ভাঙ্গা ব্রীজের কারণে এলাকার নামই এখন ভাঙ্গাপুল!
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নস্থ এলাকার মাঝামাঝি সংযোগ সড়কে প্রায় দুই বছর ধরে একটি ব্রীজ ভেঙ্গে পড়ে আছে। যার কারণে এই দুই উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়ন থেকে রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সড়কের সংযোগস্থলে একটি ব্রিজ ২ বছর যাবৎ কতৃপক্ষের চরম অবহেলায় ধ্বসে পড়ে আছে।
এতে ওই দুই উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ব্রীজ ভাঙ্গা থাকায় স্থানীয় জনসাধারণ নিজেরা চাঁদা তুলে একটি সাঁকো তৈরী করে অনেক ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন নিয়মিত।
স্কুলের ছোট ছোট শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দুই উপজেলার বড় বড় হাটবাজারে ক্রেতা বিক্রেতা আসা যাওয়া করছেন প্রতিনিয়ত। যার ফলে ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই।
জানা যায়, ডানকান ব্রাদার্স সংস্থার অধীনস্থ কুলাউড়ার বরমচাল চা বাগান ও রাজনগরের করিমপুর চা বাগানের ভিতর দিয়ে ‘উপজেলা সড়ক’ নামে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা বাগানের ভিতর দিয়ে রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগান হয়ে মুন্সিবাজার, মৌলভীবাজার ও সিলেটে যাতায়াতের সুবিধার্তে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৮/০৯ অর্থ বছরে তৎকালীন বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাহজাাহান এই সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করলে এলজিইডির বাস্তবায়নে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
সড়কটি পাকাকরণ হওয়ায় কম সময়ে যাতায়াতের জন্য ভারী যানবাহনসহ বিভিন্ন ছোট বড় মালবাহী গাড়ি এই সড়কটি ব্যবহার করছে। এতে ওই পুরনো ব্রীজ গুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় এক সময় এই ব্রীজটি ধ্বসে পড়ে।
এই সেতু দীর্ঘদিন যাবৎ ভাঙ্গা থাকায় এই এলাকাকে সবাই ‘ভাঙ্গাপুল’ নামেই এখন চিনে।
এলাকায় গিয়ে দেখাযায়, সেতু ধ্বসে পড়ায় বিকল্প সাঁকো দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন মানুষ। ভারী যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটলেও ছোট ছোট যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ওই বাশের সাঁকোর ওপর দিয়ে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, আপাতত চলাফেরার জন্য পুঞ্জি, চা বাগান ও তারা সবাই মিলে চাঁদা তুলে এই সাঁকো নির্মাণ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মিয়া বলেন, কাজের তাগিদে প্রায় সময় আমাকে এই রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। গেল কদিন আগে মোটরসাইকেলে এই সাঁকো পাড়াপাড়ের সময় আমি দূর্ঘটনার শিকার হই। কাদার মধ্যে পিচ্ছিল রাস্তায় স্লিপ খেয়ে আমি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি।
ওই সড়কে নিয়মিত গাড়ি চালানো স্থানীয় অটোচালক শ্যামল বলেন, বিগত দুই বছর ধরে আমাদের এই ব্রীজটা ভাঙ্গা। ব্রীজ ভাঙ্গা থাকায় আমাদের চলাফেরায় অনেক অসুবিধা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় কাদা জমে থাকায় এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তাই ব্রিজের দুই পাশে আলাদা আলাদা গাড়ি থাকে। ব্রীজের এপার থেকে হেটে ব্রীজ পার হয়ে অন্য পাড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠতে হয়।
বাগান ঘুরতে আসা পর্যটক রিপন আহমদ বলেন, আমরা বরমচাল বাগানে ঘুরতে এসেছি। গাড়ি নিয়ে এই ব্রীজ পারাপার হওয়া মোটেও সম্ভব হচ্ছেনা।
রাজনগর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন বলেন, এ রাস্তা দিয়ে তো আমাদের কোনো সাঁকো নেই। আমাদের কাছে এরকম কোনো অভিযোগ আসেনি।
কুলাউড়া উপজেলার নব-নিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমেদ(সলমান) বলেন, আমরা নিজেরা এই জায়গা পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়রা চলাচলের জন্য বাঁশ দিয়ে একটা অস্থায়ী ব্রিজ করেছে। আমরা ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে এই ব্রিজের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। করোনার কারণে বরাদ্ধ আসতে বিলম্ব হচ্ছে। বরাদ্ধ আসলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।
মৌলভীবাজার জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজিম উদ্দীন সরদার বলেন, পুরো জেলার ৭ টা ব্রীজের প্রস্তাব আমরা পাঠিয়েছি। এই ব্রীজটা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে খুব শিঘ্রই বাস্তবায়ন হবে। তারপরেও আমি এটা পরিদর্শন করে দেখবো।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

