আমার ধর্ম আমার উৎসব (পর্ব দুই)


ইসলাম চায় প্রত্যেকটি কাফের ও মুশরিক ইসলামের ছায়াতলে এসে শান্তির বার্তা গ্রহণ করুক। আর এ জন্য ইসলাম প্রজ্ঞা, উত্তম উপদেশবাণী, উত্তম পদ্ধতিতে তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর পথে আহ্বান করাকে প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করণীয় বিষয় হিসেবে ঘোষণা করেছে। সূরা আন-নাহলের ১২৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-“আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায়। নিশ্চয় আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালভাবেই জানেন”।

মূলত এ সমস্ত জ্ঞানপাপীরা এ বিষয়টিকেই সহ্য করতে চায় না। তারা এখানে আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নামক কুফৱী মতবাদকে জায়েয প্রমাণ করা। এটা নিঃসন্দেহে ঈমান আনার পরে কুফরী করার শামিল, যা মূলত কাফেরদের প্রতি উদারনীতি নয় বরং তারা কাফের থাকা অবস্থায় চিরকালের জন্য তাদের ব্যাপারে দায়মুক্তি, সম্পর্কহীনতা ও অসন্তোষের ঘোষণাবাণী।

আর এ সূরায় কাফেরদের দ্বীনের কোন প্রকার স্বীকৃতিও দেয়া হয়নি। মূলত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি যারা ঈমান এনেছে তারা দ্বীনের ব্যাপারে কখনো তাদের সাথে সমঝোতা করবে না এ ব্যাপারে তাদেরকে সর্বশেষ ও চূড়ান্তভাবে নিরাশ করে দেয়া, আর তাদের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণাই এ সূরার উদ্দেশ্য।

এ সূরার পরে নাযিল হওয়া কয়েকটি মক্কী সূরাতে কাফেরদের সাথে এ দায়মুক্তি, সম্পর্কহীনতা ও অসন্তোষ প্রকাশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সূরা ইউনুসের ১০৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-“হে মানুষ! যদি আমার দ্বীন (ইসলাম ধর্ম) সম্বন্ধে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে তাহলে (জেনে রাখ) তোমরা আল্লাহকে ছাড়া যাদের এবাদত করো আমি তাদের এবাদত করব না। আমি এবাদত করি আল্লাহর, যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান। আমাকে তো মুমিন হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে”। সূরা আশ-শুআরার ২১৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “হে নবী! যদি এরা এখন আপনার কথা না মানে তাহলে বলে দিন, তোমরা যা কিছু করেছো তা থেকে আমি দায়মুক্ত”। সূরা সাবার ২৫ ও ২৬ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “এদেরকে বলুন, আমাদের ত্রুটির জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না এবং তোমরা যা কিছু করে যাচ্ছো সে জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে না। বলুন, আমাদের রব একই সময় আমাদের ও তোমাদের একত্র করবেন এবং আমাদের মধ্যে ঠিকমতো ফায়সালা করবেন। তিনিই বড় মীমাংসাকারী ও মহাজ্ঞানী”। সূরা আয-যুমারের ৩৯ ও ৪০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “এদেরকে বলুন হে আমার জাতির লোকেরা তোমরা নিজেদের জায়গায় কাজ করে যাও। আমি আমার কাজ করে যেতে থাকবো। শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে কার ওপর আসছে লাঞ্ছনাকর আযাব এবং কে এমন শাস্তি লাভ করছে যা অটল”।

আবার মাদীনাবাসী সমস্ত মুসলিমকেও এই একই শিক্ষা দেয়া হয়। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে সূরা আল-মুমতাহিনার ৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “তোমাদের জন্য ইব্রাহিম ও তার সঙ্গীদের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সমপ্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত করো তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম এবং আমাদের ও তোমাদের মাঝে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হল, যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে ইব্রাহিম তার বাবাকে বলেছিল, আমি তোমার জন্য অবশ্যই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব। যদিও আল্লাহর সামনে তোমার জন্য আমার কিছু করার ক্ষমতা নেই। (ইব্রাহিম ও তার সঙ্গীরা বলেছিল) হে আমাদের প্রভু! আমরা তোমার ওপরই ভরসা করেছি, তোমার দিকেই মুখ ফিরিয়েছি এবং তোমার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন”।

কুরআন মাজীদের একের পর এক এসব সুস্পষ্ট বক্তব্যের পর তোমরা তোমাদের ধর্ম মেনে চলো এবং আমাকে আমার ধর্ম মেনে চলতে দাও-“লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়াদীন” এর এ ধরনের কোন অর্থের অবকাশই থাকে না। বরং সূরা আয-যুমার এ যে কথা বলা হয়েছে, একে ঠিক সেই পর্যায়ে রাখা যায় যেভাবে আল্লাহ নিজেই বলেছেন। সূরা যুমারের ১৪ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “হে নবী বলুন, আমি আমার দ্বীনকে কেবল আল্লাহর জন্য নিবেদিত করে তাঁর ইবাদত করি”।

সুতরাং এটাই এ আয়াতের মূল ভাষ্য যে, এখানে কাফেরদের সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এটাও লক্ষণীয় যে, পবিত্র কুরআনে একথাও আছে, কাফেররা সন্ধি করতে চাইলে তোমরাও সন্ধি কর। সূরা আল-আনফালের ৬১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “আর তারা যদি সন্ধির দিকে ঝোঁকে তাহলে তুমিও তার দিকে ঝুঁকবে, আর আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবে। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন”।

তাছাড়া মাদীনায় হিজরত করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও ইয়াহূদীদের সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। তাই সম্পর্কচ্যুতির অর্থ এ নয় যে, তাদের সাথে প্রয়োজনে সন্ধিচুক্তি করা যাবে না। মূলত সন্ধির বৈধতা ও অবৈধতার আসল কারণ হচ্ছে স্থান-কাল-পাত্র এবং সন্ধির শর্তাবলি। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফয়সালা দিতে গিয়ে বলেছেন- আবু দাউদ, তিরমিজী ও ইবনে মাজায় এসেছে- “হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মুসলিম সমাজে পরস্পরের মধ্যে সন্ধি স্থাপন বৈধ। ইমাম আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে, তবে এমন সন্ধি বৈধ নয় যা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করে”।

 দ্বীন ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম।

সূরা আল-ইমরানের ১৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন ইসলাম”। উক্ত সূরার ৮৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।

 বিধর্মীদের উৎসবে না যাওয়া হলো মুমিনের লক্ষণ।

সূরা ফুরকানের ৭২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “আর যারা মিথ্যার সাক্ষ্য হয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে চলে তখন সসম্মানে চলে যায়” ফাতহুল কাদীর ও কুরতুবীতে এসেছে- মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা জেনে শুনে আজে-বাজে কথা ও কাজ দেখতে বা শুনতে অথবা তাতে অংশ গ্রহণ করে না। আর যদি কখনো তাদের পথে এমন কোন জিনিস এসে যায়, তাহলে তার প্রতি একটা উড়ো নজর না দিয়েও তারা এভাবে সে জায়গা অতিক্রম করে যেমন একজন অত্যন্ত সুরুচিসম্পন্ন ব্যাক্তি কোন ময়লার স্তুপ অতিক্রম করে চলে যায়।

বিধর্মীদের উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো।

কাউকে শুভেচ্ছা বা শুভকামনা জানানো ইসলামিক পরিভাষায় দোয়ার শামিল। আর বিধর্মীদের জন্য হেদায়ত কামনা ছাড়া আর কোন দোয়া করা বৈধ নয়।

———চলবে ইনশা আল্লাহ

লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কেকে 
আরও সংবাদ