বরকতময় রামাদ্বান : মহিমান্বিত ক্বদর


রাহমাত, বারাকাত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাহিনা পবিত্র মাহে রামাদ্বান হচ্ছে গুনাহগার বান্দাদের গুনাহ মাফ করানোর অন্যতম একটি হাতিয়ার। এই মাসকে আল্লাহ তায়ালা মুমিন মুসলমানদের জন্য একটা বড় নিয়ামত হিসেবে উপহার দিয়েছেন। আর এ মাসে আমাদের গুনাহগুলো মাফ করানোর অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে মহিমান্বিত ক্বদর। এই ক্বদর সম্পর্কে পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাই নাযিল করেছেন। তাই আজ আমরা কুরআন-হাদীসের আলোকে সেই মহিমান্বিত ক্বদর কি, সেটার ফজিলত, সেটা কখন ও আমাদের করণীয় কি সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।

ক্বদর কি?

কুরআনুল কারীমের মধ্যে এই রজনীকে বলা হয়েছে “লাইলাতুল ক্বাদরী” এখানে লাইলাতুন অর্থ রজনী আর ক্বদর অর্থ সম্মান, মর্যাদা ও মহিমান্বিত। সুতরাং “লাইলাতুল ক্বাদরী” এর একত্রে অর্থ হচ্ছে সম্মানী রাত, মর্যাদার রাত ও মহিমান্বিত রাত।

ক্বদরের ফজিলত।

এই মহিমান্বিত রজনীর অনেক ফজিলত রয়েছে। যেটা কুরআনুল কারীমের সূরা ক্বদরের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বর্ণনা করেছেন। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোবারক জবানে বলে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআনুল কারীম) অবতীর্ণ করেছি ক্বদর রজনীতে। আর ক্বদরের রজনী সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? ক্বদরের রজনী হচ্ছে হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রজনীতে ফেরেশতারা ও রূহ (হযরত জীব্রাঈল) অবতীর্ণ হন প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের বিশেষ অনুমতিক্রমে। শান্তিই বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত”।

আল্লাহ তায়ালা ক্বদর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ করে জানিয়ে দিলেন এই ক্বদরেই পবিত্র কুরআনুল কারীম অবতীর্ণের সূচনা হয়েছে। যা মানবজাতির জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নির্দেশক। এই ক্বদরের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। অর্থাৎ লাইলাতুল ক্বাদার যাবতীয় সময়কালের চেয়ে উত্তম যাতে লাইলাতুল ক্বাদার নেই। আরবরা “আলফুন” হাজার শব্দ ব্যবহার করে থাকে কোন বস্তুর চূড়ান্তসীমা বুঝানোর জন্য। যেমন সূরা বাকারার ৯৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইহুদীদের চরিত্র সম্পর্কে বলেছেন “তাদের কেউ কামনা করে যেন হাজার বছর জীবন পায়”। এখানে হাজার বছর অর্থ চিরকাল। একইভাবে “আলফি সানাতীন” বা হাজার বছর অর্থ অনন্তকাল বুঝায়। (তাফসীরে কুরতুবী)।

সুতরাং এখানে এক হাজার মাসের নয়, বরং এ রজনীর ইবাদত ও নেক আমল হাজার হাজার রজনীর ইবাদতের তুলনায় উত্তম। আল্লাহ তায়ালা এখানে পরপর তিনবার “লাইলাতুল ক্বাদার” উল্লেখ করার পর বলেছেন এটি হাজার রজনীর চেয়ে উত্তম। বারবার বলার মাধ্যমে এ রজনীর মর্যাদা আরও উন্নীত হয়েছে। এ রজনীর ফজিলত সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বাদারে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করবে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় রামাদ্বানের রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করা হবে”।

অর্থাৎ ইবাদত হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এবং তাঁর নিকট থেকে সাওয়াব ও পুরস্কার লাভের আকুল আকাংখা নিয়ে। এখানে সকল গুনাহ বলতে সকল ছগীরা অর্থাৎ ছোট গুনাহ বুঝানো হয়েছে। কেননা কবীরাহ বা বড় গুনাহ তাওবা ব্যতীত মাফ হয় না। যেমন সূরা নাজমের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “যারা কবীরাহ গুনাহ ও অশ্লীল কর্মসমূহ হতে বিরত থাকে, তবে ছোটখাট গুনাহ ব্যতীত। নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তা প্রশস্ত ক্ষমার অধিকারী”। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমাহ থেকে আরেক জুমাহ এবং এক রামাদ্বান থেকে আরেক রামাদ্বান, তার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য গুনাহের কাফফারাহ হয়ে যাবে যদি কবীরাহ গুনাহ হতে বেঁচে থাকে”।

রামাদ্বানের আগমনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদের উদ্দেশ্য করে ভাষন দিতেন। যেমন সুনানে আন-নাসাঈতে এসেছে- “হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে, তোমাদের নিকট রামাদ্বান উপস্থিত হয়েছে, যা একটি বরকতময় মাস। তোমাদের উপরে আল্লাহ তায়ালা অত্র মাসের রোজা ফরয করেছেন। এ মাসের আগমনে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর আল্লাহর অবাধ্য শয়তানদের গলায় লোহার বেড়ী পরানো হয়। এ মাসে একটি রজনী রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি সেই রজনীর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়ে গেল সে প্রকৃত বঞ্চিত রয়ে গেল”।

ক্বদর কখন?

এ রজনী কোন মাসে সে বিষয়ে সূরা বাক্বারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন- “রামাদ্বান মাস। যে মাসে নাযিল হয়েছে কুরআনুল কারীম। মানবজাতির জন্য হেদায়াত ও হেদায়াতের স্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসাবে এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসাবে”। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রামাদ্বান মাসের মধ্যম দশকে ইতিকাফ করেছিলাম। তিঁনি বলেন, আমাকে লাইলাতুল ক্বাদার দেখানো হয়েছিল। পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রামাদ্বান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে তা অনুসন্ধান করো”।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের আরো একটি হাদীসে এসেছে- “হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদ্বান মাসের শেষ দশকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ইবাদাতে অধিক মশগুল থাকতেন”। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে অন্য হাদীসে এসেছে- “হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামাদ্বান মাসের শেষ দশকে রাত জাগতেন, তহবন্দ শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে ইবাদাতে মশগুল হওয়ার জন্য জাগিয়ে দিতেন”।

সুনানে তিরমিজী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আব্দুর রাহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লাইলাতুল ক্বাদার প্রসঙ্গে একবার আবূ বাকরা (রাঃ) এর কাছে আলোচনা হলো। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি বাণী শোনার কারণে আমি রামাদ্বান মাসের শেষ দশদিন ব্যতীত অন্য কোন রাত্রে লাইলাতুল ক্বাদারকে খোঁজ করি না। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তোমরা ক্বদরের রাত খোঁজ কর রামাদ্বানের নয়দিন বাকী থাকতে বা সাতদিন বাকী থাকতে বা পাঁচদিন বাকী থাকতে বা তিন দিন বাকী থাকতে অথবা এর শেষ রাত্রে”।

সুনানে আবু দাউদ শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত যির (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উবাই ইবনে কাব (রাঃ) কে আমি বললাম, হে আবুল মুনযির! এই যে সাতাশের রাত লাইলাতুল ক্বাদার, আপনি সেটা কি করে জানতে পারলেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এই রাত্রের পরবর্তী সকালে সূর্য উদিত হয় ক্ষীণ আলো নিয়ে দীপ্তিহীন অবস্থায়। আমরা সেটাকে গুনে এবং স্মরণ করে রেখেছি। আল্লাহ তায়ালার শপথ! ইবনে মাসঊদ (রাঃ) ও জানেন যে, সেটা হচ্ছে রামাদ্বানের রাত্র এবং সাতাশেরই রাত্র। কিন্তু তোমাদেরকে তিনি তা জানাতে পছন্দ করেননি, তোমরা যদি পরে এটার উপর নির্ভর করে বসে থাক”।

সহীহ বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল ক্বাদার সম্পর্কে জানানোর জন্য বের হলেন। তখন দুজন মুসলমান বিবাদ করছিলো। তিঁনি বললেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে জানানোর জন্য বেরিয়েছিলাম, কিন্তু তখন অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (লাইলাতুল ক্বাদার নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর হয়তো বা এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তোমরা তা অনুসন্ধান করো (রামাদ্বানের) ২৭, ২৯ ও ২৫ তম রাতে”।

এতদ্ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমস্ত হাদীস একত্রিত করলে এ রাত্রিকে নির্দিষ্ট করার কোন উপায় নেই। যদি ২৭ এর রাত্রি নির্দিষ্ট হতো, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ কেবল এ রাতেই ইবাদতে রত থাকতেন। কিন্তু তাঁদের আমল ছিলো এর বিপরীত। তারা শেষ দশকে ইতিকাফে ও ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। অথচ আমরা কেবল ২৭ রাত্রিকেই শবে ক্বদর ধরে নিয়েছি এবং এ রাত্রিকে ইবাদতের জন্য এমনকি ওমরাহর জন্য খাছ করে নিয়েছি। অথচ ৮ম হিজরীর ১৭ই রামাদ্বান মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৯ দিন সেখানে অতিবাহিত করেন। কিন্তু তিঁনি বা তাঁর সঙ্গী সাহাবীগণের কেউ ২৭শে রামাদ্বানে বিশেষভাবে শবে ক্বদর পালন করেননি বা ওমরাহ করেননি। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতটিকে বিশেষভাবে নির্ধারণ করেননি। অথচ আমরা এটাকে নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে অনুষ্ঠান প্রিয় হয়ে পড়েছি। এবং শর্টকাট রাস্তায় জান্নাত পাওয়ার শয়তানী ধোঁকায় নিপতিত হয়েছি। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন-আমীন! আল্লামা ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, আল্লাহ পাক এ রজনীকে গোপন রেখেছেন তার তাৎপর্য এই যে, বান্দা যেন সারা রামাদ্বান ইবাদতে কাটায় এবং শেষ দশকে তার প্রচেষ্টা যোরদার করে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

ফেরেশতাগনের আগমন।

এই রজনীতে রাহমাতের পশরা নিয়ে হাজার হাজার ফেরেশতাকে সঙ্গী করে রূহ (হযরত জীব্রাঈল) আল্লাহর বিশেষ অনুমতিক্রমে বিভিন্ন নির্দেশনা সহকারে আগমন করেন দুনিয়ার জমিনে। এবং এই সময় তাঁরা পৃথিবীতে আল্লাহর রাহমাত বিতরণ করেন। এখানে ‘রূহ’ অর্থ জীব্রাঈল (আঃ)। যেমন সূরা মারিয়াম এর ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন- “অতঃপর আমরা তার (মরিয়ামের) নিকটে আমাদের রূহকে (জীব্রাঈলকে) পাঠালাম। অতঃপর সে তার (মরিয়ামের) নিকটে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করলো”। অমনিভাবে সূরা শো’আরার ১৯৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “বিশ্বস্ত ফেরেশতা (জীব্রাঈল) একে (কুরআনকে) নিয়ে অবতরণ করে”। আলোচ্য আয়াতে ফেরেশতাগণ বলার পরে পৃথকভাবে রূহ বলে ফেরেশতাগণের সর্দার হিসাবে জীব্রাঈল (আঃ) এর স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রকাশ করা হয়েছে।

এখানে নিদর্শনা অর্থ হচ্ছে- আল্লাহর বিভিন্ন নির্দেশনা সহকারে। যেমন সূরা রাদের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “ফেরেশতাগণ তাকে (মানুষকে) হেফাজত করে থাকে আল্লাহর নির্দেশে”। তাফসীরে কুরতুবীতে এসেছে- হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- “আল্লাহর ঐ সকল নির্দেশ সহকারে যা তিঁনি আগামী এক বছরের জন্য নির্ধারিত করেছেন ও ফায়সালা করেছেন”।তাফসীরে ইবনে কাসীরে এসেছে- “হযরত ক্বাতাদাহ ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন- “যাতে বিভিন্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত থাকে এবং মৃত্যু ও রূজীর হিসাব নির্ধারিত থাকে”। যেমন সূরা দুখানের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “এ রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়”।

ক্বদরের শান্তি।

এ রজনীতে শান্তিই বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। তাফসীরে ইবনে কাসীরে এসেছে- হযরত ক্বাতাদাহ ও ইবনে যায়েদ বলেন- এ রজনীতে কেবলই মঙ্গল। ফজর পর্যন্ত কোন অমঙ্গল নেই। তাফসীরে তাবারীতে এসেছে- সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু শান্তিই শান্তি, মঙ্গলই মঙ্গল তথা কল্যাণে পরিপূর্ণ। সে রাত্র সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত। তাফসীরে সা‘দীতে এসেছে- লাইলাতুল ক্বাদার এর এই বরকত রাত্রির শুরু অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর হতে ফজরের উদয় পর্যন্ত বিস্তৃত। তাফসীরে কুরতুবীতে এসেছে- হযরত শাবী (রহঃ) বলেন- এ রাতে মাগরিব হতে ফজর পর্যন্ত ফেরেশতাগণ মসজিদের মুছল্লীদের উপরে এবং প্রত্যেক মুমিনের উপরে সালাম করে বলেন- হে মুমিন আপনার উপরে শান্তি বর্ষিত হউক!

ক্বদরেও যারা মাফ না পেতে পারেন।

উল্লেখ্য যে, এরাতের বারাকাত থেকে বঞ্চিত হয় ঐসব গৃহের মানুষ যেখানে রাহমাতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। যেমন আবু ত্বালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন- “ঐ গৃহে (বা স্থানে) (রাহমাতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না, যেখানে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে”।

ক্বদরের আমল ও দোয়া

এ রজনীতে যত বেশি আমল করবেন তাতে আপনার নিজের লাভ হবে। এ রজনীতে বেশি বেশি কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা, নফল ইবাদত করা, নফল নামাজ সহ বেশি বেশি তাওবাহ ইস্তেগফার করে জীবনের গুনাহ মাফির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লামা ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, সর্বদা বেশী বেশী প্রার্থনা করা মুস্তাহাব। রামাদ্বান মাসে আরও বেশী এবং রামাদ্বানের শেষ দশকে আরও বেশী। তন্মধ্যে শেষ দশকের বেজোড় রজনীগুলিতে সবচাইতে বেশী বেশী দোয়া করতে হবে। বিশেষভাবে যে দোয়াটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আয়শা (রাঃ) কে এ রজনীতে পড়ার জন্য শিক্ষা দিয়েছিলেন, দোয়াটি হচ্ছে- “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আ’ফউয়া ফাআ’ফু আ’ন্নী”। অর্থ: “হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল! তুমি ক্ষমা করতে ভালবাসো। অতএব আমাকে ক্ষমা করো”।

সর্বোপরি এ রজনীর অপরিমেয় ফজিলত ও বারাকাত লাভের আশায় রামাদ্বানের শেষ দশকে বিশেষ করে বেজোড় রজনীতে সাধ্যমত ইবাদত করার চেষ্টা করতে হবে। যাতে কলুষিত অন্তরজগত পরিশুদ্ধ হয় এবং আল্লাহর নূর ও হেদায়াত লাভে ধন্য হওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করে হেদায়ত করুন এবং মহিমান্বিত ক্বদরের যত নিয়ামত ও বারাকাত আছে আমাদের নসিব করুন। এই মহিমান্বিত রজনীসহ সারা বছর তাঁর মকবুল গোলামী করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

আরও সংবাদ