জ্যোৎস্নার মেয়েলি কম্পোজিশান

আমি শহরের ছেলে। জন্ম থেকে গ্রাম কি জিনিস কোনদিন দেখিনি। সৌভাগ্য হয়নি গ্রামের মাটি আর ঘাস বিছানো পথে হাঁটার। তাই যখন অনেক দূরের এক গ্রামের স্কুলে চাকরি পেলাম মনটা আনন্দে নেচে উঠেছিল। আবার ভয়ও হচ্ছিল- পারব তো মানিয়ে নিতে!

যাইহোক জয়েনিং এর দিন ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রায় ছুটি হয় হয় এমন সময় স্কুলে গিয়ে পৌঁছালাম। রুটিন কাজগুলো সেরে উঠতেই প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। একেই শীতকাল তার উপর গ্রাম! এখানে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা নামেও বোধহয়। গ্রামের স্কুল- হোস্টেল ফোস্টেল কোনও কিছুর বালাই নেই- আজ রাতটা থাকব কোথায়? হেডস্যার আমার মনের কথাটা পড়ে নিয়ে বললেন- চলুন আজ রাতটা আমার বাড়িতেই কাটাবেন। কাল না হয় মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজবেন। অগত্যা আর উপায় কি।

খাওয়া-দাওয়ার পর রাত্রে শুয়েছি। সারাদিনের পরিশ্রমে কখন ঘুম ধরে গেছে নিজেই জানিনা। হঠাৎ মাথার কাছে জানালায় একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। ঠক-ঠক-ঠক। এতরাতে কে?

কিন্তু পরক্ষনেই বুঝলাম শব্দটা কিসের। বাহিরে বাতাস বইছে। জানালার পাশের শিউলী গাছের একটা ঝুলন্ত ডাল বাতাসের সাথে দোলছে আর জানালায় ঘষা খাচ্ছে।

হঠাৎ মনে পড়লো- আজ পূর্ণিমা। জ্যোৎস্নার প্রতি আমার অদ্ভুত একটা দূর্বলতা সেই ছোট বেলা থেকেই আছে। আর শহরের কৃত্রিম আলোর মাঝে জ্যোৎস্না দেখে দেখে ক্লান্ত। তাই একটা তীব্র টান অনুভব করলাম প্রকৃতিময় জ্যোৎস্নার প্রতি। ধীরে ধীরে এসে দাড়ালাম জানালায়। খোলে দিলাম পাল্লা।

পশ্চিম দিকটা পুরোটাই উন্মুক্ত। বিশুদ্ধ জ্যোৎস্নায় প্লাবিত প্রান্তর। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে অনেক দূর পর্যন্ত। চারিদিক নীরব, শান্ত, নিরুত্তাপ। থেমে থেমে বইছে বাতাস, সাথে করে নিয়ে আসছে অচেনা ফুলের মিষ্টি গন্ধ। পাতাদের ফিসফিসানিতে আর অবর্ণনীয় আবেশে সাড়া দিল মন। নেশা ধরে গেল আমার সমস্ত অস্তিত্বে। দূরে আলো-আঁধারির খেলায় মত্ত চন্দ্রালোকের প্রতিবিম্ব। হঠাৎ কানে ভেসে এলো অস্পষ্ট পায়ের আওয়াজ- নিক্বণের মতো। অদ্ভুতভাবে দেখি- দৃষ্টি সীমায় দাড়িয়ে আছে দুধ সাদা পোশাক পরা এক মেয়েলি অবয়ব।

স্বপ্নই মনে হলো সব। কিন্তু তারপরই অজানা এক পুলক জাগলো দেহ মনে।

দিগন্তের এক কোণে জমেছে এক টুকরো মেঘ। সেটা হাতছানি দিয়ে ডাকলো আরও মেঘকে। উপেক্ষা করতে না পেরে জড়ো হতে লাগলো সবাই। মনে হলো প্রকৃতির অনেকদিনের অপেক্ষার অবসান হবে- আজ ঝড় আসবে।

নিজের যৌবন টের পেলাম। টের পেলাম প্রেম ভালোবাসার মোহ আচ্ছন্ন করেছে আমায়। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই মেয়েদের প্রতি আমার কোন আকর্ষণ ছিল না কোনদিন। যত সুন্দরী হোক না কেন- মেয়েরা আমার কাছে ছিল সমুদ্রের ঢেউ, সৈকতের বালি, রাজকান্দি রেঞ্জের পাড়ার চূড়া অথবা পাখির ঝাঁকের মতো বৈচিত্রহীন।

অথচ আজ এই অপূর্ব জ্যোৎস্না আমায় ডেকে বলে গেল- তুমি প্রেমে পড়েছ যুবক।

লেখকঃ কবি, প্রাবন্ধিক
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ