প্রেয়িং মেন্টিস


চলে গেল সে!
না,কোনো মানুষ নয়।একটা ক্ষুদ্র পতংগ । প্রকৃতির ছোট্ট এক সন্তান। সে ক্ষুধাতুর নাহলে অন্য কোনো প্রাণ হত্যা করেনা। কিন্তু তার চেয়ে ছোট বা দুর্বল পোকামাকড় হত্যা করে চিবিয়ে খেয়ে তাকেও বেঁচে থাকতে হয়।
প্রকৃতিজাত এক নিষ্ঠুর নিয়ম এই ফুডচেইন। এটা কি কেবল মাংশাসীদের নিষ্ঠুরতা? তৃণভোজীদের নিষ্ঠুরতা কম কিসে? যখন একটা তৃণগুচ্ছকে দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খায় কোনো গবাদি বা মৃগ তখন ঘাসলতা বা গাছবৃক্ষ হইচই করে,কান্না করে। তাদের এই কান্নার শব্দ শুনতে পায় কাছের তৃণেরা,গাছেরা। তারা পাতায় নিষিক্ত করে তখন এক ধরণের তেতো বা বিষাক্ত ক্ষার,যা খেতে আর রুচি হয়না খাদক পশুটির। একথা আগে জানতামনা,আমার সবজান্তা ছেলে বলেছে।সত্যমিথ্যা জানিনা। সে আরও বলে যে,জীবজগতে মানুষ নাকি সবচেয়ে হিংস্র আর নিষ্ঠুর। মানুষের নিষ্ঠুরতার তুলনা অন্য কোনো প্রাণীর সাথে চলেনা। আমরা মানবজাতির পূর্বপুরুষেরা নাকি অন্য অন্য মানবপ্রজাতিদের ঝাড়েবংশে উজাড় করে দিয়েছে।নিয়ান্ডার্তাল মানব প্রজাতিকে। ওরা নাকি গায়েগতরে অনেক সমর্থ ছিল আমাদের চেয়ে। দীর্ঘ হিমযুগ তারা পাড়ি দিয়েছিল। তবু তারা আমাদের প্রজাতির সাথে কায়দা-কানুনে ও ভাষার অপরিপক্ষতার কারনে এবং আরও বহুবিধ কারনে পেরে উঠেনি। তারা নির্মূল হয়ে গেছে ধরার বুক থেকে। প্রাগৈতিহাসিক যুগতো বটেই,ইতিহাসের অলিগলিতে আমাদের হিংস্রতার কোনো নিরিখ নাই !
কিন্তু মানুষের মমতার গল্প কি কম আছে ধরাধামে? এরকমই এক অকারণ মমতার গল্প এটি। একটি ক্ষুদে পোকার গল্প।প্রেয়িং মেন্টিস পোকাটার নাম।আর অদ্ভুত সুন্দর রাজকীয় চালচলন এই পতংগটার।পোকা যতই রাজন্য স্বভাবের হোক,কেউ কি ওটা পোষে ?আমার ছেলে সেই ছোট বয়েস থেকেই এই পোকার খুব ফেন,ওটার কারেক্টার সে খুব পছন্দ করে।এত কষ্ট করে লালনপালন করা হয়েছিল প্রেয়িং মেন্টিস পোকাটাকে কয়েক মাস ধরে, কিন্তু একদিন মরে গেল ! এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। কানাডার ওয়েদারে তাপমাত্রা হিমাংকে গেলেই কোনো কীটপতংগ প্রকৃতির কাননে বেঁচে থাকেনা। কিন্তু এটি বেঁচেছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ঘরের ভেতর নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় সে কিছু বোনাস আয়ু ভোগ করেছিল ।
আমরা সবাই যখন কানাডার অপূর্ব সামারটা উপভোগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ঠিক সেই সময় লকডাউনের ঘোষণা আসে। ভেবেছিলাম,এই কয়েকটা দিন একটু ঘরে থাকা হোক,দেখতে দেখতে সবকিছু আবার সুনসান ঠিক হয়ে যাবে বিলক্ষণ। লকডাউনের গোডার দিকে সবসময় ঘরেই থাকতাম । খুব খারাপ লাগত ! ভয়ে, আতংকে যেন দুমড়েমুছড়ে সবাই গৃহবন্দি হয়েছিলাম। ব্যাকইয়ার্ডেও বের হতামনা। অদৃশ্য শত্রুর ভয়ানক এক ভীতি আমাদের তাড়িত করে। এখনও অনেক ভয়াবহ অবস্থা আমাদের এই শহরে সংক্রমণের দ্বিতীয় তরংগে। কিন্তু কিছুটা মনের তেজ সঞ্চিত হয়েছে এতদিনে। কাহাতক আর গৃহকয়েদে পড়ে থেকে খাবি খাওয়া যায় ?
সেই কবে গৃহবন্দি হয়েছিলাম।মনে হচ্ছে যুগ যুগ ঘুরে আসছে।প্রায় সব মানুষেরই ছন্দপতন ঘটেছে জীবনযাত্রায়।একটুখানি প্রাণস্পন্দন থাকা চাই।কিন্তু কোথায় যেন জীবনের সুরে ঘাটতি পড়েছে। মার্চ কি এপ্রিল হবে, কিছুটা ভয় কাটানোর জন্য দূরের পাহাড়ে – জঙ্গলে আমরা চারজন বেরিয়ে পড়তাম। আমার ছেলেমেয়ে দুইজন ভয়ংকর সাহসী,কোন কিছুর প্রতি ভয়ভীতি যেন নেই এদের,বেরিয়ে পড়তে চায় তারা বন-বাদাড়ে হলেও। তাদেরকেই লকডাউনের শূন্যতা থেকে একটুখানি মুক্ত করতে প্রায় প্রতিদিনই বেরিয়ে পড়তাম। আমরা যেতাম বহু দূরে, যেখানে কোন মানুষের সমাগম নেই, নেই কোন কোলাহল। করোনা যে সবাইকে পরষ্পর থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে , মানুষের সমাগমে যাওয়া তাই নিষিদ্ধ। আমরা চলে যেতাম গাছগাছালির কাছে,বুক ফুলিয়ে দম নিতাম প্রাণ ভরে । নদীর তীরে, পাহাড়ের পদতলে দাঁড়িয়ে নয়ন ভরে দেখতাম বিচিত্র প্রকৃতি,কানপেতে শুনতাম পাখিদের কিচিরমিচির। অনেকক্ষণ নিরুদ্দেশ তেপান্তরে কাটিয়ে মনকে কিছুটা প্রফুল্ল করে ঘরে ফিরতাম।
একদিন বিকালবেলা চলে গেলাম হাল নামের একটি শহরের কান্টিসাইটে। নূড়িপাথর বিছানো একটি জায়গায়। নানান রংয়ের, নানান সাইজের পাথর। পাথরের দৃষ্টিনন্দন বাহারি রং আমাদের মনকে যেন রাংগিয়ে দেয়। আমরা চপল কিশোর-কিশোরীদের মত ইতিউতি ছুটতে থাকি,গড়াগড়ি যাই।মনে হচ্ছিল সব কালারফুল পাথরগুলো নিয়ে যাই আমাদের বাগানের জন্য।বাগানকে ন্যাচারাল আদল দিতে পাথরের নাকি জুড়ি নাই।বাগান সজ্জায় পাথরের একশ এক রকমের ব্যবহার আমার হাজবেন্ড ছাড়া আর কে জানে,উনি মহা আনন্দে পাথর কুড়োতে লেগে যায়।এখানে পাথরের রাজ্যের চারিদিকে আবার তৃণঘেরা জলাশয়। অদ্ভুত এক মনোরম দৃশ্য। প্রকৃতির এই অপূর্ব দৃশ্য প্রাণভরে দেখতে দেখতে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে যখন ঘরে ফেরত আসব ভাবছি ঠিক সেই মূহুতে আমার ছেলে একটা পোকা ধরে আনে। সে যখন ছয় বছরের ছিল সেই সময়ে জংগল চষে ঠিক এরকম একটা পোকা ধরে এনে পোষেছিল। এই পোকাটা নাকি খুব ইন্টেলিজেন্ট।সে বলে,মাম ,এটার নাম হলো praying mantis।তোমার মনে নাই আমি আরেকবার একটাকে পেট বানিয়েছিলাম ? বহুদিন পরে এই পোকাটা পেয়ে সে যে কী মহাখুশি। ছেলে ও মেয়ে দুইজন হাতের উপর রেখে পোকাটাকে সযত্নে ঘরে নিয়ে আসল। ছেলের বাবা ওদের চেয়ে কম কিসে? পোকার থাকার ব্যবস্থা তো করতে হবে। তাই তিনজন মিলে পোকার ঘর বানানোর কারুকাজ শুরু করলেন। ঘর বানানো হয়ে গেলে পোকা-মহাশয় মহাসুখে-শান্তিতে বসবাস শুরু করলেন। নো ফুডচার্জ, নো হাউসরেন্ট ।দিব্যি রাজার হাল। ছোটছোট মাকড়শা,ঘাসফরিং, মাছি -এগুলো নাগালে দিলেইনা তিনি চিবিয়ে খাবেন। আবার জ্যান্ত পোকামাকড় হতে হবে, মরা পোকামাকড় খাবেন না তিনি। দিনে একবেলা খাবে। একদিন পর পর দিলেও নাকি চলবে। এসবই আমার ছেলে ভাল জানে। পোকাটার দেহের ভাষা,মনের ভাষা সে নাকি পড়তে পারে। এখন বাবা ও ছেলের নতুন জব কার্ড এন্ট্রি হলো- প্রতিদিন রাজাধিরাজ এই পোকাটার জন্য জ্যান্ত খাবার জোগাড় করা।ঘুম থেকে জেগেই ছেলে আমার বলবে, মাম, বাবা কোথায়?
কেন? কি হইছে?
বাবাকে খুব দরকার।
আমি বলি,বাবা গার্ডেনে।
সে চিৎকার দিয়ে ডাকে,বাবা, বাবা,কিছু কি ধরেছ আমার পোকাটার জন্য।
না বাবু। জিবলক ব্যাগ দাও,ধরে দিচ্ছি।
এসব দেখে মেজাজ আমার সপ্তগ্রামে চড়ে। ভাতের চাল ধুতে
গিয়ে ঠান্ডা পানির বদলে গরম পানির টেপ ছেড়ে দিয়ে নিজের হাত পুড়িয়ে ফেলি।জানলার কাঁচ দিয়ে আমার চড়া মেজাজের চোখ দেখে ছেলে বলে ,কি হইছে মাম ? পোকাটার খাবার লাগেনা বুঝি ,মাম?
অনেক ছুটাছুটি কসরতের পর বাপ-বেটাতে মিলে একটা জ্যান্ত মাছি জিপলক ব্যাগে আটকে রাজপুত্র পোকার ঘরে ছাড়া হয়। উনি নিজে এগিয়ে গিয়ে খাবার ধরবেননা, ওরা উড়াল দিয়ে বা হেঁটে উনার নাগালে গেলে তবেইনা ঘাড় মটকে ধরে মাথা থেকে চিবিয়ে খেতে শুরু করবে প্রেয়িং মেন্টিস পোকা। ঐদিন দেখেছি, মাছিটার প্রাণ বাঁচানোর আর্তনাদ। পোকাটা চিকন দুই হাত দিয়ে অসহায় মাছিটার মাথাটা শুধু ধরে রেখেছে। প্রায় পাঁচ-ছয় মিনিট মাছি্টা দুই পাখা প্রাণের তরাসে ঝাপটায় আর করুণ সুরে কান্না করে । কি যে খারাপ লাগছিল। ভাবলাম,দুইটারই প্রাণ আছে কিন্তু একটা আরেকটাকে হত্যা করে খেয়ে বেঁচে থাকতে হয়। প্রতিটি প্রাণই সে মানুষ হোক আর কীট-পতংগ ,পশুপাখি হোক বিপদকালে জীবন বাচাঁনোর কীযে এক আকুতি, আত্মরক্ষার প্রাণপন চেষ্টা তা মাছিটার চিৎকার শুনে উপলব্দি করলাম আরেকবার।ভেবেছিলাম ডিভিও করে রাখি কিন্তু নিষ্টুরতার চিত্র ধারণ করতে মন সায় দিলনা।
আমার ছেলে আবার কি করল ,তিনদিন পরে পোকাটাকে আমাদের ব্যাকইয়ার্ডের কাশবনে ছেড়ে দেয় নিজে নিজে চরে খাবার জন্য। পোকামাকড়ে আমার ভীষণ ভয় । যখন পোকাটা ওর ঘরে হাঁটাহাটি করত তখন আমর ছেলে আমাকে বলে, দেখনা .মাম, কি সুন্দর করে হাঁটছে ,দেখো। একটা কাঁচের জারে পোকাটার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, ঢাকনাটা শতসহস্র ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছিল যাতে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট না হয়।আমার ছেলে পোকাটা নিয়ে, ওটার ইন্টেলিজেন্স নিয়ে যওসব কেচচাকাহন বলতো। হাতে নিয়ে বসে থাকত, আমার পাশে এসে বলত,মাম, এই দেখ কি সুন্দর করে তাকাছে, সেভেন্টি ডিগ্রী এ্যাংগেলে সে মাথা বেন্ড করে সবদিক দেখতে পারে,তাকাতে পারে, তুমি লাইক কর না এটাকে, মাম?
আমি বলি ,করি।
তাহলে হাত দিয়ে ধরনা কেন?মাম, প্লিজ একটু টাচ করো, দেখনা মাথা ঘুরিয়ে তোমাকে দেখছে।
আমি আস্তে করে কেটে পড়ি। মনে মনে ভাবলাম, এত জংলি বাছচাগুলো আমার কেমনে হল? বাপের মত মনে হয়। ভয়ে কিছু বলতামনা, যদি গায়ের উপর ছেড়ে দেয়। টেম্পার যখন একশো চার, তখন গরম গরম সুপ খেয়ে মেজাজ ঠান্ডা করি আর দাঁত কিড়মিড় করি।
কাশবনে পোকাটা ছেড়ে দিয়ে ছেলে আমাকে বলে গেল, মাম ,পোকাটাকে দেখে রেখো, কোথাও যেন নাহারায়। বলেই সে খেলতে চলে গেল। বেশ কযেক বার খেয়াল রেখেছি। দুই তিনবার দেখেছি।রোদের খরতাপ থেকে বাঁচতে মনে হয় একটা পাতার তলায় ঝুলে মৃদু বাতাসে দুলছে সে।পাতার তলায় ঝুলে থাকা তার শিকার ধরার একটা কায়দাও বটে।
অনেকক্ষণ পর পড়তি বিকেলে আমি ভুলে গেলাম পোকাটার কথা।সন্ধ্যায় ছেলে খেলার মাঠ থেকে ঘরে ফিরলে আমার মনে পড়ল ,কিন্তু পোকাটাকে আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও।সারা ব্যাকইয়ার্ড তন্নতন্ন করে খোঁজে দেখা হল কিন্তু ক্ষুদে পতংগকে কি পাতার আড়াল থেকে সহজে দেখা সম্ভব? ছেলে খুব মন খারাপ করে। বলে,মাম, তোমাকে তো বলে গেছি দেখবে। আমি এক গোপন অপরাধবোধে চুপ থাকি। পরের দিনও খোঁজা হল। দেখা গেল কি ওদের চেয়ে আমারই মন খারাপ বেশি। দিন রাত আমিই চুপে চুপে নিঃশব্দে বাগানে গিয়ে খোঁজে মরি। ছেলেকে বুঝতে দেইনা। আস্তে আস্তে আমার মায়া পড়ে যায় পোকাটার জন্য।ওনেক তালাশ করেও না পেয়ে মনে করেছি কোনো পাখি ধরে খেয়ে নিয়েছে বা উড়াল দিয়ে অন্য কোথাও পালিয়েছে কি মরে গেছে। কিন্তু ছেলে বলে, না ,মাম, ও উড়াল দিতে পারবে না বেশিদূর।সে তো এখনও বেবী,পাখা পুরোপুরি গজায়নি। পাখিরাও খাইতে পারবে না,কেমোফ্লাইজ হয়ে যায় ওরা পাতার সাথে, তখন পাখিগুলো দেখতে পারে না।
তাহলে মরে গেছে।
না মাম ,মরেনি ।সে এই বাগানেই আছে।
ছেলের আমার স্থির বিশ্বাস তার পোকাটা বাবার বাগানের কোথায়ও লুকিয়ে আছে।আমি পছন্দ করি না পোকামাকড়, কিন্তু ছেলের কথায় বেশ উদগ্রীব হলাম,সময় পেলেই গাছ-গাছালি তন্নতন্ন করে তালাশ করি। না,কোথাও নাই!
কিন্তু ছেলের কথা সত্যি হল,তিন দিন পর ওকে পাওয়া গেল।সেদিন দুপুরবেলা ওদের বাবা দেখলেন কাশফুলের ডগায় বসে আকাশ দেখছেন রাজপুত্তুর। ঐদিনও ছেলে আমার ফুটবল খেলতে গিয়েছিল, মেয়েটা কোন ফাঁকে যে ভাইয়াকে টেক্স করে দিয়েছে। পোকাটা পাওয়া গেছে। সে পাল্টা উত্তর দিল, Tell baba, I am coming very soon. Please, baba don’t lose it, keep it on your hand.. If possible could you wash his house. Because it’s dirty. টেক্স পডতে পডতেই পাচঁ মিনিটের মাথায় ছেলে মাঠ থেকে খেলার বন্ধুদের নিয়ে হইচই করে হাজির হল। হারানো ধন পোকাটাকে ফিরে পেয়ে মহা আনন্দে বাবাকে ধন্যবাদ দেয় আমার ছেলে।
আমি অবাক হয়ে আমার ছেলের আনন্দ দেখি। সে যেন সেই কিশোরটি রয়ে গেছে। সে সারা ঘরময় পোকাটা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।এজন্য বকাঝকা করিনা । ওটা না থাকলে ল্যাপটপ বা সেলফোনে মজে থাকবে।ডাকাডাকি করলে বলবে,অন্লাইন লেকচার শুনছি প্রফেসরের,মাম।
একদিন সে বলে, মাম, এইটা বেশীদিন বাচঁবে না।
ও নো বাবা? কেন?
এটাই নিয়ম,ওদের লাইফটাইম ভেরী সর্ট ,মাম।অনেক আগেই মরে যেত। পোকাটা এতদিন আমাদের ঘরে ছিল, তাই বেচেঁ আছে। আমার এমন মনোভাব দেখে ছেলে আমার বিস্মিত হয়।
আমি বলি,সত্যি মরে যাবে ? ইস কষ্ট লাগছে !
কেন, মাম ? তুমিতো লাইক কর না ?
লাইক করি কিন্তু ধরতে চাইনা, তাই বলে পোকাটা মরে যাক এইটা চাইনা?
ও আচ্ছা ! আমি মনে করেছি, তুমি পছন্দ কর না , তাই মরে গেলে তুমি খুশি হবে ।
কয়েকদিন পর পর ঘরের ভিতরে হাউসপ্লান্টের উপর ছেড়ে দিত ওটাকে । ঘুরে বেড়াত ওটা হাউসপ্লান্টগুলোর পাতায় পাতায়। কখনো সোফার নিচে, কখনও টবের গোড়ায়, কখনও গাছের পাতার সাথে ক্যামোফ্লাইজ হয়ে থাকত।দেখতে দেখতে ঠান্ডা এসে যাচ্ছে।তখন মাছি মক্ষিকা কীটপতংগের দেখা পাওয়া যায়না। ঠান্ডা পড়লে কি খাওয়াবে প্রেয়িং মেন্টিসকে ?ওরতো জ্যান্ত খাবার চাই। আমাদের জন্য রান্না করতে করতে পোকাটার খাবারের ভাবনা হত আমার।পোকাটা যেন আমার ঘরের সদস্য হয়ে গেছে এতদিনে।কিন্তু ততদিনে তার ইহলোক ভ্রম।

লেখকঃ কানাডা থেকে

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ