মূর্তি বা ভাস্কর্য সবই ভেঙ্গে ফেলুন

ইসলামে যেহেতু কোন প্রাণীর মুর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ করা জায়েজ নেই। তাই শুধুমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান বা জিয়াউর রহমানের না, বরং অন্য যেকোন ব্যাক্তির মূর্তি বা ভাস্কর্য অথবা কোন স্বৃতিসৌধ একটি ইসলামী রাষ্ট্রে থাকতে পারে না। আজ হয়ত অনেকেই বলছেন বা বলবেন এগুলো শুধুমাত্র স্মৃতি হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে কেউ এগুলোকে প্রতিমা মনে করে ইবাদত করবে না বা কিছু চাইবে না। আপনাদের এই সমস্ত যুক্তি বা কথার সাথে আমরা একমত হতে পারি না। কারণ এগুলোকেই একটা সময় আপনার আমার ভবিষ্যত প্রজন্ম সম্মান দেখাবে পুণ্যবান লোক মনে করে বা পুণ্যের কাজ মনে করে। আর এ বিষয়টি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা নূহ এর ২৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন। তাই অনুরোধ করব একটু মন দিয়ে মনের চোখে পড়ুন আর অন্তরের কানে শুনুন আল্লাহ তায়ালা কি বলেছেন। তিনি বলেছেন- “এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে”।
উপরের আয়াতে উল্লেখিত মূর্তি বা ভাস্কর্যগুলো কিভাবে মানুষের পূজার বস্তুতে পরিনত হলো সে সম্পর্কে সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে মূর্তি, ভাস্কর্য বা প্রতিমার পূজা নূহ (আঃ) এর কওমের মাঝে চালু ছিল, পরবর্তী সময়ে আরবদের মাঝেও তার পূজা প্রচলিত হয়েছিল। ওয়াদ “দুমাতুল জান্দাল” নামক জায়গার কাল্ব গোত্রের একটি দেবমূর্তি, সূওয়াআ, হল, হুযায়ল গোত্রের একটি দেবমূর্তি এবং ইয়াগুছ ছিল মুরাদ গোত্রের, অবশ্য পরবর্তীতে তা গাতীফ গোত্রের হয়ে যায়। এর আস্তানা ছিল কওমে সাবার নিকটবর্তী ‘জাওফ’ নামক স্থান। ইয়াউক ছিল হামাদান গোত্রের দেবমূর্তি, নাস্র ছিল যুলকালা গোত্রের হিময়ার শাখার মূর্তি। নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেক লোকের নাম নাস্র ছিল। তারা মারা গেলে, শয়তান তাদের কওমের লোকদের অন্তরে এ কথা ঢেলে দিল যে, তারা যেখানে বসে মাজলিস করত, সেখানে তোমরা কতিপয় মূর্তি স্থাপন কর এবং ঐ সমস্ত পুণ্যবান লোকের নামেই এগুলোর নামকরণ কর। কাজেই তারা তাই করল, কিন্তু তখনও ঐ সব মূর্তি বা ভাস্কর্যের পূজা করা হত না। তবে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপনকারী লোকগুলো মারা গেলে এবং মূর্তিগুলোর ব্যাপারে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলে লোকজন তাদের পূজা আরম্ভ করে দেয়”।
উক্ত আয়াতে কাফের সম্প্রদায়ের দুটো বৈশিষ্ট্য উল্লেখিত হয়েছে, আর তা হচ্ছে- (এক) মিথ্যা উপাস্যদের পরিত্যাগ না করা। (দুই) মূর্তি বা ভাস্কর্য পরিহার না করা। তাহলে মিথ্যা উপাস্যের উপাসনার মতো ভাস্কর্যপ্রীতিও কুরআন মজীদে কাফেরদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত। অতএব এটা যে ইসলামে গর্হিত ও পরিত্যাজ্য তা তো বলাই বাহুল্য। এবং এটা যে বা যারা করবে সে বা তাহারা কাফের মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
সুতরাং কুরআন হাদীসের দলিলের ভিত্তিতে আমরা পরিষ্কার করে বলতে পারি আজ যারা তোমাদের বাপ দাদাদের মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ করছ। এবং যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এগুলোর সমর্থন করে যাচ্ছ তোরা সবাই মনের চোখ খুলে দেখ আর মনের কানে শুনে রাখ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী কখনও ভূল হতে পারে না। তাই একটা সময় তোমাদের বংশধরেরা এই সমস্ত মূর্তি বা ভাস্কর্যের পূজা করবে। আর তোমরা কবরে থেকে এর আযাব ভোগ করবে। আর আমরা যারা বিরোধীতা করছি ইনশা আল্লাহ তিনিই আমাদের বংশধরদের এগুলো থেকে হেফাজতে রাখবেন এবং হাশরের ময়দানে এর উত্তম বিনিময় আমাদের দান করবেন।
তোমরা যারা আমার নাবীর উম্মত বলে দাবী কর আবার মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ কর বা করতে সাহায্য করো তোমরা শুনে রাখ আমার নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টজীব বলে গিয়েছেন। সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মু হাবীবা ও উম্মু সালামা (রাঃ) হাবশায় তাঁদের দেখা একটা গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি বা ভাস্কর্য ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করলেন। তিঁনি ইরশাদ করলেন, তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মাসজিদ বানাতো। আর তার ভিতর ঐ লোকের মূর্তি তৈরি করে রাখতো। কিয়ামত দিবসে তারাই আল্লাহর নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টজীব বলে পরিগণিত হবে”।
এখানে অনেকেই প্রশ্ন আনতে পারেন বা বলতে পারেন আমি “রাজাকার” এজন্য মূর্তি বা ভাস্কর্যের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতিক স্বৃতিসৌধ ভেঙ্গে ফেলার কথা বলছি। আপনারা যাই বলুন তাতে আমার অসুবিধা নেই। তবে স্বৃতিসৌধ ভেঙ্গে ফেলার কথা বলছি আমার নিজের দেখা ও শুনা গুনাহের কাজ থেকে। আমার ঘরের খুব নিকটেই একটি স্বৃতিসৌধ আছে। যেখান থেকে মাইকের আওয়াজ আমার ঘরে বসেই শুনতে পারি। একদিন এমন আওয়াজ শুনে কানে হাত দিয়ে না শুনার চেষ্টা করলাম। কিন্ত এত কাছে থাকায় মাইকের আওয়াজ থেকে নিজের কানে বিরত রাখা সম্ভব হয়নি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও যা শুনতে পেলাম তা হলো, একজন মাইকে বলছে প্লিজ দয়া করে জুতা খুলে উপরে উঠবেন, শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করবেন! (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। এর পর ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম একদল নামধারী মুসলিম প্রকাশ্যে শিরকের কাজ করে যাচ্ছে! আমি উপস্থিত দু-একজনকে এসব কি হচ্ছে ইসলাম বিরোধী কাজ জিজ্ঞেস করলে উনারা বললেন আমাদের কিছুই করার নেই। আমরাও আওয়াজ শুনে দেখতে এসেছি কি হচ্ছে এখানে? এখন চিন্তা করুন সারাটা বছর যেখানে প্রকাশ্যে কুকুর পেশাব পায়খানা করে, রাতের বেলায় কত শেয়াল করে আর মানুষ রুপি কত জানুয়ার জুটি বেঁধে খারাপ কাজ করে সেই জায়গাকে মুসলমানের ছেলে কিছু সময়ের জন্য পবিত্র মনে করে! এখন চিন্তা করুন ভবিষ্যতে কি হবে? আর এটাত বাংলাদেশের প্রতিটি স্বৃতিসৌধের অবস্থা।
পরিশেষে তাদের উদ্দেশ্য বলতে চাই, যারা বলছেন বিশ্বের আরো বহু ইসলামিক দেশে এগুলো আছে। আপনারা ভালো করে জেনে রাখুন বিশ্বের কোন দেশ বা নেতা আমাদের জন্য শরীয়তের দলিল না। আমাদের দলিল হচ্ছে কুরআন শরীফ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ, ঈজমা ও কিয়াস। আর ঐ দেশে আছে যদি বলেন তখন আমি বলব ঐ ইসলামিক দেশেত নারী নেতৃত্ব নেই! তাহলে আপনারা কেন নারীদের আছলের নিচে লোকিয়ে রাজনীতি করছেন? এরকম অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর আপনারা দিতে পারবেন না। তাই এসব শয়তানী কথা না বলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের হক্কানী আলিম উলামারা আপনাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যে সঠিক বানী পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, বোঝানোর চেষ্টা করেছেন আপনারা তাদের কথা মানার চেষ্টা করুন যদি মুসলমানের সন্তান হয়ে থাকেন। আর ক্ষমতার বলে শয়তানের ধোকায় পড়ে তা যদি মানতে না পারেন তাহলে মনে রাখবেন এই দুনিয়ার জমিনে আপনাদের লাঞ্ছিত হতে হবে আর হাশরের ময়দানেত অবশ্যই সবার সামনে আল্লাহ আপনাদের লাঞ্ছিত করবেন।
লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

