রহমতে আলম (সাঃ) : ইসরা ও মি’রাজ (পর্ব সাত)

রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিদ্রাতুল মুন্তাহায় হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কে আসল সূরতে দেখার পর ঊর্ধ্বগমনের দিকে যেতে লাগলেন। বিভিন্ন বর্ননায় পাওয়া যায় বিশেষ করে আল্লামা আলাঈ (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমরা ঊর্ধ্বগমনে যেতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি হযরত জিব্রাইল (আঃ) বেশ পিছনে পড়ে গেছেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম আমাকে একা ছেড়ে আপনি পিছনে কেন রয়ে গেলেন। তখন তিঁনি উত্তর দিলেন যে, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি এমন এক মাকামে আছেন যা অতিক্রম করা কোন মাখলুকের পক্ষে সম্ভব না। আর আমি যদি উহা অতিক্রম করি তাহলে নূরের তাজাল্লীতে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাব। তিঁনি বলেন হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি এগিয়ে চলুন। মহান আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে পথ দেখাবেন। অতঃপর আমি তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় চলতে লাগলাম।

 কলমের আওয়াজ শুনা।

রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঊর্ধ্বগমনের দিকে যেতে লাগলেন। এত ঊর্ধ্বগমনে গেলেন এক পর্যায়ে কলমের লেখার আওয়াজ শুনতে পেলেন। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর আমি আরো ঊর্ধ্বে চলতে লাগলাম। আমি এমন এক স্তরে পৌছলাম যে তথায় আমি কলম এর খশখশ শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। বর্ননাকারী আনাস ইবনে মালিক বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন আল্লাহ তায়ালা আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন”। সুনানে আন-নাসায়ী শরীফের হাদীসে এসেছে- “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সেখানে একখণ্ড ধুঁয়াশা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল আমি সিজদায় পড়ে গেলাম। তখন আমাকে বলা হলো যেদিন আমি এ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি, সেদিন আপনার উপর ও আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছি”।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার ঘটনা।

আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ইসরা ও মি’রাজ রজনীতে রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যা কিছু দান করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। মূলত এই নামাজ ছিলো পঞ্চাশ ওয়াক্ত। প্রবর্তিতে হযরত মূসা (আঃ) এর পরামর্শে রহমত আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে কমানোর আবেদন করলে আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করে দেন। কিন্ত মহান আল্লাহ ঠিক পাঁচ ওয়াক্তের বিনিময়ে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান সাওয়াব দান করবেন। সেই ঘটনাটি সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ সহ বিভিন্ন হাদীসের কিতাবে এসেছে “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর আমার উপর দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হলো। এরপর আমি ফিরে আসলাম। মূসা (আঃ) এর সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় তিঁনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কী আদেশ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ দেওয়া হয়েছে। তিঁনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে সামর্থ হবে না। আল্লাহর কসম! আমি আপনার আগে লোকদের পরীক্ষা করেছি এবং বানী ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য কঠোর শ্রম দিয়েছি। তাই আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য হালকা করার আবেদন করুন। আমি ফিরে গেলাম। ফলে আমার উপর হতে দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দেওয়া হলো। আমি আবার মূসা (আঃ) এর নিকট ফিরে এলাম। তিঁনি আবার আগের মত বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। ফলে আল্লাহ তায়ালা আরো দশ ওয়াক্ত কমিয়ে দিলেন। ফিরার পথে মূসা (আঃ) এর নিকট পৌঁছলে, তিঁনি আবার আগের কথা বললেন, আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তায়ালা আরো দশ কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ) এর নিকট ফিরে এলাম। তিঁনি আবার ঐ কথাই বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম। তখন আমাকে প্রতিদিন দশ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ দেওয়া হয়। আমি ফিরে এলাম। মূসা (আঃ) ঐ কথাই আগের মত বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম, তখন আমাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশ করা হয়। এবং বলা হলো নিশ্চয়ই আমি যেদিন এই আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি সেদিন আপনার এবং আপনার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছি। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান বলে গণ্য হবে। আপনি ও আপনার উম্মত এটা আদায় করুন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে অবশ্যই পালনীয়। তারপর মূসা (আঃ) এর নিকট ফিরে এলাম। তিঁনি বললেন, আপনাকে কী আদেশ দেয়া হয়েছে? আমি বললাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মূসা (আঃ) বললেন, আপনি পুনরায় প্রতিপালকের নিকট ফিরে যান এবং নামাজ আরো কমানোর আবেদন করুন। কেননা আল্লাহ বনী ইসরাঈলের উপর শুধু দুই ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছিলেন। তারা এই দুই ওয়াক্তও আদায় করেনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি আমার রবের নিকট আবেদন করেছি, এতে আমি লজ্জাবোধ করছি। আর আমি এতেই সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তা মেনে নিয়েছি। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যখন অগ্রসর হলাম, তখন এক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমি আমার অবশ্য প্রতিপাল্য নির্দেশ জারি করে দিলাম এবং আমার বান্দাদের উপর হালকা করে দিলাম”।

সফর শেষে ফিরত আসা।

মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় রহমত আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আক্বসা পর্যন্ত ইসরা করে। আবার সেখান থেকে সাত আসমান পাড়ি দিয়ে সিদ্রাতুল মুন্তাহার উপরে এমন জায়গায় গিয়েছিলেন যেখানে মহান আল্লাহ তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিতে চেয়েছেন। এটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা নিজেই জানেন তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোথায় উঠিয়েছেন। এভাবে তিঁনি মি’রাজের সফর শেষ করে মাসজিদুল হারামে এসে ফজরের নামাজ আদায় করেন।

লেখক: ইমাম ও খতিব ওল্ডহাম জামে মাসজিদ, যুক্তরাজ্য।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ