতে আমার আহলে বাইতকেও মুহাব্বাত কর”।

হযরত নূহ (আঃ) এর নৌকা ও আহলে বাইত। মুসনাদে আহমদ ও মুসতাদরাকে হাকেমসহ বহু হাদীসের কিতাবে এসেছে- “হযরত আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তোমাদের মধ্যে আমার আহলে বাইতের দৃষ্টান্ত হযরত নূহ আলাইহিস সালামের কিস্তির মত। যে এতে আরোহণ করেছে, সে মুক্তি পেয়েছে। আর যে এটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সে ধ্বংস হয়েছে”।

আহলে বাইতের অনুসরণ করলে পথভ্রষ্ট হবে না। সুনানে তিরমিজী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি তাঁর বিদায় হাজ্জে আরাফার দিন তাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রীতে আরোহিত অবস্থায় বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলতে শুনেছি- হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা ধারণ বা অনুসরণ করলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার কিতাব এবং আমার ইতরাত অর্থাৎ আমার আহলে বাইত”।

হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর মর্যাদা। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ফাতিমা (রাঃ) আমারই অংশবিশেষ, তাঁকে যা কষ্ট দেয় তা আমার প্রতিও কষ্টদায়ক”। সহীহ মুসলিম শরীফের আরেক হাদীসে এসেছে- “হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) কে ডেকে চুপিসারে কিছু বললেন। তখন তিনি কেঁদে দিলেন। পুনরায় চুপিসারে তিনি কিছু বললেন, তখন তিনি হেসে দিলেন। আয়শা (রাঃ) বলেন, আমি ফাতিমা (রাঃ) কে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে চুপিচুপি কি বললেন যে, তুমি কান্নাকাটি শুরু করে দিলে এবং এরপর কি বললেন যে, তুমি হেসে দিলে? ফাতিমা (রাঃ) বললেন, চুপিসারে তিনি আমাকে তাঁর ওফাতের সংবাদ দিলেন, তাই আমি কান্নাকাটি করলাম। অতঃপর চুপিচুপি তিনি বললেন, তাঁর পরিবার-পরিজনদের মাঝে সর্বপ্রথম তাঁর পেছনে যাব আমি, তাই হাসলাম”।

হযরত আলী (রাঃ) এর মর্যাদা। সুনানে তিরমিজী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আল-বারাআ ইবনে আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রাঃ) কে বললেন তুমি আমা হতে, আর আমিও তোমা হতে। অর্থাৎ আমরা পরস্পরে অভিন্ন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত”। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত সা’দ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাবূকের যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী (রাঃ) কে মাদীনায় তাঁর প্রতিনিধি বানিয়ে রেখে গেলেন। হযরত আলী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে মহিলা ও শিশুদের নিকট রেখে যাচ্ছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এতে খুশী হবে না যে, তোমার মর্যাদা আমার কাছে হযরত মূসা (আঃ) এর কাছে হযরত হারূন (আঃ) এর মতো। এ কথা ভিন্ন যে, আমার পর আর কোন নবী আসবেন না”।

হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (রাঃ) জান্নাতের সর্দার। সুনানে তিরমিজী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে অনুমতি চেয়েছেন, হযরত ফাতিমা (রাঃ) জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ) জান্নাতের যুবকদের নেতা”।

হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (রাঃ) এর ভালোবাসার মধ্যে আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসা নিহিত।
সুনানে তিরমিজী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত উসামাহ ইবনে যাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমার কোন দরকারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে, একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উন্মুক্ত করলে দেখা গেলো তাঁর দুই কোলে হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ)। তিনি বললেন, এরা দুজন আমার পুত্র এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ! আমি এদের দুজনকে ভালোবাসি। সুতরাং তুমি তাদেরকে ভালোবাসো। এবং যে ব্যক্তি এদেরকে ভালোবাসে, তুমি তাদেরকেও ভালোবাসো”।

সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত ইয়ালা ইবনে মুররাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হুসাইন (রাঃ) আমার হতে এবং আমি হুসাইন হতে। যে লোক হুসাইনকে ভালোবাসে , আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন”। সুনানে তিরমিজী শরীফের আরেক হাদীসে এসেছে- “হযরত আল-বারাআ ইবনে আবিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হাসান ও হুসাইনকে দেখে বললেন, হে আল্লাহ। আমি এ দুজনকে ভালোবাসি সুতরাং তুমিও তাদেরকে ভালোবাসো”। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হাসান (রাঃ) সম্বন্ধে বলেন, হে আল্লাহ! আমি একে পছন্দ করি, তুমিও তাঁকে পছন্দ কর, আর যে তাঁকে পছন্দ করে তাঁকেও পছন্দ কর”।

তবে আমাদের খুব বেশী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে আহলে বাইতের মর্যাদার বর্ণনা করতে বা তাদের ভালোবাসতে গিয়ে আমরা অন্য কোন সাহাবীদের গালাগালি বা দোষারোপ না করি। কারণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে কোন সাহাবীকে গালি দেওয়া বা দোষারোপ করা যাবে না।

পরিশেষে হযরত ইমাম শাফী (রহঃ) এর কবিতা বা বানী এর বাংলা অনুবাদ দিয়ে শেষ করতে চাই তিনি বলেছেন- আহলে বাইতকে ভালোবাসার নাম যদি রাফিযি তথা শিয়া হয়, তাহলে দুজাহান যেন সাক্ষী থাকে আমি রাফিযি । (মানকিবুশ শাফিই ও তবকাতুশ শাফিইয়াহ)

সুতরাং আমরা আহলে বাইতকে ভালোবেসে সেই জান্নাতে যেতে চাই, যে জান্নাতের সর্দার হবেন হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ)। আমাদের মা, বোন, স্ত্রীর ও মেয়েদেরকে সেই জান্নাতী বানাতে চাই যে জান্নাতের সর্দারনী হবেন হযরত ফাতিমা (রাঃ)। আমরা হুসাইনী মুসলিম হয়ে বেঁচে থাকতে চাই, আমরা ইয়াজিদী মুসলমানী চাই না। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। শুহাদায়ে কারবালার দরজা বুলন্দ করুন। (আমিন)

লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ