কল্পবিজ্ঞানের গল্পঃ ‘পরিবর্তন’

আলমাস শেখ তার মা বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন বিধায় মা বাবা মারা যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তিনি শেখ পরিবারের সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয়ে গেলেন। যুবক বয়সে হঠাৎ করেই অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়ে যাওয়ায় তিনি বখে গেলেন। অলস আর বেহিসাবী হয়ে নিজেকে বিলাসী জীবন যাপনে ডুবিয়ে দিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথ সুগম করে দিলেন।

জমিলা বানুকে যখন তিনি বিয়ে করেন তখন সম্পত্তিটা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। সুন্দরী ও শিক্ষিত স্ত্রী জমিলা বানু স্বামীর এমন বেপরোয়া স্বভাবের পরিবর্তন করতে সর্বাথক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন। এরই মাঝে আলমাস শেখ চার বছরের মধ্যে দুই পুত্র সন্তানের জনক হয়ে গেলেন। বড় ছেলে সাবাজ শেখ ছিল রাজপুত্রের মতো সুন্দর এবং নাদুস নুদুস। কিন্তু ছোট ছেলে জেবাদ শেখ হাড় ঝিরঝিরে, কালো আর খুব কুৎসিত ছিল।

বিয়ের বারো বছর অতিক্রম করার আগেই আলমাস শেখ নিজের বাড়ি ছাড়া বাকি সব সম্পত্তি হারিয়ে ফেলেন। সংসারে অভাব তখন প্রকট আকার ধারণ করলো। আয় রোজগারের কোন পন্থা না থাকায় প্রায়ই অভুক্ত থাকতে হলো শেখ পরিবারকে। জমিলা বানু তার বাবার বাড়ি থেকে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পয়সা এনে সংসার চালাতেন। কিন্তু জমিলা বানুর বাবা মারা যাওয়ার পর পরই সাহায্যের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ভাইয়েরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাবার রেখে যাওয়া সহায় সম্পত্তিতে তাদের নিজেরই সংসার চলে না। অতএব জমিলা বানুকে আর কোন ধরণের সাহায্য করা তাদের দ্বারা সম্ভব নয়।

এবার আলমাস শেখের টনক নড়লো। তিনি ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ নিতে বাধ্য হলেন। বিলাসী জীবন যাপন করে যার অভ্যাস তার দ্বারা এমন কঠিন করা বড়ই কষ্টের। তবুও তিনি সন্তানদের দিকে চেয়ে সব সহ্য করলেন। নিজের কৃতকর্মের জন্য তিনি এখন অনুশোচনাও করেন। কিন্তু যখন ভাবার ছিল তখন ভাবেননি- এখন আর ভেবে কি লাভ।

বড় ছেলে সাবাজের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে তিনি তাকে সাথে করে ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজে নিয়ে গেলেন। আর ছোট ছেলে জেবাদ এত দিনে প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। নিজের ক্ষমতায় সে আর চলাফেরাই করতে পারে না। আলমাস শেখ ছেলেটাকে স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়েছেন বেশ কয়েকবার কিন্তু টাকার অভাবে ভালো কোন ডাক্তারও দেখানো সম্ভব হচ্ছে না।

এ অবস্থায় একদিন সন্ধ্যায় তিনি সাবাজকে নিয়ে কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। আজ কাজ ছাড়তে ছাড়তে বেশ দেরি হয়েছিল বিধায় সবার শেষেই ইট ভাটা থেকে বের হতে হয়েছিল। কিছু দূর আসার পর আলমাস শেখের হঠাৎ মনে পড়লো টিফিন ক্যারিয়ারটা ভুল করে ইট ভাটায়ই ফেলে এসেছেন। একবার ভাবলেন থাক ওটা ওখানে- কাল নিয়ে আসা যাবে। পরক্ষণে ভাবলেন- কাল তো আবার ওটাতে করে দুপুরের খাবার নিতে হবে। আবার এটাও ভাবলেন- অনেক কষ্ট করে টিফিন ক্যারিয়ারটা কিনেছেন তিনি; যদি ওটা কেউ নিয়ে যায় তাহলে তো তার দ্বারা এ মুহূর্তে আরেকটা কেনা অসম্ভব। তাই ছেলেকে নিয়ে তিনি পুনরায় ইট ভাটার দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। যতক্ষণে তারা ওখানে পৌঁছালেন ততক্ষণে পৃথিবীর বুকে পুরোপুরি রাত নেমে গেছে।

বিশাল ইট ভাটাটা এখন শুধুই নিকষ আঁধারে ঢেকে আছে। অথচ সারাটা দিন এখানে কতো কোলাহল আর কর্মব্যস্ততা থাকে। আন্দাজের ওপর নির্ভর করে ছেলেকে নিয়ে তিনি একদম পশ্চিমের প্রান্তের দিকে হাঁটতে লাগলেন। আজ ঐ প্রান্তেই তারা কাজ করেছেন সারাদিন। ওখানে বসেই দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন বাপ বেটা। এই ঝিম ধরা অন্ধকারে ছেলেটা বেশ ভয় পাচ্ছে দেখে তিনি তাকে সান্ত্বনা দিলেন। তারপর বাম হাতে ছেলেকে কাছে টেনে এনে গায়ের সাথে চেপে ধরে হাঁটতে লাগলেন।

টিফিন ক্যারিয়ারটা যেখানে রেখেছিলেন সেখানে গিয়েই আলমাস শেখ চমকে উঠলেন। অদ্ভত কিছু বিষয় তার দৃষ্টিতে ধরা পড়লো। আবছা আলোয় আলোকিত হয়ে আছে বেশ কিছুটা জায়গা। আর সেখানে থলথলে মাংসপিণ্ড আকৃতির দুইটি ভয়ংকর প্রাণি দাঁড়িয়ে আছে তার টিফিন ক্যারিয়ারটা হাতে নিয়ে।

দৃশ্যটা দেখেই ছেলেটা জ্ঞান হারিয়ে ধপ করে পড়ে গেল মাঠিতে। পতনের শব্দের সাথে সাথেই একটা মাংসপিণ্ড কিছু একটা ছুঁড়ে মারলো আলমাস শেখকে লক্ষ্য করে। আলমাস শেখ অনুভব করলেন তীব্র জ্বালাময় একটা হাওয়া এসে লেগেছে তার গায়ে। তিনিও মুহূতেই ঢলে পড়লেন ছেলের পাশে।

রাত ঘনাতেই জমিলা বানু অস্থির হয়ে উঠলেন স্বামী আর সন্তানের জন্য। এত রাতেও তারা বাড়ি না ফেরায় তিনি পাড়া প্রতিবেশীদের বিষয়টা জানালেন। কয়েকজন প্রতিবেশী খোঁজ খবর নিতে নিতে ইট ভাটা পর্যন্ত এলেন। কিন্তু কেউ তাদের কোন খবর দিতে পারলো না বিধায় তারা ব্যর্থতা নিয়েই ফিরে গেলেন।

পরদিন সকালে যখন শ্রমিকেরা কাজে গেল তখনই আসলাম শেখ আর তার ছেলে সাবাজকে পাওয়া গেল ইট ভাটার পশ্চিম প্রান্তে। ছেলেটা মৃত পড়ে আছে মাঠিতে আর আলমাস শেখ চুপচাপ বসে আছেন ছেলের পাশে। কিছুক্ষণের মধ্যেই উপস্থিত লোকজন আবিষ্কার করলো- কি এক অজানা কারণে আসলাম শেখ অন্ধ হয়ে গেছেন। আর আরেকটা অদ্ভুত সত্যি হলো তিনি এখন আর কথাও বলতে পারেন না।

এই ঘটনার কারণে শেখ পরিবারে বিপর্যয় নেমে এলো। কিভাবে এমন হলো কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। আলমাস শেখ বোবা হয়ে যাওয়ায় তার কাছ থেকেও কিছু জানা গেল না। পুলিশও এর কোন ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলো। তবে ছেলেটার গায়ে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি বরং পুলিশের রিপোর্টে তার হার্ট এ্যাটাকের কথাই লেখা ছিল।

যদিও অন্ধত্ব আর বোবাত্ব এই দুটি সমস্যা ছাড়া আসলাম শেখের শরীরে আর কোন সমস্যা ছিল না তবুও ঐ দু’টি সমস্যার জন্য তার চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দিল। জমিলা বানু কি করবেন ভেবে কূল পেলেন না। তার কাছে তো কানা কড়িও নেই যে তিনি স্বামীর চিকিৎসা করাবেন। এমন সময় ইট ভাটার মালিক এগিয়ে এলেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।

ভদ্রলোক আলমাস শেখকে নিয়ে গেলেন শহরে। প্রথমেই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখানো হলো। তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অবাক হয়ে গেলেন। আলমাস শেখের চোখে অন্ধত্বের কোন লক্ষণই তিনি খুঁজে পেলেন না। ঘোষণা করলেন- আসলাম শেখের চোখে কোন সমস্যাই নেই; সবকিছুই স্বাভাবিক আছে। অথচ অদৃশ্য কোন এক কারণে তিনি কিছুই দেখতে পারছেন না।

আলমাস শেখের হঠাৎ বোবা হয়ে যাওয়ার বিষয়টাও একই রকম। এ ক্ষেত্রেও ডাক্তার কোন সমস্যাই খুঁজে পেলেন না অথচ তিনি কথা বলতে পারছেন না সেই রাতের পর থেকে।

ইট ভাটার মালিক কোন সমাধান না পেয়ে আলমাস শেখকে বাড়িতে নিয়ে আসলেন। ছোট ছেলেটাও ততদিনে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে এসেছে। এই মুহূর্তে পৃথিবী মায়া ছেড়ে পরপারে চলে যাবে এমন অবস্থা। শহর ফেরত স্বামীর হতাশা আর ছেলে জেবাদের করুণ চাহনি দেখে দেখে জমিলা বানুর পৃথিবী ক্রমশঃ অন্ধকার হতে থাকে।

এ অবস্থায় এক রাতে হঠাৎ করেই ঘটে গেল অলৌকিক একটা ঘটনা। আলমাস শেখ নিথর হয়ে ঘুমিয়ে আছেন তার বিছানায়। পাশে শুয়ে থাকা জেবাদও ঘুমন্ত অবস্থায় থেমে থেমে শ্বাস নিচ্ছিল। জমিলা বানু তাদের পাশে বসে অঝর ধারায় কাঁদছিলেন। এমন সময় কেউ তাদের দরজার কড়ায় নাড়া দিল। পাড়া প্রতিবেশী কেউ হবে ভেবে তিনি এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুললেন। দরজা খুলেই জমিলা বানু চমকে উঠলেন। দরজার ওপাশে নিজের শরীরের আলোয় নিজেকে আলোকিত করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল মাংসপিণ্ড আকৃতির একটা বিকৃত প্রাণি। নিজের অজান্তেই তার গলা চিরে বিকট এক চিৎকার বেরিয়ে এলো। অতঃপর তিনি জ্ঞান হারিয়ে চৌঁকাঠের ওপর পড়ে গেলেন।

প্রতিবেশীরা যতক্ষণে এসে পৌঁছালেন ততক্ষণে অদ্ভুত প্রাণিটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। তাই তারা এসে সেটাকে আর দেখতে পেলেন না; শুধু চৌঁকাঠের ওপর জমিলা বানুর জ্ঞানহীন দেহটাই পড়ে থাকতে দেখলেন।

জ্ঞান ফিরে পেয়ে জমিলা বানু যা জানালেন তা শুনে কেউ হাসলো, কেউ কাঁশলো, কেউবা আবার কুসংস্কারের ঝুঁড়ি মেলে ধরলো। অবশেষে গ্রামের প্রবীন লোকেরা বিজ্ঞের মতো তাদের সিদ্ধান্ত জানালো- এটা মৃত্যুদূতই ছিল।

শেখ পরিবার যখন এই সমস্যায় ভোগছিল তখন পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে সাবরাং গ্রহের মন্ত্রণা পরিষদে বহিঃ বিশ্বের নব আবৃষ্কিত গ্রহ নিয়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা তৈরির করার জন্য বিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করে তা অনুমোদনের জন্য উপস্থিতির ভোট গ্রহণ করা হয়। ভোট গ্রহণ শেষে প্রস্তাবিত কমিটিই সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।

তিন ঘন্টার মধ্যে মন্ত্রণা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতেই নব গঠিত কমিটির প্রথম সভা মন্ত্রণা পরিষদের সভাকক্ষেই বসে। মন্ত্রণা পরিষদের সভাপতিকেই এই সভার সভাপতি বানানো হয়। তিনি সভা শুরুর অনুমতি দিলে থল থলে মাংশপিণ্ড আকৃতির বর্ণনাকারী উঠে দাড়িয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন-

আপনাদের সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, সাবরাং গ্রহের অনুসন্ধান সেন্টারের একদল তরুণ পৃথিবী নামের একটা গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন কয়েকদিন আগে। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য মন্ত্রণা পরিষদের অনুমতিক্রমে দুই জন বিজ্ঞানীকে পাঠানো হয়েছিল। তাদেরকে বেশ কয়েকটা বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে একটা নির্দেশনা ছিল- কোনভাবেই পৃথিবী নামের গ্রহতে বসবাসরত মানুষের সামনে পড়া যাবে না।

বিজ্ঞানী দু’জন খুব সাবধানে রাতের আঁধারে অবতরণ করেছিলেন নির্জন একটা ইট ভাটায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই র্দুভাগ্যে দেখা দিল। হঠাৎ করে কোথা থেকে এসে দু’জন মানুষ হাজির হয়ে গেল। তাদের এই আকস্মিক উপস্থিতিতে এবং একটা ধপ শব্দে সাবরাং এর বিজ্ঞানী দু’জন খুব ভয় পেয়ে গেলেন। আক্রান্ত হচ্ছেন ভেবে নির্দেশনা ভুলে শত্রু ফাঁকি দেওয়ার বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দিয়ে মুহূর্তেই সেখান থেকে পালিয়ে আসলেন।

বিজ্ঞানী দু’জন সাবরাং এসে রিপোর্ট করেছেন নিয়োজিত কর্মকতার কাছে। আপনারা সবাই জানেন আমাদের এই গ্যাসে মৃত্যু অবধারিত।

রিপোর্ট প্রাপ্তির সাথে সাথেই মন্ত্রণা পরিষদ একজন তথ্য সংগ্রহকারীকে পাঠিয়েছিল। তিনি দ্রুতই তথ্য নিয়ে এসে রিপোর্ট করেছিলেন। আমাদের এই গ্যাসে নাকি সেই দু’জনের মৃত্যু হয়নি। একজন অবশ্য হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মৃত্যুবরণ করছেন কিন্তু অপরজন একটা জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি নাকি অন্ধ আর বোবা হয়ে গেছেন। পৃথিবীর ডাক্তার তার চোখ এবং কন্ঠে কোন সমস্যা খুঁজে পাচ্ছেনা। অথচ ঐ লোকটা চোখেও যেমন কিছুই দেখছেন না মুখেও তেমনই কিছু বলতে পারছেন না। রিপোর্টে তথ্য সংগ্রহকারী একটা দুঃখজনক বিষয়ও উপস্থাপন করেছেন- বর্তমানে আক্রান্ত মানুষটির পরিবারের ক্ষুধা নিবারণের ক্ষমতাও নাকি নেই।

রিপোর্টটা প্রাপ্তির পর সাথে সাথেই মন্ত্রণা পরিষদের জরুরী বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- আক্রান্ত মানুষটির পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের একজন স্পাইকে পৃথিবীতে পাঠাতে হবে। দু’দিন পরই স্পাই লেন-ডি পৌঁছে যান পৃথিবীতে। তারপর থেকেই তিনি ঐ পরিবারের ওপর বিষেশ নজর রেখে যাচ্ছে আর যখন যা হচ্ছে তা সাথে সাথে জানিয়ে দিচ্ছেন সাবরাং এ।

সাবরাং এর মন্ত্রণা পরিষদ লেন-ডি এর পাঠানো দশ ঘন্টার তথ্যাদি নিয়ে আবারও বৈঠকে বসেছিল। আক্রান্ত মানুষটির অবস্থা জেনে উপস্থিত সবাই খুবই কষ্ট পেলেন। মানুষটির এই পরিনতির জন্য এ গ্রহের বাসিন্দারাই দায়ী। বিশেষ করে দোষী সাব্যস্ত করা হলো মন্ত্রণা পরিষদকেই। নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আক্রান্ত মানুষটির পরিবারের প্রতি যথাসাধ্য আন্তরিকতা দেখানোর। বিষাক্ত গ্যাসটার প্রতিষেধক দিয়ে আরেকজন স্পাইকে সে মুহূর্তেই পাঠাতে হবে লেন-ডি এর কাছে।

প্রতিষেধক আবিষ্কারকেরা অনুমানের উপর ভিত্তি করে মানুষের ওপর এর ব্যবহারের নিয়ম বলে দিলেন সেই স্পাইকে- সাবজেক্টের ঘুমন্ত অবস্থায় এটা প্রয়োগ করতে হবে। অতএব লেন-ডি’ রাতে গিয়েছিলেন আক্রান্ত মানুষটির বাড়িতে। যখন প্রতিষেধক ট্যাবলেটটা ঘরের ভেতর ছুঁড়ে দেওয়ার কোন পন্থা পাচ্ছিলেন না তখন দরজায় কড়া নাড়াতে বাধ্য হলেন। তিনি ভেবেছিলেন কেউ দরজা খুললেই আড়ালে থেকেই প্রতিষেধক ট্যাবলেটটা ছুঁড়ে দেবেন ঘরের ভেতর। কিন্তু তা হয়নি। তিনি ধরা পড়ে গেলেন আক্রান্ত মানুষটির স্ত্রীর দৃষ্টিতে। তবে ট্যাবলেটটা তিনি ঘরের ভেতর ঠিকই ছুঁড়ে দিতে পেরেছিলেন।

লেন-ডি এর রিপোর্ট পেয়ে জানা গেল সেই প্রতিষেধক কাজ করেনি। তাই প্রতিষেধক আবিষ্কারক টিমকে ডেকে এনে দায়িত্ব দেওয়া হলো- মানুষের উপযোগী করে বিষাক্ত সেই গ্যাসের প্রতিষেধক তৈরি করার জন্য। আর লেন-ডি’কে ফেরত আসতে মানা করা হলো। বরং খুব সাবধানে যেন তিনি তার পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন- বিশেষভাবে তার নির্দেশ দেওয়া হলো।

দীর্ঘ দশদিনের চেষ্টায় বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধকটা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফেরত আসা স্পাইকে আবারও পাঠানো হলো লেন-ডি এর কাছে। দু’জনকেই নির্দেশ দেওয়া হলো- এটা প্রয়োগের পর পরই তারা যেন সাবরাং এ দ্রুত ফেরত আসে।

আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, এই নির্দেশের একটা বিশেষ কারণও ছিল। আমাদের উড়ন্ত স্যাটেলাইট সেন্সর জানাচ্ছিল- পৃথিবীর আকাশে উড়ন্ত একটা সেন্সর লেন-ডি কে সনাক্ত করে ফেলেছে।

লেন-ডি সবার অজান্তে প্রতিষেধক ট্যাবলেটটা ছুঁড়ে দিয়ে এসেছিল আক্রান্ত মানুষটির ঘরে। মাঠিতে পড়ার সাথে সাথে সেটা আপনা আপনি ফেটে গিয়ে বাতাসে মিশে যাবে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সেটা দেহে ঢুকে তার কাজ সম্পন্ন করবে।

সম্মানিত উপস্থিতি, লেন-ডি ফেরত আসার পর থেকে আমরা আর কিছুই জানতে পারিনি। দুই বার দু’জনকে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা পৃথিবীর আকাশে ঢুকেই বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন।

মন্ত্রণা পরিষদের সেই সভাটা দীর্ঘক্ষণ চলেছিল। শেষে নব গঠিত কমিটির উপর পরবর্তী পরিকল্পনার দায়িত্ব হস্তান্তর করে সভাপতি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণার তরুণ বিজ্ঞানী ফেরদৌস হাসান কিন্তু ততদিনে আবিষ্কার করে ফেলেছেন- ভিন গ্রহের বাসিন্দারা দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে একটা গ্রামে বিচরণ করছে। তিনি বিশেষ যন্ত্রপাতিসহ একটা টিম নিয়ে গিয়ে উপস্থিত হলেন সেখানে। অদ্ভুত অদ্ভুত যন্ত্র একটা আরেকটার সাথে স্থাপন করে দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তুললেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে লেন-ডি চলে গেছে তার নিজ গ্রহ সাবরাং এ।

একদিন ভোর বেলা আসলাম শেখ ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলেন- তার চোখ একদম ঠিক হয়ে গেছে; তিনি সবকিছু দেখতে পারছেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি জমিলা বানুর নাম ধরে চিৎকার করে উঠলেন। নিজের স্বর নিজের কানে পৌঁছাতে থমকে গিয়ে চমকে উঠলেন। তাহলে তিনি এখন কথাও বলতে পারেন! ঘটনাটা দ্রুত জানাজানি হয়ে গেলে পাড়া প্রতিবেশীরা তাকে দেখতে এলেন। ফেরদৌস হাসান আলমাস শেখের হঠাৎ অন্ধ আর বোবা হওয়ার বিষয়টা আগেই জেনেছিলেন বিধায় এই খবরটা পেয়ে তিনিও অস্থায়ী সেন্টার থেকে গিয়ে হাজির হলেন আলমাস শেখের বাড়ি।

সবাই যখন আলমাস শেখকে নিয়ে ব্যস্ত তখন আরেকটা ঘটনা ঘটছিল সবার অজান্তে। আলমাস শেখের ছোট ছেলেটা খুব দ্রুত সুস্থ্য আর সবল হয়ে উঠছিল। দুপুরের দিকে বিষয়টা জমিলা বানুর দৃষ্টিতে ধরা পড়লো। আর সন্ধ্যার আগেই জেবাদ শেখ অদ্ভত ভাবে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে গেল। তবে সে আগের মতো কালো আর কুৎসিতই রয়ে গেল।

লেখকঃ কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ