টেকনাফে ফিশিং বোটের আড়ালে ইয়াবা পাচার: আটক রোহিঙ্গা মাঝি মাল্লা
ইদানিং টেকনাফসহ কক্সবাজার সাগরের ফিশিং ট্রলারের রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বোটের মালিকগণ স্থানীয় জেলেদেরকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে নিয়োগ দিচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। ফলে স্থানীয় জেলেদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিষহ অভাব-অনটন। ফিশিং বোটে চাকুরী হারিয়ে অনেক স্থানীয় জেলে কোন কাজকর্ম না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন যাপন করছে।
টেকনাফ উপজেলা ও পৌরসভার জেলে নেতা শফিউল আলম ও মোহাম্মদ জোবায়ের জানান ২০১৭ সালে প্রায় চার বছর পূর্বে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন নাফ নদী দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে মর্মে নাফ নদীতে মাছ ধরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ফলে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে প্রায় ১০ হাজার জেলে তাদের জীবন জীবিকার পথ হারিয়ে পথে বসেছে। জীবিকার পথ হারিয়ে পথে বসা জেলেদেরে একটিমাত্র দাবি নাফ নদীতে রাতের পরিবর্তে অন্তত দিনের বেলায় হলেও মাছ শিকারের অনুমতি প্রদান করা জেলেদের প্রাণের দাবি।
এ বিষয়ে গত ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন থেকে আরম্ভ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পর্যন্ত স্মারকলিপি প্রদান করেছে জেলেরা কিন্তু কোন সুরাহা হয় নি। এদিকে নাফ নদীতে মাছ শিকারের সকল বোট নাফ নদী ছেড়ে পশ্চিম এবং দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে চলে গিয়ে মৎস্য আহরণ করছে। সেখানে ঐ সমস্ত বোটের মালিকগণ স্থানীয় জেলেদেরকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লাদের দিয়ে মাছ শিকার করছে। এই রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লারা মাছ শিকারের নামে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান ভর্তি করে মাছের সাথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াবা পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য যে গত ২৪ আগষ্ট ২০২০ র্যাব ১৫ বঙ্গোপসাগরের অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার খুরুশকুলের মাঝিরঘাট নামক স্থান থেকে ১৩ লাখ ইয়াবা নিয়ে দুজন রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লাসহ একটি ফিশিং ট্রলার আটক হয়। রোহিঙ্গা মাঝে মালারা হচ্ছেন উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোঃ বশির ও আব্দুল মজিদ। অপরদিকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ টেকনাফের কোস্টগার্ডের সদস্যরা টেকনাফ বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে সাত রোহিঙ্গা মাঝি-মামলাসহ ৫ লাখ ইয়াবা ও ফিশিং ট্রলার আটক করে। একই বছরে ৯ জুলাই ২০২০ ইং ৯৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ রামু হিমছড়ির নামক বঙ্গোপসাগ থেকে একজন জেলেসহ একটি ফিশিং বোট আটক করে র্যাব ১৫। এভাবে প্রতিনিয়ত ইয়াবা ভর্তি ফিশিং ট্রলার আটক হচ্ছে। এদের বেশির ভাগের মাঝি মাল্লারা হচ্ছে রোহিঙ্গা নাগরিক।
এ রোহিঙ্গা মাঝি মাল্লারা শুধু ইয়াবা বহন ছাড়াও মালয়েশিয়ায় মানবপাচার, সাগরে ফিশিং বোটে ডাকাতি, খুনসহ নানাবিধ অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ ও পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে টেকনাফ উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী শুধু টেকনাফ উপজেলার তালিকাভুক্ত ১ হাজার ১ শত ৫৪ টি ফিশিং বোট ও ৭ হাজার ৮৮৩ জন স্থানীয় জেলে রয়েছে। স্থানীয় জনগণের তথ্য মতে টেকনাফে তালিকাভুক্ত ছাড়াও আরো অনেক ফিশিংবোট রয়েছে। মাছ শিকারের ফিশিং বোটে লাইসেন্স নাম্বার, বোটের নাম ইত্যাদি লেখার নিয়ম থাকলেও টেকনাফ উপজেলার দুই-তৃতীয়াংশ বোটে কোন কিছুই নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায় নাম ঠিকানা ও নাম্বার থাকলে মানব ও ইয়াবা পাচার অপরাধ সংগঠিত করা যায়না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাঝি মাল্লারা প্রতিবেদককে জানান।
গত ৩১শে আগষ্ট টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে মেজর সিংহা হত্যা ঘটনা সংঘটিত হয়। এ নিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যস্ত হয়ে পড়লে এক শ্রেণীর সুচতুর ইয়াবা গডফাদারগণ ফিশিং বোট কে নিরাপদ বাহন হিসাবে বেছে নিয়ে রোহিঙ্গা মাঝি-মাল্লাদের কে নিয়োগ দেয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল জানান টেকনাফ উপজেলার ফিশিং বোটের মালিক ও মাঝি-মাল্লাদের নতুন করে তালিকা প্রণয়ন করে যাচাই-বাছাই করা হলে আসল ফিশিংবোট এর মালিক ও জেলে দের মুখোশ উন্মোচন হবে। এমন প্রত্যাশা সীমান্তের সচেতন নাগরিকদের
এ বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দায়িত্বরত অপারেশন অফিসার লেঃ মোঃ শোয়েব জানান নিবন্ধিত জেলে সারা কোন রোহিঙ্গা মাছ ধরতে পারবেনা। অপরদিকে টেকনাফ কোষ্টাগার্ড স্টেশন কমান্ডার লেঃ আনোয়ারুল হক বলেন আমি সবে মাত্র যোগদান করছি তবে নিবন্ধিত জেলে সারা কোন রোহিঙ্গা মাছ ধরা এবং শ্রমিক হিসাবে নিয়োজিত করা সম্পূর্ণ নিষেধ। আমি এ বিষয়ে ফিশিং বোট মালিক সমিতির ও জেলে সমিতির সাথে আলাপ আলোচনা করব এবং প্রয়োজনে বিষয়টি উপজেলা মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় উত্থাপন করবো।
এশিয়াবিডি/কেকে/সানী