রাজনগরে আ’লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ [ভিডিও সহ]

উভয়পক্ষের সংঘর্ষে আহত অন্তত ৩০

মৌলভীবাজারের রাজনগরে আওয়ামিলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ঘন্টা ব্যাপি এই সংঘর্ষ চলতে থাকলে এক পর্যায়ে পুলিশ এসে ফাকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানা যায়।

এঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ১০৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৪টি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দলীয় সূত্রে জানাযায়, মিছিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে । সংঘর্ষ চলাকালে রাজনগর উপজেলা পরিষদ এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

সূত্র জানায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মিছবাহুদ্দোজা ভেলাই ও সাধারণ সম্পাদক মিলন বখতের সর্মথকরা আলজাজিরা টেলিভিশনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে সংবাদ প্রচার হওয়ার প্রতিবাদে মিছিল করে। এ মিছিলে তারা রাজনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শা জাহান খানকে কটাক্ষ করে স্লোগান দেয়।

এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান খানের সর্মথকরা মিছিল করার প্রস্তুতি নেয়। এক পর্যায়ে মিলন বখত ও ভেলাই মিয়া গ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে তাদের উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও দলীয় সূত্রে আরও জানাযায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজনগর আ’লীগের দুই গর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শুরুতে দুই পক্ষের কর্মী সর্মথকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এক পর্যায়ে তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। এই ঘটনায় চারটি মটরসাইকেল ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে।

পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করলে মৌলভীবাজার পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব ফোর্স আনা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত ১০৩ টি রাবার বুলেট ও ৪টি টিয়ারশেল ছোঁড়ে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এখনও দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে এলাকায় পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।

আহতদের মধ্যে ১১ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ময়নু খান (৪৫), ক্রীড়া সম্পাদক তানভীর খান (৩০), ইউছুফ মিয়া (২৬), সেজু মিয়া (৩৭), তারেক আহমদ (১৭), লিমন আহমদ (৪০), রিয়াদ মিয়া (২০), সেজু খান ( ২৫), আফজল খান (৩২), সবুজ মিয়া (২৫), মহসিন খান (২৬) পুলিশের এসআই এরশাদ, কন্সটেবল পবিত্র ও সুব্রত। তাদের মধ্যে কয়েকজন রাজনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। ইউছুফ নামে আহত ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানাগেছে।

এবিষয়ে উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক মিলন বখত ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান খান একে অপরকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন।

রাজনগর উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখত্ এশিয়াবিডিকে বলেন, আগামী ১৬ তারিখ উপজেলা আওয়ামীলীগের জনসভা সফল করার লক্ষ্যে আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। এসময় বিএনপি-জামায়াতের সহায়তায় উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের উপর হামলা চালান। আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলার সময় দুজন পুলিশ কর্মকর্তাও তাদেরকে সহায়তা করেছে।

তবে রাজনগর সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান খান এশিয়াবিডিকে বলেন, দুই দিন আগে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখতের নেতৃত্বে মিছিল করে আমার বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য প্রদান করে তারা। বিষয়টি জেনে আমার শুভাকাঙ্খিরা বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার সময় মিছিল আয়োজন করেছিল। এসময় মিলন বখতের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার সরকারি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করে। এতে তারেক নামে আমার একজন কর্মী ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে আ’লীগ সম্পাদক মিলন বখতের বক্তব্যে জামায়াত বিএনপির সহায়তায় শাহজাহান খান হামলা করেছেন বলা হলে এই প্রতিবেদক উপজেলা জামায়াতের আমীর ও উপজেলার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলেন।

রাজনগর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্বাস আলী বলেন, এটা আওয়ামিলীগের দলীয় গ্রুপিং সংঘর্ষ। এখানে বিএনপির অংশগ্রহণ করা তো প্রশ্নই আসেনা। বিএনপির কেউ এই মারামারিতে যায়নি, এটা সম্পুর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।

উপজেলা জামায়াতের আমীর আবু রাইয়্যান শাহীন বলেন, এটা চরম নিন্দনীয় এবং মিথ্যা কথা। জামায়াত শিবির এটার সাথে জড়িত নয়। এটা তাদের দলীয় কোন্দল। এখানে আমরা আসব কেন? গতকালকেও তারা মিছিলে জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে।

রাজনগর থানার ওসি আবুল হাসিম এশিয়াবিডিকে জানান, উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছি। উত্তেজিতদের চত্রভঙ্গ করার জন্য ৪টি টিয়ারশেল নিক্ষেপে করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে মৌলভীবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিয়াউল হক এশিয়াবিডিকে বলেন, উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ফাঁকা রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে। কারো পক্ষ নেয়নি।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/এসকে
আরও সংবাদ