আমার ধর্ম আমার উৎসব (পর্ব তিন)
কাউকে শুভেচ্ছা বা শুভকামনা জানানো ইসলামিক পরিভাষায় দোয়ার শামিল। আর বিধর্মীদের জন্য হেদায়ত কামনা ছাড়া আর কোন দোয়া করা বৈধ নয়।
সূরা তওবার ১১৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “নাবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয় হয়। তাদের নিকট এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে, নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী”। একই সূরার ৮০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “আপনি তাদের জন্য ক্ষমা চাও, অথবা তাদের জন্য ক্ষমা না চাও। যদি আপনি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা চাও, তবুও আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে হিদায়াত দেন না”।
বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে সাহায্য করা।
বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা কারা যাবে না। কারণ একজন মুমিন মুসলমান শুধুমাত্র যে কোন ভালো কাজে সাহায্য সহযোগিতা করতে পারে। সূরা মাঈদার ২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর”।
বিধর্মীদের অনুষ্ঠানের স্থানে যাওয়াও ঠিক নয়।
সুনানে আবু দাউদ শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত সাবিত ইবনুদ দাহহাক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে এক ব্যক্তি মানত করে যে, সে বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট যাবাহ করবে। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, আমি বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট কুরবানি করার মানত করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেখানে কি জাহেলী যুগের কোন মূর্তি রয়েছে? লোকেরা বলল, না। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, সেখানে কি তাদের কোন মেলা বসতো? লোকেরা বলল, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মানত পূর্ণ করতে পারো। কেননা আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজের জন্য কৃত মানত পূর্ণ করা জায়িয নয় এবং আদম সন্তান যে জিনিসের মালিক নয় তারও কোন মানত নেই”।
আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করা।
সূরা মুজাদালার ২২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “তুমি পাবে না এমন জাতিকে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান আনে, বন্ধুত্ব করে তার সাথে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধীতা করে, যদিও তারা তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এরাই, যাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে যার নিচে দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম”।
বিধর্মীদের অনুসরনে মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সূরা আল-ইমরানের ১৪৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “হে মুমিনগণ, যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর, তারা তোমাদেরকে তোমাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরে যাবে”।
বিধর্মীদের বন্ধু বানাতে নিষেধ।
সূরা নিসার ৮৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “তারা কামনা করে, যদি তোমরা কুফরী করতে যেভাবে তারা কুফরী করেছে। অতঃপর তোমরা সমান হয়ে যেতে। সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় হিজরত না করা পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে কাউকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। অতএব তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং তাদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর। আর তাদের কাউকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করো না এবং না সাহায্যকারীরূপে”।
বিধর্মীদের দলভুক্ত হবে।
সুনানে আবু দাউদ শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে”। সুনানে তিরমিজী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আমর ইবনে শুয়াইব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী-নাসারাদের অনুকরণ করো না। কেননা ইয়াহূদীগণ আঙ্গুলের ইশারায় এবং নাসারাগণ হাতের ইশারায় সালাম দেয়”।
ইয়াহূদী ও নাসারার অনুসরণ করা।
সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি দবের গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! এরা কি ইয়াহূদী ও নাসারা? তিনি বললেন- আর কারা”?
মুশরিকদের দুই দিনের পরিবর্তে মুসলিমদের দুই দিন।
মদীনায় মুশরিকরা বছরে দুটি দিন পালন করত। ইচ্ছামত খেল তামাশা, গানবাজনা, রঙ তামাশা ও লাগামহীন উচ্ছৃঙ্খলতায় কাটাত। আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের এ দুদিনের পরিবর্তে মুসলিমদের দুটি ঈদের ব্যবস্থা করে দিলেন। সুনানে আন-নাসায়ী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলিয়াত যুগের অধিবাসীদের জন্য প্রত্যেক বৎসরে দুটি দিন ছিল, যাতে তারা খেল-তামাশা করত। যখন নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলেন তখন তিনি বললেন, তোমাদের জন্য দুটি দিন ছিল, যাতে তোমরা খেল-তামাশা করতে। এখন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য উক্ত দুদিনের পরিবর্তে তার চেয়েও অধিকতর উত্তম দুটি দিন নিদির্ষ্ট করে দিয়েছেন। তা হচ্ছে ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন”।
অতএব, আমরা কুরআন শরীফ ও হাদিস শরীফের মাধ্যমে পরিষ্কার হলাম যে আমি একজন মুসলমান আর আমার ধর্মইসলাম। তাই আমার উৎসব তাই হবে যা ইসলাম সমর্থনকরে। আর “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এই কথা ইসলাম সমর্থন করে না। তাই বিধর্মীদের যে কোন উৎসবে যাওয়াত অনেক দূরের কথা, এরকম কথা একজন মুসলমান বলতে পরে না, এবং যারা বলে তাদেরকেও সমর্থন করতে পারে না। নিজের সামর্থ অনুযায়ী এর প্রতিবাদ করতে হবে। তবে বিধর্মীদের সাথে সামাজিক লেনদেন, উঠাবসা করা যাবে। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাদের কোন ধরনের অন্যায় কষ্ট দেওয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান