অনুরাগ
নতুন বর্ষবরণের রাত। আবীর তার কোলের মেয়ে তন্নিষ্ঠা আর স্ত্রী মঞ্জীরাকে নিয়ে পার্কস্ট্রিটের নাইটক্লাবের পার্র্টিতে গিয়েছিলো। সারারাত বন্ধুদের সাথে হই-হুল্লোড়ের পর ভোরের দিকে সবাই বেশ ক্লান্ত। এমনসময় পটকা আর বোমা ফাটার মত বিকট ফট্ ফট্ দুম্ দাম্ আওয়াজ। প্রথমে সবাই ভেবেছিল উৎসাহী কেউ হয়ত নতুন বছরকে বাজি ফাটিয়ে বরণ করছে। কিন্তু পরে সবাই দেখে কয়েকজন বন্দুকধারীর দখলে চলে গেছে নাইটক্লাব। সবাই এখন বন্দি তাদের হাতে।
ঘন্টাখানেক সময় খুব এলোমেলোভাবে কাটলো নাইটক্লাবের সবার। তারপর বন্দুকধারীদের নেতা যবকটি খুব দৃঢ়ভাবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিল সবকিছু। তন্নিষ্ঠা অঘোরে ঘুমাচ্ছে তখন মায়ের কোলে। হঠাৎ করেই নেতা যুবকটি এসে দাড়ালো আবীর আর মঞ্জুরীর সামনে। অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো সে মঞ্জুরীর দিকে। আবীরের মনে বিপদ সংকেত বেজে উঠলো। যুবকটির কাপড়ে বাঁধা মুখের বলিরেখা স্পষ্ট হলো অজানা কোন এক শিহরণে। আর সাথে সাথে আবীর অনুভব করলো তার গা’ঘেষে দাড়িয়ে থাকা মঞ্জুরীও কেঁপে উঠছে থেমে থেমে।
বেশ কিছুটা সময় পর যুবকটি কোন কথা না বলে শুধু হাত ইশারায় তাদেরকে দরজার দিকে যেতে নির্দেশ দিল। দ্বিধা দ্বন্ধ নিয়ে তারা হাটা দিল যুবকটিকে পিছনে রেখে। সেও এলো সাথে সাথে। মেইন দরজায় দাড়ানো বন্দুকধারীকে হাতের ইশারায় নির্দেশ দিল- দরজা খুলে দেয়ার জন্য।
নাইটক্লাব থেকে যখন তন্নিষ্ঠাকে নিয়ে আবীর আর মঞ্জুরী বেরিয়ে এলো- তখন বাহিরে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী পুরোপুরি তৎপর। বন্দি মুক্তির মতো পিন পতন নিরবতার মধ্যে আবীরেরা আইন প্রয়োগকারীদের মাঝে পৌঁছল। কেন যেন হঠাৎ করে ঘুরে দাড়ালো আবীর। এমন সময় সে দেখলো মঞ্জুরীও ঘুরে দাড়িয়েছে। নাইটক্লাবের দরজায় অদ্ভত এক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে সেই নেতা যুবক। অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে মঞ্জুরীর দিকে।
হঠাৎ করে খুব কাছেই একটা ধুপ শব্দ হলো এবং সাথে সাথে লুটে পড়লো বন্দুকধারীদের নেতা যুবকটি। কিছুটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর স্নাইপার সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করেছে বুঝতে আবীরের কোন সমস্যা হলো না।
আবীরদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হলো পুলিশ ফাঁড়িতে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে বাসায় পৌঁছে দিল পুলিশ। তবে আবীরের মতো পুলিশরাও একটা কথা ভেবে হাবুডুবু খেতে লাগলো- কেন এমন করে বন্দুকধারীরা আবীরদের ছেড়ে দিল?
ঘন্টাখানেক পর থেকে নাইটক্লাবের ঘটনাটার লাইভ শুরু করলো বিভিন্ন চ্যানেল। আবীর আর মঞ্জুরী দেখলো টিভি পর্দায় মৃত নেতা বন্দুকধারীকে দেখানো হচ্ছে। চেহারাটা দেখে কেমন যেন ঘৃণা হলো আবীরের। কিন্তু মঞ্জুরীকে সেই আগের মতো কেঁপে উঠতে আর অশ্রু বিসর্জন দিতে দেখলো। আর তখন আবারও আবীরের মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা স্রোত বহে গেল।
টিভিতে মৃত বন্দুকধারীর বিভিন্ন তথ্য দেয়া হচ্ছে। অনুরাগ তার নাম! মঞ্জুরীর দিকে তাকিয়ে আবীরও কেঁপে উঠলো। তবে কি বিয়ের পরপর শুনা কথাগুলো ঠিক ছিল? তবে কি বিয়ের আগে মঞ্জুরী আর অনুরাগের সম্পর্কটা সঠিক ছিল? তবে কি তন্নিষ্ঠা সাত মাসে ভূমিষ্ট হওয়ার পিছনেও কি এই অনুরাগ আছে?
লেখকঃ কবি, প্রাবন্ধিক
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান