দেখা হয়ে গেল

মিতালী চারপাশ ঘুরে দেখছিল। কি সুন্দর জায়গা। কত ফুল, কত নাম না জানা পাখী। কি সুন্দর ফুরফুরে বাতাস বইছে। চারপাশে কতজন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কেউ কারুর দিকে চাইছে না। কারুর কোন কিছুতেই নজর নেই। যে যার নিজের মত নিজেকেই নিয়ে মত্ত। হঠাৎ দেখলো সামনে মলয়। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে জানতে চাইলো, ” ”কেন এমন ভাবে এলি? ” মিতালীও বললো “তুমি কেন এলে। মুক্তি পেতে কত সময় লাগবে জান”
মলয় শুধু ঘাড় নাড়লো। “কত কষ্ট হয়েছে তোমার বলতো “? “সেতো একমিনিট ” মলয় মৃদু হেসে বলে।” বরং মিতু তোমার কষ্ট বেশী হয়েছে “।
মিতালী বলে “হ্যাঁ তা একটু বেশী হয়েছে, জ্বালাটা ছিল এক ঘন্টার মত। তরপরই তো সব শেষ। কিন্তু এটাই ভালো হলো এখানে আমরা একসাথে থাকতে পারবো মলয়, কেউ কিছু বলতে আসবে না “। মলয়ও মৃদু হেসে সম্মতি জানালো।
মিতালী পড়াশুনায় খুব ভালো মেয়ে। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে দারুন রেজাল্ট তার। সবাই খুব ভালোবাসে। এখন কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে পড়ে।
দুই ভাই এর এক বোন।
মিতালী ভালোবেসে ফেললো তারই কলেজের কমার্স বিভাগে সাধারণ একটি ছেলে কে। নাম তার মলয়। ক্রমে সময়ের সাথে প্রেমের প্রগাঢ়তা বেড়েই চললো। যথারীতি মিতালীর দাদাদের কানে গেল কথাটা। একদিন মিতালীর বড়দা ছেলেটিকে ডেকে বলে দিল সে যেন তার বোনের থেকে দূরে থাকে। সঙ্গে আরো দুচারটে কু কথাও শুনিয়ে দিল। মলয় অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলেও বড়দা কোন কথাই শুনতে চাইল না। এরপর দুদিন কলেজে আসেনি মলয়। মিতালী খোঁজ নিল মলয়ের বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে। কেউ কিছু বলতে পারল না। গ্রামের ছেলে মলয় কোলকাতায় এসেছিল পড়তে। থাকত একটা মেসে। আর স্বভাবেও ছিল খুব মুখচোরা তাই সে ভাবে জনপ্রিয় হয়েও ওঠা হয়নি মলয়ের।
পরীক্ষা এসে গেল প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার। পরীক্ষার দিন যত এগিয়ে আসছে মিতালী অস্থির হয়ে উঠছে। পড়াশোনায় মন দিতে পারছে না। মলয়ের কি হলো। প্রথমদিন কলা বিভাগের
ও কমার্স বিভাগের পরীক্ষা, মিতালীদের পরীক্ষা ছিল না। তবুও লাইব্রেরি থকে বই নেবার নাম করে কলেজে এলো। আজ নিশ্চয় মলয়কে পাবে। হ্যাঁ দেখা হয়ে গেল দুজনের। পরীক্ষার পর দেখা করার জন্য অনুরোধ করল মলয়কে। মলয় প্রথমে রাজী না হলেও এড়াতে পারলো না। মিতালীর বাড়ী যেতে রাজী হয়ে গেল। কারণ মিতালীর পরীক্ষা আছে পরশু তাই সে বাড়ীতে পড়াশোনা করবে বলেই মলয় ওখানে অল্প ক্ষনের জন্য ডাকলো। মলয় এর আগেও অনেকবার ওদের বাড়ীতে গেছে। তাই আপত্তি করলো না। পরীক্ষা শেষে মলয় এসেওছিল
কিছুক্ষন কথা বলে ফিরেও যাচ্ছিল। বাড়ী থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল মিতালীর বড়দা। কাছে যেতেই মলয়কে সপাটে একটা চড় কষালো। ” আমি তোমায় মিতুর থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম কি না” মলয় বলে ” দাদা আমি একটু দরকারে এসেছিলাম”। মিতালীর দাদা কলার ধরে দূরে ঠেলে দিল। বললো “আর যদি দেখেছি তো মেরে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব” মুখচোরা মলয় মাথা নীচু করে চলে গেল।
পরে জানা গিয়েছিল মলয় সেদিন মেসে না গিয়ে সোজা শিয়ালদহ স্টেশনে চলে গিয়েছিল। রাজধানী দ্রুত গতি তে এগিয়ে আসছিল, ঝাঁপিয়ে পড়লো সামনে। নিমেষে তালগোল পাকিয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। যথারীতি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লো খবরটা। মিতালীর পরীক্ষা দেওয়া হলো না আর। ঠাকুমার ঘরে চলে গেল সে। ঠাকুমা রোজ রাতে কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খান। গতকালই বাবা একমাসের ওষুধ এনে রেখেছেন।
একটা গ্লাসে তিরিশটা ট্যাবলেট মিশিয়ে দিল। যতক্ষণ সময় নিল জলে মিশতে ট্যাবলেট গুলো।
তারপর এক নিশ্বাসে সবটা জল খেয়ে নিল। মুখ
থেকে গাঁজলা উঠতে সময় নিল না। মিতালী নিস্তেজ হয়ে পড়লো। সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কিছু করতে পারলো না। পথেই শেষ হয়ে গেল।
মলয় আর মিতালী এখন একসাথে থাকে। পরলোকের কোন একটা স্তরে। পরম আনন্দে ঘুরে বেড়ায়।

লেখকঃ কলকাতা, ভারত থেকে

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ