ধর্ষিতার ক্রসফায়ার চাই, ন্যায় বিচার চাই না!
ফেসবুক বা স্যোশাল মিডিয়া আমাদের সবাইকে বাড়ী নিয়ে গেছে। ইস্যু হয়ে গেছে,বিছানায় আধো ঘুমে-জাগরনে ষ্টাটাসের অনুসঙ্গ। আমাদের সমস্ত ক্ষোভ প্রতিবাদের দৌড় ফেসবুকে ষ্টাটাসে,কমেন্টের গন্ডি পর্যন্ত।
ধর্ষক বা অপরাধীর গ্রেফতার, বিচার নিশ্চিত করার দাবীতে রাজপথে নামার,অনলাইনের বাইরে প্রতিবাদের সংস্কৃতি অতীত হয়েছে বহু আগেই।
দু-চার দিন গেলে নতুন ইস্যুর নীচে চাপা পড়ে যায় পুরনো ইস্যু। ক্ষমতা প্রয়োজনে ইস্যু গিয়ে ইস্যু কাটা-কাটি খেলা খেলে।
কোন সভ্য সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষন,হত্যার বিচার চাইতে হয় না। আমরা এখন বিচারহীনতার সমাজ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হতে হতে অবিচারেও সিদ্বহস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমরা জানি,দু একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া বিচার পাবে না ধর্ষিতা। উল্টো ধর্ষনের শিকার হওয়া বোনটিকেই সমাজ পুনঃধর্ষন করবে। বোনটিকে বেচে থাকতে হবে আমাদের প্রশ্নবোধক চোখগুলির সামনে লাঞ্চনা,ব্যাঙ্গ, বিদ্রুপের লক্ষ্যবস্তু হয়ে।
ইস্যু আসবে,ইস্যু যাবে। স্বামীর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে স্ত্রীকে গনধর্ষন করবে দেশের ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক কর্মীরা। সরকার বদলাতে পারে, কিন্তু ধর্ষনের, নীপিড়নের সংস্কৃতি বদলায় নি, বদলায় না। এমসি কলেজে একের পর এক অভ্যন্তরীন কোন্দলে খুন,ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেবার মতো ঘটনার বিচার হলে একই স্থানে গতকালের বর্বরতম ঘটনা ঘটতো না।
প্রতিটি ঘটনার পর ফেসবুকে আমাদের বিপ্লবীরা ষ্টাটাসে কমেন্টে ভাইরাল বিপ্লব করেন। দেশের আসল বিরোধীদল তো স্যোশাল মিডিয়াতে গত একযুগ ধরে সরকার পতনের চুড়ান্ত আন্দোলন করেই বেচে আছে।
আমাদের সাংবাদিক,কলামিষ্টরা লিখে যাচ্ছেন সেলফ সেন্সরশীপের সীমানায় থেকে সর্বচ্চো দ্রোহের অক্ষরে। বড়জোর,আসামীরা গ্রেফতার হয়। কিছুদিন পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে। ক্ষমতাবান আসামীরা জেলগেটে নিজ আয়োজনে সংবর্ধনা নেবে।
কয়েকটি বা কিছুমাত্র ব্যাতিক্রম ছাড়া আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অপরাধীর বিচার হয় না। বরঞ্চ ফাঁসির আসামীকে বিশেষ ক্ষমায় মুক্তি দেবার বহু্ উদাহরন সৃষ্টি করেছে রাষ্ট্র।
বিচারহীনতার যে যাপিত অদ্ভুত সংস্কৃতির মধ্যে আমাদের বাস, সেখানে ন্যায় বিচারের আশা করা মানে নিজের সাথে প্রতারনা, প্রবঞ্চনা। ন্যায়হীনতার কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করার অদ্ভুত যে তামাশা,তার কাছে ন্যায় বিচার চাই না। বিচার না দিতে পারা এই সমাজ,রাষ্ট্র বরং ধর্ষনের শিকার বোনটিকে ক্রসফায়ারে দিক…ধুঁকে ধুঁকে মারবার চেয়ে একেবারে মেরে ফেলুক।
লেখকঃ প্রবাসী সাংবাদিক ও সেক্রেটারি, ইউকে বাংলা প্রেস ক্লাব
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

