রহমতে আলম (সাঃ) : সু-মহান মর্যাদা (পর্ব চার)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মুযিজার অধিকারী। তাঁর মুযিজা হলো সমুদ্রের তরঙ্গমালার মত। তাঁর অসংখ্য মুযিজা রয়েছে, এর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মুযিজা হলো কুরআন শরীফ। কাফিররা যখন কুরআনকে পূর্বকালের উপকথা বা মুহাম্মাদের কথা বলে প্রত্যাখ্যান করতে লাগল তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলেন, এ কুরআনের মত একটি কিতাব রচনা করে নিয়ে আসতে। তারপর আল্লাহ তায়ালা চ্যালেঞ্জ করে বলেন সকল জিন এবং মানুষ মিলিত হয়েও যদি চেষ্টা করে তারপরও এ রকম একটি গ্রন্থ আনয়ন করতে পারবে না। মক্কার মুশরিকরা অনেক চেষ্টা করেছিল এরূপ কথা বানানোর জন্য কিন্তু তারা নিজেরা বানিয়ে নিজেরাই পছন্দ করেনি। সুতরাং এতে কুরআনের মর্যাদা এবং নির্ভুলতার প্রমাণ বহন করে, কুরআন আসমানী কিতাব কোন গণক, জ্যোতিষী বা কবির কথা নয় তাও প্রমাণিত হয় পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা বনী ইসরাঈলের ৪৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন- “আপনি বলুন, মানুষ ও জিনেরা যদি এই কোরআনের অনুরূপ কোন গ্রন্থ তৈরী করার জন্য একত্রিত হয় এবং একে অপরকে সাহায্য করে তবুও তারা তাঁর অনুরূপ গ্রন্থ তৈরী করতে পারবে না”।

তারা যখন এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারল না তখন আল্লাহ তায়ালা দশটি সূরার মত কিছু তৈরি করে আনতে বললেন। সূরা হুদের ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি স্বরচিত সূরা আনয়ন করো”। তারা যখন এ চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে পারল না তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে একটি সূরার কথা বলেও চ্যালেঞ্জ করে সূরা বাকারার ২৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন- “আর আমি আমার বান্দার উপর যা নাযিল করেছি, যদি তোমরা সে সম্পর্কে সন্দেহে থাক, তবে তোমরা তার মত একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাক্ষীসমূহকে ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও”। তারা যখন এ চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে পারল না তখন আল্লাহ তায়ালা মাত্র একটি বানী রচনা করার চ্যালেঞ্জ করে সূরা তুরের ৩৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন- “তারা তাহলে এর অনুরূপ একটি বাণী রচনা করুক, যদি তারা সত্যবাদী হয়”।

সব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে যখন তারা ব্যর্থ হলো, তখন আল্লাহ তায়ালা নিজেই তাদের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে সূরা বাকারার ২৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন- “অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনো করতে পারবে না”। সুতরাং সংক্ষিপত আলোচনা থেকে আমরা পরিষ্কার বলতে পারি কুরআন শরীফ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুযিজা সমুহের মধ্য সর্বশ্রেষ্ঠ মুযিজা। আর যাইনি সর্বশ্রেষ্ঠ মুযিজার মালিক তিনি অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ সু-মহান মর্যাদা অধিকারী।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হলেন সর্বশেষ নাবী।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নাবী। তাঁহার পরে আর কোন নাবীর আগমন হবে না। সূরা আহযাবের ৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নয়, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষ নাবী। আল্লাহ সবকিছুই ভালভাবে জানেন”। আল্লাহ তায়ালা যত নাবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন কারো মাধ্যমে দ্বীন পূর্ণ করে দেননি। কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে দ্বীন পূর্ণ করে দিয়েছেন। সূরা মাঈদার ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন- “আজ (আরাফাহ দিবস) তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম”। সুতরাং দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর আর কোন নাবী আসার সুযোগ বা প্রয়োজন নেই।

এখানে “খাতম” শব্দের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে ও আরবী ভাষাবিদরা প্রায় একই কথা বলেছেন। বিশেষ করে তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে এসেছে- অর্থাৎ: খাতম বলা হয় ঐ যন্ত্রকে যার মাধ্যমে সমাপ্তি সাধন করা হয়। যেমন তাবে বলা হয় ঐ যন্ত্রকে যার মাধ্যমে ছাপা হয়। এ হিসেবে “খাতামুন্নাবী” অর্থ হলো এমন ব্যাক্তি যার মাধ্যমে নাবী আগমনের ধারা সমাপ্তি করা হয়েছে এবং তাঁর পরে আর কোন নাবী নেই। আবার “খাতম” মোহরকে বলা হয়। আর মোহর সর্বশেষ কর্মকে বলা হয়। (যেমন পত্রের শেষে মোহর মারা হয়) অর্থাৎ নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে নবুয়তের ও রিসালাতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পর যে কেউ নাবী হওয়ার দাবী করবে, সে নাবী নয়, বরং মিথ্যুক ও দাজ্জাল বলে পরিগণিত হবে। উক্ত বিষয়ে হাদীস গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাতে সকল উম্মত একমত। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে হযরত ঈসা (আঃ) এর অবতরণ হবে, যা সহীহ ও সূত্রবহুল প্রসিদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। তবে তিনি নাবী হয়ে আসবেন না, বরং শেষ নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হয়ে আসবেন। যার ফলে তাঁর অবতরণ হওয়া খাতমে নবুয়তের আকীদা পরিপন্থী নয়। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কোন নাবীর আগমন হবে না, সেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই পরিষ্কার বলে দিয়েছেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নাবীগণের অবস্থা এমন, এক ব্যক্তি যেন একটি গৃহ নির্মাণ করল, তাকে সুশোভিত ও সুসজ্জিত করল, কিন্তু এক পাশে একটি ইটের জায়গা খালি রয়ে গেল। অতঃপর লোকজন এর চারপাশে ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল ঐ শূন্যস্থানের ইটটি লাগানো হল না কেন? নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমিই সে ইট। আর আমিই সর্বশেষ নবী”।

সহীহ বুখারী শরীফে আরেকটি হাদীসে এসেছে- “হযরত যুবায়র ইবনে মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার পাঁচটি (প্রসিদ্ধ) নাম রয়েছে, আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ, আমি আল-মাহী (আমার দ্বারা আল্লাহ কুফুর ও শিরককে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন), আমি আল-হাশির (আমার চারপাশে মানব জাতিকে একত্রিত করা হবে) ও আমি আল-আক্বিব (সর্বশেষে আগমনকারী)”। এভাবে সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফসহ বহু হাদীসের কিতাব ও বিভিন্ন আকীদার কিতাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নাবী হওয়ার পক্ষে অনেক দলিল রয়েছে। বিশেষ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদার কিতাব “আকীদাতুত তাহাবীর” মধ্য এসেছে- অর্থাৎ: হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নাবী এবং মুত্তাকীদের ইমাম। আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সকল রাসূলদের সর্দার এবং সমগ্র জাহানের প্রতিপালকের একান্ত বন্ধু।

সুতরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের পর থেকে কিয়ামাত পর্যন্ত যারা নাবী হওয়ার দাবী করবে এবং তাদের যারা সমর্থন করবে সবাই মিথ্যুক, ভন্ড ও ভ্রান্ত। এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা। এই বিষয়ে আকীদাতুত তাহাবীর মধ্য স্পষ্ট বলা হয়েছে- অর্থাৎ: হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়াতের পর প্রত্যেক নবুয়াতের দাবীদার ভ্রান্ত-ভ্রষ্ট এবং আত্ম পূজারী।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন যিন্দা নাবী। পবিত্র মদিনা শরীফের সবুজ মিনারের নিচে স্বায়ীত আছেন রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

——-চলবে ইনশা আল্লাহ

লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কেকে 
আরও সংবাদ