অবহেলিত মাধবীলতা

“কুচ বরণ কন্যা, তাহার মেঘ বরণ কেশ” কবির চোখে এমন কন্যা মনোহরণকারী হলেও নিজের কালো রংটায় কাল হয়েছে মাধবীলতার জন্য। সে যেন এক কুচ বরণ অভিশাপ। ছোট বোন দুজন ভালো ঘরে পাত্রস্থ হলেও মাধবীলতার বর আর ঘর কোনটিই জোটেনি। অসম্ভব গুনবতী হলেও গায়ের কালো রংয়ের কাছে সব মিইয়ে গেছে ৷ এ নিয়ে তার বাবা রথীন্দ্রর দুচিন্তার শেষ নেই । মাঝে কয়েকটা পাত্র মাধবীকে দেখতে আসলেও পাত্রের বাবার পণের বোঝা বইবার সক্ষমতা দরিদ্র রাজবংশী রথীন্দ্রর না থাকায় সেটা আর বিয়ে পর্যন্ত গড়াতে পারেনি। মা প্রজাপতি তার উপর রুষ্ট আছেন তাই তার জীবনে স্বামী সংসারের সুখ নেই বলেই ধরে নিয়েছে মাধবী। মাতৃহীন সংসারের কর্ত্রী হয়ে বরং বাবাকে সামলানোর জন্যই ঈশ্বর তাকে ধরিত্রীর বুকে পাঠিয়েছেন বলে জ্ঞান করে নিয়েছে মাধবী। কিন্তু সমাজ কি আর সে কথা মানে ? তাইতো প্রতিনিয়ত প্রতিবেশীদের নানান কথার বাণে বিদ্ধ হতে হয় মাধবী ও তার বাবাকে। প্রতিবেশীদের ভৎসনাকে গায়ে না মেখে বৃদ্ধ বাবাকে সন্তানের মত করে দেখভাল করে চলেছে মাধবী।
ভোরের আলো ফুটে পূর্ব আকাশ আলোকিত হওয়ার আগেই ফুল তুলে স্নান করে ঠাকুর ঘরে মাথা ঠুকে নিত্য পুজা দিয়ে সংসারের মঙ্গল কামনার মাধ্যমে দিন শুরু হয় মাধবীর। সেই ভক্তির মধ্যে কোন ছল নেই অথচ পাষাণবেদীর উপর বসে থাকা ঈশ্বরের মনটাও হয়ত পাষাণ তাই তাঁর মন গলে না আর তাই ভক্তি দাত্রীকে প্রতিদিন অভাবের যন্ত্রণা আর বয়স পেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিবেশীদের গঞ্জনা সইতে হয়। ঈশ্বরের উপর মাধবীর কোন অভিযোগ নেই । তবুও কি ঈশ্বর পারেন না নিজের একনিষ্ঠ ভক্তকে এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত করতে ? অথচ উদাসীন ঈশ্বরের যেন কোন ভ্রুক্ষেপই নেই এদিকে । কিন্তু কথা আছে প্রতিটি মানুষের ই নিজের একটা দিন আসে মাধবী যেহেতু মানব কুলে জন্ম নিয়েছে তাই তারও নিজের একটি দিন প্রকৃতির নিয়মেই থাকবে মাধবীর দিনও হয়ত আসবে। ঈশ্বরের ভক্ত হিসাবে আপনি এটাকে ঈশ্বরের দেওয়া বিশেষ দিনও বলতে পারেন।
লেখকঃ ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
