বরকতময় রামাদ্বান : বর্জনীয় কাজ

রাহমাত, বারাকাত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাহিনা পবিত্র মাহে রামাদ্বানের ফরয রোজা রাখার পাশাপাশি নেক আমল করতে হবে এবং সব ধরনের গুনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে। যদি আমরা রোজার বিনিময়ে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করতে চাই। আমরা অনেকেই মনে করি যে, দিনের বেলায় উপোস থাকার নাম রোজা। আসলে প্রকৃত পক্ষে শুধু উপোস থাকার নাম রোজা নয়। বরং উপোস থাকার পাশাপাশি আপনার হাত, পা, নাক, কান, চোখ ও জবানসহ সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গকে রোজার মধ্যেই শামিল রাখতে হবে। কারণ রোজা শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা। তাই পান করা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি যেকোন ধরনের খারাপ কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে। এমনকি রামাদ্বান মাসে দিনের বেলায় অনেক হালাল কাজও শরিয়তের বিধান অনুযায়ী হারাম হয়ে যায়। সুতরাং আমল করার নিয়তে জেনে নেই বরকতময় রামাদ্বানে বর্জনীয় কাজগুলো কি?

 অশ্লীল কথাবার্তা বলা যাবে না।

বরকতময় রামাদ্বানে রোজা রেখে কোন ধরনের অশ্লীল কথাবার্তা বলা এবং অনর্থক শোরগোল করা যাবে না। কোন ধরনের ঝগড়া-ফ্যাসাদ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- মানব সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব দশ গুন থেকে সাতশ গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন, আদম সন্তানের যাবতীয় আমল তার নিজের জন্য কিন্ত রোজা বিশেষ করে আমার জন্যই রাখা হয়। আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো। রোজা পালনকারীর জন্য তা ঢাল স্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারো রোজার দিন আসে সে যেন ঐ দিন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করতে চায়, সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার”।

 মিথ্যাচার করা যাবে না।

মিথ্যাচার করা হচ্ছে মহাপাপ। আর যারা মিথ্যাচার করে তাদের প্রতি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার লানত তথা অভিশাপ। বরকতময় রামাদ্বানে রোজা অবস্থায় এই জঘন্য পাপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”।

অপচয় করা যাবে না।

অপচয় ও অপব্যয় একটি খারাপ অভ্যাস ও নিন্দনীয় কাজ। অপচয়ের সঙ্গে রয়েছে অহংকারের সম্পর্ক। নিজের বাহাদুরি প্রকাশের মনোভাব। অন্যদিকে অপব্যয়ের সঙ্গে রয়েছে শরিয়তের বিধান লঙ্ঘনের সম্পর্ক। অপচয় ও অপব্যয় মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অবক্ষয় ডেকে আনে। যে কারণে ইসলামে অপচয় ও অপব্যয় দুটিই নিষিদ্ধ। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী কোনো কাজ বৈধ হলেও সে ক্ষেত্রেও যদি প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় করা হয় তবে তাকে ইসরাফ বা অপচয় হিসেবে দেখা হয়। ইসলাম বৈধ কাজেও মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় সমর্থন করে না। অবৈধ কাজে ব্যয় করাকে অপব্যয় বলা হয়। সুতরাং বরকতময় রামাদ্বানে বিশেষ করে ইফতারির নামে অপচয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেহেতু অপচয় করা শয়তানের কাজ। সূরা বনী ইসরাঈলের ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ। আর আত্মীয়কে তার হক দিয়ে দাও এবং মিসকীন ও মুসাফিরকেও। আর কোনভাবেই অপব্যয় করো না”।

মহান আল্লাহ বলেন হে আমার বান্দারা তোমরা খাও, পান করো ও অপচয় করো না। যেমন এ সম্পর্কে সূরা আরাফের ৩১ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “হে বনী আদম, তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ করো এবং খাও, পান করো ও অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না”।ইসলামে অপচয়-অপব্যয়ের পাশাপাশি কৃপণতারও বিরোধিতা করা হয়েছে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইসলামে মধ্যপন্থা অনুসরণকে উৎসাহিত করা হয়েছে। মধ্যবর্তী অবস্থানে থেকে সবগুলো কাজ করা মুমিনের অন্যতম একটি গুণ। এ বিষয়ে সূরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে”।

 গীবত করা যাবে না।

গীবত এমন একটি জঘন্য ও নিন্দনীয় অপরাধ। এটাকে আল্লাহ তায়ালা তা মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। গীবত অঙ্গ-ভঙ্গি, কথা ও কাজ যে কোনভাবে হতে পারে। গীবত করা ও শ্রবণ করা সমান অপরাধ। সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনেক অনুমান থেকে দূরে থেকো। নিশ্চয়ই কোন কোন অনুমান পাপ। আর গুপ্তচরবৃত্তি করো না (অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না)। তোমাদের কেউ যেন কারো অসাক্ষাতে নিন্দা না করে। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করো। আল্লাহকে ভয় করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু”।

অতএব বরকতময় রামাদ্বানে কোন ভাবেই কারো গীবত করা যাবে না। কারণ এই গীবতের জন্য আপনার সারাদিনের রোজাটা নষ্ট হয়ে যাবে। সুনানে তারগীব ও মুসনাদে আহমাদে এসেছে- একবার নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে দুজন মহিলা উপস্থিত হয়ে (দরজার বাইরে থেকে) অভিযোগ করল, রোজার কারণে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পিপাসার কারণে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। এ অবস্থা শুনে তিঁনি লোকমারফতে তাদের বমি করার আদেশ দিলেন। তারা বমি করলে দেখা গেলো গোশতের টুকরা ও তাজা রক্ত বের হচ্ছে! সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) অবাক হলেন! তখন নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরা হালাল খাদ্য দ্বারা সাহরী করে রোজা রেখেছে, কিন্তু রোজা অবস্থায় হারাম খেয়েছে। অর্থাৎ মানুষের গীবত করেছে। আর গীবত করার অর্থ হলো মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া”।

উক্ত হাদীস শরীফ থেকে বোঝা যায়, গীবত ও অন্যান্য গুনাহের দ্বারা রোজার কষ্ট অনেক বেড়ে যায়। এ কারণেই দেখা যায় আল্লাহ তায়ালার নেক বান্দারা রোজায় তেমন কোনো কষ্ট অনুভব করেন না, বরং তারা বিভিন্নভাবে আত্মিক ও দৈহিক শান্তি লাভ করে থাকেন। পক্ষান্তরে যারা গীবত করে এবং বিভিন্ন গুনাহে লিপ্ত থাকে তারা রোজার কারণে অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে ও কষ্ট অনুভব করে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি মোতাবেক রামাদ্বানের ফরয রোজা রাখার পাশাপাশি সমস্ত গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। (আমীন)

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

আরও সংবাদ