রহমতে আলম (সাঃ) : আগমনের সু-সংবাদ

আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার জমিনে মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। কুরআন শরীফের সূরা আয-যারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “জ্বিন ও মানুষকে আমি আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি”। আবার এই মানুষ জাতিকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করে জান্নাতের পথে নিয়ে যাওয়া এবং জাহান্নমের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। এক লক্ষ মতান্তরে দু লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী রাসূল এসেছিলেন। তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হিসেবে আগমন করেছিলেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফের সূরা সাবার ২৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন- “আমি তো আপনাকে সব মানুষের জন্য সু-সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না”।

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিশ্বজনীন রাসূল হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন যে, তাঁকে সকল মানুষের হিদায়াতকারী ও পথপ্রদর্শকরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সর্বজনীন রাসূল হওয়ার ব্যাপারে সূরা আরাফের ১৫৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “আপনি বলুন, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর প্রেরিত রাসূল” আল্লাহ তায়ালা সূরা ফুরকানের শুরুতেই বলেছেন- “কত প্রাচুর্যময় তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরকান (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে”।

শেষ নবীর স্বীকৃতি দিয়ে সূরা আহযাবের ৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন (তার কোন বয়স্ক ছেলে নেই)। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নবী। আল্লাহ সবকিছুই ভালভাবে জানেন” এখানে শেষ বলতে মোহরকে বলা হয়েছে। আর মোহর সর্বশেষ কর্মকে বলা হয়। যেমন, পত্রের শেষে মোহর মারা হয়। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনে নবুয়াত ও রিসালাতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পর যে কেউ নবী হওয়ার দাবী করবে, সে নবী নয়, বরং মিথ্যুক ও দাজ্জাল বলে পরিগণিত হবে। উক্ত বিষয়ে হাদীস গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাতে সকল উম্মত একমত। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ঈসা (আঃ) এর অবতরণ হবে, যা সহীহ ও সূত্রবহুল প্রসিদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। তবে তিনি নবী হয়ে আসবেন না, বরং শেষ নবীর তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হয়ে আসবেন। যার ফলে তাঁর অবতরণ হওয়া খাতমে নবুয়াত এর আকীদার পরিপন্থী নয়।

কুরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন আমাদের কল্যাণের জন্য। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের মাস পবিত্র রবিউল আউয়ালকে সামনে রেখে তাঁর আগমনের সু-সংবাদ আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারি শরীয়ত যেভাবে সমর্থন করে। এ বিষয়ে কুরআন, হাদীস ও সিরাতের কিতাবে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন-

 আল্লাহ তায়ালা নিজেই সু-সংবাদ দিয়েছিলেন।

সূরা আল-ইমরানের ৮১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-“স্মরণ করুন! যখন আল্লাহ নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন এই বলে- আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও প্রজ্ঞা দান করেছি তা গ্রহণ কর। অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থক একজন রাসূল আসবেন। তখন অবশ্যই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বলেছিলেন, তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ ব্যাপারে আমার চুক্তি গ্রহণ করলে? তারা বলেছিলেন, স্বীকার করলাম। তিনি বলেছিলেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো, আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম”।

আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে তাবরানীর মধ্যে এসেছে- হযরত আলী (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা সব রাসূলগণের কাছ থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে অঙ্গীকার নেন যে, তারা স্বয়ং যদি তার আমলে জীবিত থাকেন, তবে যেন তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন তথা ঈমান আনেন এবং তাকে সাহায্য করেন। স্বীয় উম্মতকেও যেন এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে যান। সুতরাং এই আয়াতে কারীমা থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝলাম যে, স্বয়ং আল্লাহ তা’লা রুহ জগতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সু-সংবাদ দিয়েছিলেন। তাও আবার সমস্ত নবী রাসূলদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়ে যে, শেষ নবীর সাক্ষাত পেলে উনার প্রতি ঈমান আনতে ও ইসলাম প্রচারে সাহায্য করতে।

 হযরত আদম (আঃ) সংবাদ দিয়েছিলেন।

হযরত আদম (আঃ) উনার পুত্র শীস (আঃ) কে অনেক উপদেশ দিয়েছিলেন। আর সেই সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম মোবারক নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেগুলো সিরাতের বিভিন্ন কিতাবে পাওয়া যায়। এরকম একটি বর্ণনা জুরকানীতে এসেছে- “হযরত আদম (আঃ) আপন পুত্র শীস (আঃ) কে লক্ষ্য করে বললেন, হে আমার ছেলে! আমার পরে তুমি খলিফা হবে। সুতরাং খলিফা হওয়ার পরে খেলাফতকে তাকওয়ার তাজ ও দৃঢ় একিনের মাধ্যমে মজবুত করে আকঢ়ে রাখবে।আর যখন আল্লাহর নাম নিবে তখন সাথে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম নিবে। তার কারণ হলো আমি যখন রূহ আর মাটির মধ্যে ছিলাম তখন এই পবিত্র নাম আরশের পায়ায় আল্লাহর নামের সাথে লিখিত দেখেছি। এরপর আমি সমস্ত আকাশ ভ্রমণ করেছি, তখন আকাশের কোন একটি স্থান পাইনি যেখানে এই পবিত্র নাম লেখা নেই। আমার রব আমাকে জান্নাতে দিলেন, তখন জান্নাতের এমন কোন প্রসাদ বা কামরা পাইনি যেখানে এই পবিত্র নাম লেখা নেই। আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র নাম লেখা দেখেছি হুরদের কপালে, জান্নাতের সমস্ত গাছের পাতায়, বিশেষ করে তুবা ও সিদরাতুল মুনতাহা নামক গাছের পাতায় পাতায়, পর্দার কিনারায় এবং ফেরেস্তাদের চোখের মনিতে এই পবিত্র নাম লেখা দেখেছি। সুতরাং হে আমার ছেলে! তুমি এই পবিত্র নাম বেশি বেশি জপতে থাক। কেননা ফেরেস্তাগন আগ থেকেই এই পবিত্র নাম জপনে মশগুল আছেন”।

 হযরত ইব্রাহীম (আঃ) দোয়া করেছিলেন।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) শেষ নবীর আগমনের জন্য আল্লাহর দরবারে যে দোয়া করেছিলেন তা কুরআন শরীফের সূরা বাকারার ১২৯ নম্বর আয়াতে এসেছে- “হে আমাদের প্রভু! আর তুমি তাদের মধ্যে তাদের থেকেই একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদেরকে আপনার আয়াতসমূহ তথা কুরআন শরীফ পাঠ করে শোনাবেন। এবং তাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেবেন, আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। তুমিই তো মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। উক্ত আয়াতে কারীমা থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝলাম যে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছিলেন আমাদের নবীর আগমনের জন্য, আর সেই দোয়ার জবাব আল্লাহ কুরআন শরীফের সূরা আল-ইমরানের ১৬৪ নম্বর আয়াতে দিয়ে বলেছেন- “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদের থেকেই তাদের মধ্যে এমন একজন রাসূল পাঠিয়েছেন যিনি তাদেরকে তাঁর আয়াতসমূহ তথা কুরআন শরীফ পাঠ করে শোনান, তাদেরকে পরিশোধন করেন ও কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেন, যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ছিল”।

 তাওরাত ও ইঞ্জিলে সু-সংবাদ প্রদান।

পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের সু-সংবাদ প্রদান করা হয়েছিল। কুরআন শরীফের সূরা আশ-শু’আরার ১৬৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন – “পূর্ববর্তীদের কিতাবসমূহে (তাওরাত ও ইঞ্জিল) এর উল্লেখ রয়েছে”। তাফসীরে ইবনে কাসিরের মধ্যে আছে- “হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে আরয করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে সকল গুন তাওরাতে উল্লেখ আছে, তা আমাকে বলে দিন। তখন তিনি আমাকে বললেন, হাঁ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কুরআন শরীফে যে সকল গুণাবলি দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে, এরকম অনেক গুন দিয়ে তাওরাতেও ডাকা হয়েছে। যেমন- “হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি একজন সাক্ষী, সু-সংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে”।

কুরআন শরীফে যেমন শেষ নবীর আগমন বার্তা ও তাঁর সুন্দর চারিত্রিক গুণাবলীর বর্ণনা পূর্বের ধর্মগ্রন্থসমূহে রয়েছে। অনুরূপ কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সু-সংবাদ ও তাঁর সাহাবীদের পরিচিতি ও দেওয়া হয়েছে। আর এই কথাগুলো আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআন শরীফের সুরা ফাতাহ এর ২৯ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করেছেন- “মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্ট কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদার প্রভাবের চি‎হ্ন পরিস্ফুট থাকবে। তাওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপ। আর ইঞ্জিলে তাদের বর্ণনা হল যেমন একটি চারাগাছ, যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতপর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে, যা চাষীকে আনন্দে অভিভূত করে যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন”।

ঈসা (আঃ) তাঁর কওমেকে সু-সংবাদ দিয়েছিলেন।

হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর কওমের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের আলোচনা করেছেন, এমনকি তিনি তাঁর কওমের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম মোবারক আহমদ হবে সেটাও বলে দিয়েছেন। আর এই কথাগুলো আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফের সূরা ছফ এর ৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন- “স্মরণ করুন মরিয়মের পুত্র ঈসা বলেছিলেন, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের কাছে প্রেরিত আল্লাহর রাসূল। আমার সামনে যে তাওরাত আছে, আমি তাকে সত্য কিতাব বলছি এবং আমার পরে আহমাদ নামের একজন রাসূল আসার সু-সংবাদ দিচ্ছি। অতঃপর সে যখন স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এল, তখন তারা বলল, এতো পরিষ্কার এক যাদু”। এখানে ঈসা (আঃ) কর্তৃক সু-সংবাদ প্রদত্ত সেই রাসূলের নাম বলা হয়েছে আহমদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত যুবায়র ইবনে মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার পাঁচটি প্রসিদ্ধ নাম রয়েছে, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি আল-মাহী আমার দ্বারা আল্লাহ কুফুরি ও শিরককে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। আমি আল-হাশির আমার চারপাশে মানব জাতিকে একত্রিত করা হবে। আমি আল-আক্বিব (সর্বশেষে আগমনকারী)”। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোবারক নাম এ কয়টিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং আরো বহু মোবারক নাম রয়েছে। যেমন শামায়েলে তিরমিযি ও মুসনাদে আহমাদে এসেছে- “হযরত হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার মদিনার কোন এক রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। তিনি বললেন, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি নবীউর রহমত (রহমতের নবী) আমি নবীউত তাওবা (তাওবার নবী), আমি মুকাফফী (পরে আগমনকারী), আমি হাশির (একত্রকারী), আমি মালাহিমের নবী (জিহাদকারী)”।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দোয়া ও ঈসা (আঃ) এর সু-সংবাদ প্রদানের কথা মুসনাদে আহমদ ও বায়হাকী শরীফে এসেছে- “হযরত ইরবাস ইবনে সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “আমি আমার পিতা (পিতৃপুরুষ) ইব্রাহীম (আঃ) এর দোয়া, ঈসা (আঃ) এর সু-সংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্ন যা তিনি দেখেছিলেন। আর এরূপ স্বপ্ন সকল নবীর মা দেখেছিলেন”। আল্লামা ইবনে হিশাম (রঃ) আসসীরাতুন নাবাবিয়ার মধ্যে বলেছেন- “হযরত আমেনা (রাঃ) যখন তাঁকে তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গর্ভে ধারণ করেন তখন তিনি স্বপ্নদেখেন যে, তাঁর থেকে নূরের জ্যোতি বের হচ্ছে। তিনি এর মাধ্যমে শাম দেশের বসরা নগরীর প্রসাদগুলো দেখতে পাচ্ছিলেন”।

 মদিনা বাসীদের তুব্বা হিমইয়ারী সু-সংবাদ প্রদান।

বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থে তুব্বা হিমইয়ারী পবিত্র মক্কা শরীফে গমন এবং পরবর্তীতে মদিনা শরীফে গমনের ইতিহাস পাওয়া যায়। আর যখন তিনি মদিনা শরীফে গমন করেছিলেন তখন মদিনা বাসীদের তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমনের সু-সংবাদ প্রদান করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটা চিঠি লিখেছিলেন। ঘটনাটি এরকম এসেছে- “আর তুব্বা হিমইয়ারী মদিনাবাসিদের সু-সংবাদ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন- হে ইয়াসরিববাসী! তোমরা সু-সংবাদ গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই আখেরী যামানার নবী মক্কায় জন্মগ্রহণ করবেন। আর তিনি হিজরত করে তোমাদের কাছে আসবেন। তোমরা এখানে অবস্থান করে তাঁর আগমনের অপেক্ষায় থাক। তিনি যখন তোমাদের নিকট এসে যাবেন, তোমরা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে,তাঁকে সাহায্য করবে। তাহলে তোমরা ইহকালে ও পরকালে কামিয়াব হবে। আমি একটি পত্র লিখে তোমাদের কাছে আমানত স্বরূপ রেখে যাচ্ছি। যখন তিনি তোমাদের কাছে আসবেন, আর তোমার তাঁর সাথে দেখা করবে, তখন আমার এই আমানত তাঁর কাছে পৌঁছে দিবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আগমন করলেন এবং হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাঃ) এর ঘরের সামনে স্বীয় উটনী হতে অবতরণ করলেন, তখন আবু আইয়ুব আনসারীকে বললেন- আমার আমানত আমার কাছে দাও।তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন আমানতের কথা বলছেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তুব্বা হিমইয়ারীর পত্র। তাঁর পত্র যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত মোবারকে আসল, তিনি তা পড়লেন- এবং এটায় লেখা ছিল- আমি একথার সাক্ষী দিচ্ছি যে, হযরত আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালার নবী। তিনি হচ্ছেন পবিত্র আত্মা। যদি আমার জীবন তাঁর আগমন পর্যন্ত দীর্ঘ হয় আমি তাঁর উযির হব এবং আমি হতাম তাঁর চাচাত ভাই ( এখানে উযির ও ভাই বলতে সাহায্যকারী হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন)। আমি তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করতাম এবং তাঁর অন্তর থেকে সকল দুশ্চিন্তা দূর করতাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জান্নাত লাভের সু-সংবাদ দান করলেন।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের মাসের উছিলায় আমাদেরকে সমস্ত খারাপী থেকে হেফাজতে রাখুন। আমাদের সবার অন্তরে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোহব্বত দান করুন। (আমিন)

লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান 
আরও সংবাদ