আরো এক ধাপ পিছাল বাংলাদেশ
আজ ৩ মে। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত হিসেবে দিবসটি নিয়ে কিছু লিখব ভাবছিলাম। কিন্তু নানা ব্যস্থতার কারনে লেখতে একটু দেরি হয়েছে। দিবসটির শেষ প্রান্তে এসে রাত এগারোটায় কিছু লেখতে বসলাম কেবলমাত্র মনের কথা গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় এবছর আরও এক ধাপ পিছিয়েছে। গত ২০ এপ্রিল রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২১ সালের এই সূচক প্রকাশ করে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর সেই সূচকে এক ধাপ করে পেছাচ্ছে বাংলাদেশ। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৫২তম। সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম। আর ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। অর্থাৎ, গতবারের স‚চকেও বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছিল।
গণমাধ্যমকে দেশের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। যেমন ৪টি পিলার ছাড়া একটি বিল্ডিং দাঁড় করানো সম্ভব নয়। তেমন গণমাধ্যম ছাড়া দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ বক্তব্য দিয়ে নেতা কিংবা আমলারা মাইক পাঠান। সভা সেমিনারে লম্বা লম্বা কথা বলেন। তবে কি গণমাধ্যম বাংলাদেশে মুক্ত ভাবে কাজ করতে পারছে? আমরা কি যা দেখছি তা লিখতে পারছি? রাজনীতিবীদ, আমলা ও ব্যবসায়ীরা কি আমাদের সহযোগীতা করছেন? এ প্রশ্নের উত্তর পাঠকরাই দিবেন।
মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে রাজনীতিবীদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সহপাঠিদের ধারা হয়রানি কোনো অংশে কম নয়। মাঠ পর্যায়ের অধিকাংশ সাংবাদিক নেতারা সিন্ডিকেট এবং অবৈধ আয়ের সাথে জড়িত। নিজেদের সেল্টার দিতেই সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। গড়ে তোলেন একটি বলয়। বলয় টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক টাকাও ইনভেষ্ট করেন। এক্ষেত্রে হরহামেশা দেখা যায়, একজন সাংবাদিক অপর সাংবাদিকের মতাদর্শ কিংবা বলয়ের না হলে তাকে নানা ভাবে হেনেস্থার স্বীকার হতে হয়। তার নামে মিথ্যা প্রচারণা করা হয়। নামে বেনামে তার হাউজে অভিযোগ পাঠানো হয়। এ পেশা থেকে তাকে সরানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করা হয়। দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিবীদ, আমলা বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণসহ নিউজ করলেও প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ান অপর সাংবাদিকরা। টিভি, পত্রিকা বা অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরপরই প্রতিপক্ষ সাংবাদিকরা অভিযুক্তের কাছে গিয়ে প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেন। এই নিউজে কিছু হবে না বলে তাকে সহযোগীতার আশ্বাস দেন। নিউজের প্রতিবাদ নিজে লেখে দেন। কিভাবে এর মুখাবেলা করবে তাও বাতলিয়ে দেন। এর বিনিময়ে দুর্নীতিগ্রস্থদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকাও নেন। এতে দুর্নীতিগ্রস্থদের সাহস বেড়ে যায়। তারা ভাবে সাংবাদিকদের বড় একটি অংশ তো আমার সাথে আছে। এ প্রতিবেদক তো আমার কিছুই করতে পারবে না। দুর্নীতি করতে সে আরও উৎসাহ পায়।
একই বলয় কিংবা মতাদর্শের না হলে সকল কাইটেরিয়া পূরণের পরেও মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবের সদস্য করা হচ্ছেনা। এ রীতি দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় রয়েছে। তবে এর মধ্যেও আছেন কিছু নীতিবান ও ন্যায় পরায়ন সহকর্মী। যাদের কারণে এ পেশার প্রতি এখনও সাধারণ মানুষের আস্থা ও সম্মান রয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ ৯ বছরে এরকম শতাধিক অভিজ্ঞতা হয়েছে। হৃদয়ের ডায়েরীতে এগুলো লিখে রেখেছি। সময় এবং পরিস্থিতির আলোকে হয়তো কোনো সময় পাঠকদের জানাবো।
একটি গল্প দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করতে চাই। এক বৃদ্ধের ৫ ছেলে ছিল। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে তিনি সবাইকে দুটি ছোট ছোট লাঠি নিয়ে তার কাছে আসতে বললেন। সবাই তার সামনে দুটি করে ছোট ছোট লাঠি নিয়ে আসলেন। প্রথমে সবাইকে আলাদা আলাদা ১টি করে লাঠি ভাঙ্গতে বলেন। সাথে সাথে সবাই একটা করে ভেঙ্গে ফেলে। পরে প্রত্যেক্ষের হাতে থাকা অপর লাঠি গুলো একত্র করে প্রথমে বড় ছেলের হাতে দিয়ে ভাঙ্গার কথা বলেন। কিন্তু সে ভাঙ্গতে পারেনি। এভাবে এক এক করে কেউই একত্রে থাকা লাঠি ভাঙ্গতে পারেনি। পরিশেষে তিনি ছেলেদের বলেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমি মারা যাওয়ার পরে কেউ তোমাদের পরাজিত করতে পারবেনা।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সকল সংবাদকর্মী ভালো থাকুন এই প্রত্যাশা।
লেখকঃ সংবাদকর্মী।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান