চারিদিকে ধর্ষক, ধর্ষণ এবং দর্ষিতা! কে নিবে এর দায়ীভার?


প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলে। নিউজ টেলিভিশনে চোখ পড়লে সর্বপ্রথম দেখা যায় ধর্ষণ এর খবর। ইদানিং দেখা যাচ্ছে ধর্ষণ বাংলাদেশে একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর কতো নারী ধর্ষিত হলে আমরা বলবো তারা নির্যাতিত? কে কত ইউনিক ভাবে ধর্ষণ করতে পারে তা নিয়ে যেনো চলছে প্রতিযোগিতা ৷ বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার নারীর জীবনে ধর্ষণ কখনো শেষ হয় না৷ নানা প্রক্রিয়ার মধ্যে সে পরোক্ষ ধর্ষণেরই শিকার হতে থাকে৷ মামলা, তদন্ত, সাক্ষ্য গ্রহণ, বিচার প্রত্যেকটি পর্যায়েই যেন পরোক্ষ ‘ধর্ষণের শিকার হয়’ নারী৷

ধর্ষকের সৃষ্টি হঠাৎ করে হয় না। পরিবার ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে তাদের মনে মেয়েদের প্রতি কোন সম্মান,শ্রদ্ধা আগে থেকেই কাজ করেনা। পৃথিবীতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক রয়েছে যা পার্থক্য তৈরি করার বিবেক-বুদ্ধি মানুষের রয়েছে। ঠিক এখানেই অন্য প্রাণীদের চেয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। দেখার জন্য যেমন দৃষ্টিবঙ্গির দরকার ঠিক তেমনি প্রকৃত মানুষ হইতে গেলে মনুষ্যত্বের দরকার। জন্মসূত্রে মানুষ হলেই তো প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। একজন ধর্ষকের কাছে মেয়েরা শুধু যৌনতার বস্তু ছাড়া আর কিছুই না।তারা চোখ দিয়ে, অন্তর দিয়ে রোজ আরও হাজারো মেয়েকে ধর্ষণ করে। কিন্তু যেদিন সুযোগ পায় সেদিন নিজেদের মানুষরুপি জানোয়ারের চেহারাটা সামনে নিয়ে আসে। আবারও কোন মেয়ের গায়ে ধর্ষিতার তকমা লাগায়। তারা জানে তাদের কি এমন শাস্তি হবে, এইতো মাত্র কয়েক মাসের জেল। বিচার না পাওয়ায় যেটা হয়, অপরাধী ধর্ষণের শিকার নারীর সামনেই ঘুরে বেড়ায়৷ এটা শুধু তার জীবনকেই দুর্বিষহ করে না, তার পরিবারের সদস্যদেরও বিপর্যস্ত করে। এই ধারনা ও পূর্ববর্তী বিচারের ধরন তাদের ধর্ষক মনকে আরো সাহস যোগায়।

World Population Review 2020 অনুসারে প্রতি লাখ নারীতে ধর্ষণের শিকার হওয়া দেশগুলোর তালিকা:৪১. তম বাংলাদেশ (৯.৮২ জন)। ২০১৯ ও ২০২০ সালে যেভাবে এগুচ্ছি আমরা তাতে ২০২১ সালে টপ টেনই হয়ে যাবো মনে হয়। ধর্ষণ এর চেয়ে খারাপ কাজ আর দ্বিতীয়টি আর কি হতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দিন দিন যেন ধর্ষণ হত্যা বেড়েই চলেছে। আর বাড়বেই বা না কেন, যেখানে ধর্ষক নামের মানুষ রুপী কুকুরগুলোকে হাতে নাতে ধরেও বিচার হয় না। আর হলেও রায় হয় এক দশক পর। সেখানে ধর্ষণ কি ভাবে বাড়বে না। যেখানে ধর্ষণের শাস্তি পেতে হয় ধর্ষিতা নারী কে।বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যে ধর্ষক আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। শুধু কি তাই ধর্ষণ করার পর জামিনে বেরিয়ে উল্লাস করে। ধর্ষক মোটরসাইকেল শোডাউন করে। প্রশ্ন থেকে যায় যে দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী সে দেশে কি করে নারী ধর্ষিত হয় প্রতিদিন? চারিদিকে ধর্ষক, ধর্ষণ এবং দর্ষিতা! কে নিবে এর দায়ীভার?”

যে দেশে ধর্ষক এর পক্ষে উকিল পাওয়া যায় সে দেশে কেমন করে ধর্ষণ বন্ধ হবে? লক্ষ্য করলে দেখা যায়। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়।
২০১৮ সালে এর সংখ্যা ছিল, ৭৩২ জন। ২০১৭ ধর্ষণের শিকার হয় ৮১৮ জন নারী। এই দিকে ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৭৬ জনকে! আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয় ১০ জনকে! যার মধ্যে অনেকগুলোর বিচার হলেও, সময় লেগেছে অনেক। তারপরও কমে আসেনি ধর্ষণ এর সংখ্যা। প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে শত শত মা বোন। ধর্ষিত শুধু একটা নারী হয় না ধর্ষিত হয় সারাদেশ। এক্ষেত্রে শুধু একজন নারী ধর্ষিত হয় না। ধর্ষিত হয় পুরো সমাজ। কলঙ্কিত করা হয় একটা পুরো পরিবারের ভবিষ্যৎকে। ধর্ষিত হয় আমাদের আদর্শ এবং সভ্যতা। যখন একজন নারী ধর্ষিত হয়, তার মা-বাবার দিকে সমাজ বাঁকা চোখে তাকায়, তার ভাই-বোন আগের মত বন্ধুদের সাথে সহজে মিশতে পারে না। তারা একরকম একঘরে হয়ে থাকতে হয়। যে নারী ধর্ষিত হয়, তার পরিবারও সমাজে বঞ্চনার শিকার হয়। আত্মীয় স্বজন তাদেরকে এড়িয়ে চলে। আর ধর্ষিতার কথা কি বলবো। সে তো আজীবন মরে যাবার ইচ্ছে নিয়ে বেঁচে থাকে। জীবন্ত লাশ হয়ে থাকে। পৃথিবী টা তার কাছে নরক আর বেঁচে থাকাটা তার জন্য নরকের শাস্তি হয়ে থাকে।
পুরুষ জাতি তখনই মরে গেছে যখন তারই সামনে তার মেয়ে তার স্ত্রীকে বিবস্ত্র করে কতগুলো কুকুর ছিবড়ে,খুবলে খেয়েছে।
তারা আর কোন রাতে শান্তিতে ঘুমুতে পারবেনা, পারবেনা এই পৃথিবীর বুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে। একজন মানুষকে যখন খুন করা হয়। তখন সে মৃত্যুকালীন সময়েই যন্ত্রণা ভোগ করে।
কিন্তু যখন একজন নারীকে ধর্ষণ করা হয়। তখন থেকে সে যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে যেতে হয়।

কালে কালে দেশে দেশে ধর্ষণ এর শাস্তি হয়েছে কঠিন থেকে কঠিনতম।ধর্ষণ এর শাস্তি হিসেবে মৃত্যুর চেয়ে বড় ঔষধ আর কিছু হতে পারে না। আসুন দেখে নেই কিছু দেশে দেশে ধর্ষণের শাস্তির চিত্র।
চীনঃ ধর্ষণ প্রমাণ হলেই আর কোনও সাজা নয়, বিশেষ অঙ্গ কর্তন এবং সরাসরি মৃত্যুদণ্ড। অন্য কোন শাস্তি নেই।
ইরানঃ ধর্ষককে ফাঁসি, না হয় সোজাসুজি গুলি করা হয়। এভাবেই ধর্ষককে এদেশে শাস্তি দেওয়া হয়।
আফগানিস্তানঃ ধর্ষণ করে ধরা পড়লে চার দিনের মধ্যে ধর্ষকের মাথায় সোজা গুলি করে মারা হয়।
উত্তর কোরিয়াঃ অভিযোগ, গ্রেফতার আর তারপর অভিযোগ প্রমাণ হলে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সৌদি আরবঃ জুম্মার নামাযের পর ধর্ষককে প্রকাশ্যেই শিরশ্ছেদ করা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতঃ সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মঙ্গোলিয়াঃ ধর্ষিতার পরিবারের হাত দিয়ে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
মিশরঃ ধর্ষককে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আর বাংলাদেশঃ গ্রেফতার,রিমান্ড, অবশেষে বড় কোন নেতা, চাচা মামা,দলীয় কোন পদের উছিলায় আবারো ধর্ষক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় সভ্য সমাজে বসবাস করা অসভ্য মানুষেরা।

যেদিন আমাদের সমাজ আমাদের কন্যা শিশু, কিশোরী এবং নারীকে নারী না ভেবে মানুষ হিসাবে ভাববে সেদিন আমাদের সমাজে নারীর প্রতি এই সহিংসতাও বন্ধ হবে। তাই আসুন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ও মূল্যবোধের স্থানান্তর করি। সুন্দর রাষ্ট্র গড়ে তুলি।

“নির্লজ্জ জাতি এসো, এক হই এহেন নৃশংসতার প্রতিবাদ করি।
নির্বাক জাতি এসো, এক হই এহেন হিংস্রতার প্রতিবাদ করি।
গড়ে তুলি ধর্ষক ও ধর্ষণ বিহীন দেশ, সোনার বাংলাদেশ।”

পরিশেষে, এক দেশ এক দাবী ধর্ষকের যথাযথ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চাই এবং তা প্রকাশ্যে হওয়া চাই।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কেকে
আরও সংবাদ