মৌলভীবাজারে প্রতিবন্ধি শিশুদের ভাতা আত্মসাৎ
মৌলভীবাজার সমাজ সেবা অফিসে প্রতিবন্ধি শিশুদের ভাতা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বিকাশ নম্বরে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। ভোক্তভুগীরা বলছেন, সমাজ সেবা অফিসের কতিপয় কর্মচারী প্রতিবন্ধি শিশুদের ভাতা আত্মসাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রতিবন্ধি শিশুদের অভিভাবকদের বিকাশ নম্বরে ভাতা না পাঠিয়ে অন্য বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাচ্ছেন। এবিষয়ে ভোক্তভুগী অভিভাবকরা মৌলভীবাজার সমাজ সেবা অফিসের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিবন্ধি শিশুদের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য সমাজ সেবা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবৎ তারা প্রতিবন্ধি শিশুদের ভাতা আত্মসাৎ করছে।
লিখিত অভিযোগ ও প্রতিবন্ধি শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে জানা যায়, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ রফি উদ্দিন ২০১৬ সালের ২৩ মে মৌলভীবাজার সমাজ সেবা অফিসে তার অটিস্টিক ছেলে আবির আনজুম উৎস এর প্রতিবন্ধি নিবন্ধন করেন (আইডি নম্বর ২০০৬৫৮৭৪২০৪০৫৫০৫৭-০১)। ভাতার জন্য উনার ব্যবহৃত ০১৭১১৪৬০৬৫৭ বিকাশ নম্বর দেন। কিন্তু এযাবৎ বিকাশ নম্বরে এক বারও ভাতা না আসায় সম্প্রতি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ইতিমধ্যে ৭ কিস্তিতে ১৮ হাজার ৯০ টাকা অন্য একটি নম্বরে পাঠানো হয়েছে। সুমা বেগম নামের এক প্রতিবন্ধির ভাতাও তাদের দেয়া বিকাশ নম্বরে না পাঠিয়ে অন্য নম্বরে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবন্ধি সুমা বেগম এর বড় বোন মুন্নি বেগম বলেন, ভাতার জন্য আমাদের বিকাশ নম্বর ৩বার সমাজ সেবা অফিসে দেয়া হয়েছে। বিকাশ নম্বর লেখা ওই কাগজ এখনও আমাদের ঘরে রয়েছে। কিন্তু সমাজ সেবা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে ভাতার টাকা অন্য নম্বরে পাঠিয়েছেন।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ রফি উদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালে আমার শিশুর প্রতিবন্ধি নিবন্ধন করি। ভাতা প্রাপ্তির জন্য আমার ব্যবহৃত বিকাশ নম্বর দেই। কিন্তু এযাবৎ আমার নম্বরে বিকাশে কোনো টাকা না আসায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার বাচ্চার ভাতা অন্য একটি নম্বরে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই কর্মচারী ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের আওতাধীন ও পরিচিত বিকাশ নম্বরে পরিকল্পিতভাবে প্রতিবন্ধিদের ভাতা আত্মসাৎ করছেন।
এবিষয়ে এক প্রতিবন্ধি শিশুর অভিভাবক সাবেক অধ্যক্ষ বলেন, দেড় বছর হয়েছে প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য মৌলভীবাজার সমাজ সেবা অফিসে আমার ছেলের কাগজপত্র দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত গত মাসে মাত্র একটি এসএমএস এসেছে। কিন্তু বিকাশে সমস্যা থাকায় ওই টাকাও তুলতে পারছি না। প্রতিবন্ধি শিশুদের ভাতা নিয়ে কি হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না।
অভিযুক্ত পৌর সমাজ কর্মী প্রকাশ চন্দ্র দাস মোবাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, অফিসে আসিয়েন তাহলে আপনার সাথে কথা বলব।
মৌলভীবাজার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবারে এরকম একটি অভিযোগ এসেছে। রোববার অফিসে এসে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্য কোনো অভিভাবকরা ইতিপূর্বে ভাতা না পাওয়ার অভিযোগ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই মৌখিকভাবে বলেছিলেন বিকাশে ভাতা পাচ্ছেন না। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।