এদের খবর কেউ রাখে না
বিশ্বে ধনীরাই ধনী হচ্ছে এমন দেশের তালিকায় শীর্ষে বাংলাদেশ। সবচেয়ে আশ্চর্ষের বিষয় কোভিড-১৯ এ বাংলাদেশের কতিপয় ধনী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আঙ্গুল ফুলে বটগাছে পরিণত হয়েছে। বিপরীতে দিনমজুর ও শ্রমজীবি মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে দু বেলা ভাত খেতেও পারছেন না। খেয়ে না খেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন নিপাত করছেন তারা। কিন্তু মুখ খুলে কাউকে কিছু বলছেন না। আবার সহ্য করতেও পারছেন না। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সীমাহীন দূর্ভোগ পুহাতে হচ্ছে। কিন্তু কেউই তাদের খবর রাখছেন না।
২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার পর থেকে মৌলভীবাজার সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসহায় মানুষের কাছে সরকারি বেসরকারি ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো হয়েছিল। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রবাসীদের উদ্যোগেও কর্মহীন মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে রমজান মাসে চাহিদা মতো খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছিল। কেউ কেউ পারিবারিক চাহিদার চেয়ে বেশিও পেয়েছিলেন।
কিন্তু এবারের চিত্র সম্পন্ন ভিন্ন। করোনার সংক্রমন বাড়ার পরপরই সরকারি তরফ থেকে প্রথম দফায় ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়। শুরুর দিন থেকেই সপ্তাব্যাপি ঢিলে ঢালা চলে এ লকডাউন। সর্বত্মক সফল না হওয়ায় পরবর্তীতে দ্বিতীয় দাফে ১৪ এপ্রিল থেকে আবারও কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয় সরকার। এ লকডাউন বাস্তাবায়ন করার জন্য মাঠে নামে প্রশাসন।
চলমান কঠোর লকডাউন ও করোনা সংক্রমনের কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন মৌলভীবাজারের কয়েক হাজার দিনমজুর ও শ্রমজীবি। দৈনন্দিন প্রয়োজনী খরচ চালাতে হিমশিক খেতে হচ্ছে তাদের। স্বজন এবং পরিচিত জনদের কাছ থেকে ঋণে টাকা এনে দৈনন্দি খরচ চালাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সুদে টাকা আনতে বাধ্য হচ্ছেন। রমজানে পরিবার পরিজনের সেহরি ও ইফতারের খরচ চালানো তাদের পক্ষে কষ্ট কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে তাদের কোনো সহায়তা দেয়া হয়নি। জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকতারা তাদের খোঁজই রাখেন নি। তবে রমজানের শুরুতে কতিপয় সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের কিছু সহযোগীতা করা হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় ০৫ শতাংশ মাত্র।
দীর্ঘ দিনের নিয়ম অনুযায়ী মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনী পয়েন্টে ভোর ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কাজের জন্য দিনমজুর শ্রমিকরা অপেক্ষা করেন। শহর এবং শহরের বাহিরের অনেক লোক এসে এখান থেকেই নানা কাজের জন্য শ্রমিক নিয়ে যেতেন। লকডাউনের আগে শ্রমিকদের চাহিদাও ছিল। কিন্তু চলমান লকডাউনের কারণে অর্ধেকেরও বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে কাজ না পেয়ে তারা বাড়ি ফিরে চলে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ওই পয়েন্টে কয়েক হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজের জন্য জড়ো হয়। কিন্তু তারা চলমান লকডাউনে কাজ পাচ্ছে না।
সকালে শহরের চৌমুহনী পয়েন্টে গেলে দেখা যায়, কোদাল ও কাজের সরঞ্জাম হাতে নিয়ে শ্রমিকরা কাজের জন্য অপেক্ষা করছেন। যে কেউ আসলে দৌঁড়ে গিয়ে বলছেন কাজের লোক লাগবে নাকি। এভাবে দৌঁড়া দৌঁড়ি করেও কাজ পাচ্ছেন না। হতাশ মন নিয়ে কেউ কেউ আকিজ বিড়ি টানছেন আবার কেউ কেউ মাটিতে বসে সময় পার করছেন।
দিনমজুর আবু তাহের, মোঃ ইদ্রীস মিয়া, শ্রী নির্মল চন্দ্র বেদ, শহিদ মিয়া ও বিতু দাশ বলেন, চলমান লকডাউনের পর থেকে দুই তৃতীয়াংশ লোককে বেকার থাকতে হয়। ভোর ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কাজ পাওয়া যায়নি। খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। পরবর্তীতে পেটের ঝালায় ঋণ করে কিংবা সুদে টাকা এনে কোনো রকম দৈনন্দিন খরচ চালাতে হয়।
এদিকে প্রবাসী অধ্যূষিত মৌলভীবাজার জেলার কয়েক লক্ষ প্রবাসী বেকার হয়ে পড়েছেন। কাজ না থাকায় তারা প্রবাসে নিজেদের খরচ চালাতে পারছেন না। অন্যদিকে বাড়িতে পারিবারিক খরচের টাকা পাঠাতেও পারছেন না। যার ফলে প্রবাসী পরিবারও অর্থনীতিক চরম অভাব অনুটনের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছেনি। তাদের অভাবের কথা কাউকে মুখ খুলে বলতেও পারছেন না আবার সহ্য করতে পারছেন না। কিন্তু জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারী তরফ থেকে তাদের কোনো সহযোগীতা করা হয়নি।
লেখকঃ সাংবাদিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক যুগান্তর।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান