রহমতে আলম (সাঃ) : সু-মহান মর্যাদা (পর্ব পাঁচ)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন হায়াতুন্নাবী তথা যিন্দা নাবী। পবিত্র মদিনা শরীফের সবুজ গম্বুজের নিচে স্বায়ীত আছেন রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কুরআন হাদীসের বহু দলিল দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদার কিতাব সমূহে বিস্তারিত বর্ননা করা হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হায়াতুন্নাবী তথা যিন্দা নাবী। এমনকি সকল নাবী রাসূল তাদের নিজ নিজ কবরে জীবিত অবস্থায় আছেন। সুনানে ইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ শরীফসহ বহু হাদীসের কিতাবে সহীহ সনদে এসেছে- “হযরত আওস বিন আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শুক্রবার দিন হচ্ছে সপ্তাহের মধ্যে উত্তম দিন। এদিন হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনই শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে এবং এদিনই কিয়ামাত সংঘটিত হবে। অতএব তোমরা এদিন আমার প্রতি অধিক সংখ্যায় দুরূদ ও সালাম পেশ করো। কেননা তোমাদের দুরূদ আমার সামনে পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের দুরূদ আপনার নিকট কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা নাবী গণের দেহ ভক্ষণ যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন”।

 রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হবেন মাকামে মাহমুদের অধিকারী।

মাকামে মাহমুদ শব্দদ্বয়ের অর্থ হচ্ছে প্রশংসনীয় স্থান। এই মাকাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্যেই বিশেষভাবে নির্দিষ্ট। যা অন্য কোন নাবীর জন্যে নয়। সূরা বনী ইসরাঈলের ৭৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “নিজের জন্য অতিরিক্ত ইবাদত হিসেবে কিছু রাত্রিজাগরণ করবে। তোমার প্রভু তোমাকে এক প্রশংসিত স্থানে উন্নীত করবেন”।

মাকামে মাহমুদের তাফসীর প্রসঙ্গে বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত আছে। ফাতহুল কাদীরের মধ্য এসেছে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, এ হচ্ছে “বড় শাফায়াতের মাকাম”। হাশরের ময়দানে যখন সমগ্ৰ মানব জাতি একত্রিত হবে এবং প্রত্যেক নাবীর কাছেই শাফায়াতের দরখাস্ত করবে, তখন সব নাবীই শাফায়াত করতে অপারগতা প্রকাশ করবেন। তখন কেবল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্ৰ মানবজাতির জন্যে শাফায়াত করবেন। এই দিন লোকেরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে প্রত্যেকেই তার নিজের নাবীর কাছে যাবে। তারা বলবে, হে অমুক (নাবী)! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফায়াত করুন। হে অমুক (নাবী)! আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফায়াত করুন। (কিন্তু তারা কেউ শাফায়াত করতে রাযী হবেন না)। শেষ পর্যন্ত শাফায়াতের দায়িত্ব এসে পড়বে নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর।

সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামাতের দিন লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। প্রত্যেক নাবীর উম্মাত স্বীয় নাবীর অনুসরণ করবে। তারা বলবে হে অমুক (নাবী)! আপনি সুপারিশ করুন। হে অমুক (নাবী)! আপনি সুপারিশ করুন। (কেউ সুপারিশ করতে চাইবেন না)। শেষ পর্যন্ত সুপারিশের দায়িত্ব নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর পড়বে। আর এ দিনেই আল্লাহ তায়ালা তাঁকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন”। সহীহ বুখারী শরীফের আরেকটি হাদীসে এসেছে- “হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শোনার পর এ দোয়া পড়বে, অর্থ: (হে আল্লাহ! এ পরিপূর্ণ আহ্বানের এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ওয়াসীলা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান কর, প্রতিষ্ঠিত কর তাঁকে মাকামে মাহমুদে, যার ওয়াদা তুমি করেছ) ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য আমার শাফায়াত অবধারিত হয়ে যাবে”।

হযরত ইমাম কুরতুবী (রহঃ) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে চারটি মত নিয়ে এসেছেন। সঠিক কথা হলো কিয়ামতের দিন যখন মানুষ দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করবে কিন্তু তাদের বিচার ফায়সালা শুরু হবে না তখন সকলে মিলে হযরত আদম (আঃ) এর কাছে যাবে, যাতে তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে সুপারিশ করে বিচার-ফায়সালার কাজ শুরু করান। এভাবে তারা হযরত নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসাসহ সকল নাবীদের কাছে যাবে কিন্তু কেউ সুপারিশ করার দুঃসাহস পাবেন না। তখন সকলে নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসবে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় পড়ে যাবেন। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা তোলুন। কি চান? বলুন, আপনাকে দেয়া হবে। সুপারিশ করুন, কবুল করা হবে। তখন সকল মানুষের বিচার ফায়সালা শুরু করার জন্য সুপারিশ করবেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এমন একটি স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন যা পাওয়ার জন্য আদম সন্তানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই কামনা করবে। এটাকেই বলা হয় বড় শাফায়াত।

তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ক্বিয়ামাতের দিন আমি আদম-সন্তানদের ইমাম (নেতা) হব, এতে অহংকার নেই। হামদের (আল্লাহ তায়ালার প্রশংসার) পতাকা আমার হাতেই থাকবে, এতেও গর্ব নেই। সে দিন আল্লাহ তায়ালার নাবী আদম (আঃ) এবং নাবীগণের সকলেই আমার পতাকার নীচে থাকবেন। সর্বপ্রথম আমার জন্য মাটিকে বিদীর্ণ করা হবে, এতে কোন অহংকার নেই”।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হবেন জান্নাতে প্রথম প্রবেশকারী।

জান্নাতে প্রবেশীকারীদের মধ্যে প্রথম সৌভাগ্যবান হবেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিরমিজী শরীফের হাদিসে এসেছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- কিয়ামাত দিবসে আমিই হব প্রশংসার পতাকা বহনকারী তাতে কোন গর্ব নেই। কিয়ামাতের দিন আমিই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী এবং সর্ব প্রথমে আমার শাফায়াতই ক্ববূল হবে, তাতেও কোন গর্ব নেই। সর্ব প্রথমে আমিই জান্নাতের (দরজার) কড়া নাড়ব। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য তাঁর দরজা খুলে দিবেন, আমাকেই সর্বপ্রথম জান্নাতে পাঠাবেন এবং আমার সাথে থাকবে গরীব মুমিনগণও, এতেও গর্বের কিছু নেই। আমি আগে ও পরের সকল লোকের মধ্যে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত, এতেও গর্বের কিছু নেই”।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হলেন কাউছারের মালিক।

আল্লাহ তায়ালা সূরা কাউছার নামে একটি সূরা নাযিল করে বলেছেন- “আমি আপনাকে কাউছার দান করেছি (আপনার জন্য জান্নাতে কাউছার নামক নহরটি বরাদ্দ করে রেখেছি)”।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ সহ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে কাউছারের ঝর্ণাধারার কথা বর্ণিত হয়েছে। আমরা উল্লেখযোগ্য কয়কটি হাদীস শরীফের আলোকে হাউযে কাউছার সম্পর্কে জানব ইনশা আল্লাহ। সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ উবাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়শা (রাঃ) কে আল্লাহ তায়ালার বাণী (ইন্না আয়তাইনা কাল কাউছার) এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন, কাউছার একটি নহর যা তোমার নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রদান করা হয়েছে। এর দুটো পাড় রয়েছে। উভয় পাড়ে বিছানো আছে ফাঁপা মোতি। এর পাত্রের সংখ্যা তারকারাজির মত”। সহীহ বুখারী শরীফের আরেকটি হাদীসে এসেছে- “হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আকাশের দিকে নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিরাজ হলে তিনি বলেন, আমি একটি নহরের ধারে পৌঁছলাম, যার উভয় তীরে ফাঁপা মোতির তৈরি গম্বুজসমূহ রয়েছে। আমি বললাম, হে জীব্রাঈল! এটা কী? তিনি বললেন, এটাই কাউছার”। সহীহ বুখারী শরীফের অপর হাদীসে এসেছে- “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিঁনি তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউছার সম্পর্কে বলেছেন যে, এটা এমন একটি কল্যাণ যা আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন। বর্ণনাকারী আবূ বিশর (রহঃ) বলেন, আমি সাঈদ ইবনে যুবায়ের (রহঃ) কে বললাম, লোকেরা ধারণা করে যে, কাউছার হলো জান্নাতের একটি নহর। এ কথা শুনে সাঈদ (রহঃ) বললেন, জান্নাতের নহরটি নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেয়া কল্যাণের একটি”।

সহীহ মুসলিম শরীফ ও মুসনাদে আহমাদে এসেছে- “হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে আমাদের সামনে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ তার মধ্যে তন্দ্রা অথবা এক প্রকার অচেতনতার ভাব দেখা দিল। অতঃপর তিনি হাসিমুখে মাথা উঠালেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার হাসির কারণ কি? তিনি বললেন, এই মুহুর্তে আমার নিকট একটি সূরা নাযিল হয়েছে। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহ সহ সূরা আল-কাউছার পাঠ করলেন এবং বললেন, তোমরা জান, কাউসার কি? আমরা বললাম, আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার রব আমাকে এটা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ আছে এবং এই হাউযে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্ৰ সংখ্যা আকাশের তারকাসম হবে। তখন কতক লোককে ফেরেশতাগণ হাউয থেকে হটিয়ে দিবে। আমি বলব, হে রব! সে তো আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার পরে তারা নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল”।

মুসনাদে আহমাদের অন্য বর্ণনায় এসেছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমাকে কাউছার দান করা হয়েছে, সেটা হচ্ছে, প্রবাহিত একটি নহর। যা কোন খোদাই করা বা ফাটিয়ে বের করা হয়নি। আর তার দুই তীর মুক্তার খালি গম্বুজ। আমি তার মাটিতে আমার দুহাত মারলাম, দেখলাম তা সুগন্ধি মিস্ক আর তার পাথরকুচি মুক্তোর”। তাবরানী শরীফের হাদীসে এসেছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- কাউছার হচ্ছে এমন একটি নাহর যা আল্লাহ আমাকে জান্নাতে দান করেছেন, তার মাটি মিসকের, দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও সুমিষ্ট, এতে এমন এমন পাখি নামবে যেগুলোর ঘাড় উটের ঘাড়ের মত। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এগুলো তো খুব সুস্বাদু নিশ্চয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা এগুলো খাবে তারা আরও কোমল মানুষ”।

মোটকথা হচ্ছে, হাউযে কাউছারের অস্তিত্ব ও বাস্তবতা অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। নাবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রায় ত্ৰিশ জনের বেশী সাহাবী এ সমস্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, কাউছার ও হাউয একই বস্তু নয়। হাউযের অবস্থান হাশরের মাঠে, যার পানি কাউছার থেকে সরবরাহ করা হবে। আর কাউছারের অবস্থান হোল জান্নাতে। সহীহ মুসলিম শরীফ ও মুসনাদে আহমাদে এসেছে- “হাশরের ময়দানে হাউয সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- জান্নাতের কাউছার ঝর্ণাধারা থেকে পানি এনে হাউযে ঢালা হবে। এক হাদীসে বলা হয়েছে, জান্নাত থেকে দুটি খাল কেটে এনে তাতে ফেলা হবে এবং এর সাহায্যে সেখান থেকে তাতে পানি সরবরাহ হবে”।

সুতরাং হাউয হলো এমন এক বিরাট পানির ধারা যা আল্লাহ আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাশরের মাঠে দান করবেন। যা দুধের চেয়েও শুভ্ৰ, বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা, মধুর চেয়েও মিষ্টি, মিসকের চেয়েও অধিক সুঘ্ৰাণ সম্পন্ন। যা অনেক প্রশস্ত, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে সমান, তার কোণ সমূহের প্রত্যেক কোণ এক মাসের রাস্তা, তার পানির মূল উৎস হলো জান্নাত। জান্নাত থেকে এমন দুটি নলের মাধ্যমে তার সরবরাহ কাজ সমাধা হয়ে থাকে যার একটি স্বর্ণের অপরটি রৌপ্যের। তার পেয়ালা সমূহের সংখ্যা আকাশের তারকারাজীর মত।

সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার হাউযের প্রশস্ততা হলো আয়লা (বায়তুল মুকাদ্দাস) হতে ইয়ামানের সানআ নামক স্থানদ্বয়ের দূরতের সমান। আর তার পানপাত্রগুলোর সংখ্যা আকাশের নক্ষত্ররাজির ন্যায়”। সহীহ বুখারী শরীফের অপর হাদীসে এসেছে- “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আমার হাউযের প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান। তার পানি দুধের চেয়ে সাদা, তার ঘ্রাণ মিশকের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত এবং তার পানপাত্রগুলো হবে আকাশের তারকার মতো অধিক। তা থেকে যে পান করবে সে আর কক্ষনো পিপাসার্ত হবে না”।

সুনানে আবু দাউদ শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আল-মুখতার ইবনু ফুলফুল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন। অতঃপর মুচকি হেসে মাথা তুলে তিনি তাদেরকে অথবা তাঁকে তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেন, এইমাত্র আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে। অতঃপর তিনি পড়লেন- অর্থ: পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে। “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে আল-কাওসার দান করেছি” এভাবে তিনি সূরাটি পাঠ শেষ করে বললেন, তোমরা কি জানো কাউছার কি? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেন, তা এমন একটি পানির ঝর্ণা যা আমার রব জান্নাতে সৃষ্টি করে রেখেছেন। তাতে অসংখ্য কল্যাণ বিদ্যমান। তাতে হাউযে কাউছারও রয়েছে। আমার উম্মাতগণ ক্বিয়ামাতের দিন সেখানে উপস্থিত হবে। এর পানপাত্রের সংখ্যা হবে (আকাশের) তারকার সমপরিমাণ”।

এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সু-মহান মর্যাদার অনেক দিক রয়েছে, যেগুলো সারা জীবন বর্ণনা করেও শেষ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে যে কথাটি বলে দিয়েছেন, সেটা হচ্ছে, (ওরা ফায়না লাকা যিকরাক) অর্থ: “এবং আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি”। আল্লাহ তায়ালা এখানে কোন সীমানা নির্ধারণ করেননি, তাই আমরা আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সু-মহান মর্যাদা বলে কোন সীমানা বের করার ক্ষমতা নেই! তারপরও আমাদের কল্যাণের জন্য সংক্ষেপে যা কিছু আলোকপাত করা হলো আল্লাহ তায়ালা যেন কবুল করেন। যা ভুল হয়েছে তা যেন ক্ষমা করেন। আমাদের সবার অন্তরে যেন আল্লাহ তায়ালা তাঁর ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আন্তরিক মোহব্বাত বৃদ্ধি করে দেন। কঠিন হাশরের ময়দানে যেন তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে কাউছার পান করিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করান। (আমিন)

লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কেকে 
আরও সংবাদ