সম্মানীত মাস ও দিন: মুহাররাম ও আশুরা

আল্লাহ তাআলার নিকট বারোটি মাস নির্ধারিত আসমান ও জমিন সৃষ্টির পূর্ব থেকেই। আবার এই বারোটি মাসের মধ্যে চারটি মাসকে আল্লাহ সম্মানীত মাস হিসেবে মনোনীত করেছেন। যেভাবে সমস্ত নবী রাসূলদের মধ্যে থেকে কয়েকজন নবী রাসূলের সম্মান বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। চারটি সম্মানীত মাসের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পবিত্র মুহাররাম মাস। ইরশাদ হচ্ছে- "নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনায় মাস বারোটি। তার মধ্যে চারটি সম্মানীত মাস। আর এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন বা ধর্ম। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না। এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করো। যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন"।(সূরা আত-তাওবা ৩৬)

আল্লাহ তাআলার নিকট বারোটি মাস নির্ধারিত আসমান ও জমিন সৃষ্টির পূর্ব থেকেই। আবার এই বারোটি মাসের মধ্যে চারটি মাসকে আল্লাহ সম্মানীত মাস হিসেবে মনোনীত করেছেন। যেভাবে সমস্ত নবী রাসূলদের মধ্যে থেকে কয়েকজন নবী রাসূলের সম্মান বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। চারটি সম্মানীত মাসের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পবিত্র মুহাররাম মাস। ইরশাদ হচ্ছে- “নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনায় মাস বারোটি। তার মধ্যে চারটি সম্মানীত মাস। আর এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন বা ধর্ম। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না। এবং তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করো। যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে থাকে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন”।(সূরা আত-তাওবা ৩৬)

সম্মানীত মাসে করণীয় ও বর্জনীয়

সম্মানীত মাস সমূহে আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীদের অনেক সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ মত পাওয়া যায়। বিশেষ করে উপরে উল্লেখিত সূরা আত-তাওবার ৩৬ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (র.) বলেছেন- আল্লাহ তাআলা বলেন, এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম। সুতরাং তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা এই মাসগুলোর যথাযথ সম্মান দান করো। বিশেষভাবে এই মাসগুলোতে পাপকার্য থেকে দূরে থাকো। কেননা, এতে পাপের দুস্ক্রিয়া আরো বৃদ্ধি পায়। যেমন হারাম শরীফে কৃত পাপ অন্যান্য স্থানে কৃত পাপ অপেক্ষা বেশী হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি ওর মধ্যে (হারাম শরীফের মধ্যে) অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি করে ধর্মদ্রোহীতার কাজে লিপ্ত হবে, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো। অনুরূপভাবে এই মাগুলোর মধ্যে পাপকার্য করলে আন্যান্য মাসে কৃত পাপকার্যের চেয়ে গুনাহ বেশী হয়।

হযরত ইমাম শাফিঈ (র.) এবং আলেমদের একটি বৃহৎ দলের মতে এই মাসগুলোর মধ্যে কেউ কাউকে হত্যা করলে ওর রক্তপণও কঠিন হবে। এ রকমই হারাম শরীফের ভিতরের হত্যা ও নিকটতম আত্মীয়ের হত্যা।

হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে, আল্লাহ পাকের উক্তির মর্মার্থ হচ্ছে- তোমরা বছরের সকল মাসে পাপকার্য থেকে বিরত থাকবে, বিশেষ করে এই চার মাসে। কেননা, এগুলো বড়ই সম্মানীত মাস। এ মাসগুলোতে পাপ শাস্তির দিক দিয়ে এবং পুণ্য বা সাওয়াব প্রাপ্তির দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

হযরত কাতাদা (রা.) বলেন যে, এই সম্মানীত মাসগুলোতে পাপের শাস্তির বোঝা বেড়ে যায়, যদিও অত্যাচার সর্বাবস্থাতেই খারাপ। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর যে কাজকে ইচ্ছা বড় করে থাকেন। তিনি বলেন যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সৃষ্টির মধ্য থেকেও বাছাই ও মনোনীত করেছেন। তিঁনি ফেরেশতাদের মধ্য থেকে দূত মনোনীত করেছেন, মানব জাতির মধ্য থেকে রাসূলদেরকে মনোনীত করেছেন, কালামের মধ্য থেকে তাঁর যিকিরকে পছন্দ করেছেন, জমিনের মধ্যে মসজিদ সমূহকে পছন্দ করেছেন, মাসগুলোর মধ্যে রামাদ্বান ও হারাম মাসগুলোকে মনোনীত করেছেন, দিনগুলোর মধ্যে শুক্রবারকে পছন্দ করেছেন এবং রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল ক্বদরকে মনোনীত করেছেন। এভাবে মহান আল্লাহ যেটাকে ইচ্ছা করেছেন একটির উপর অন্যটিকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সুতরাং যেগুলোকে আল্লাহ তাআলা সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন সেগুলোর সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য কর্তব্য। বুদ্ধিমান ও বিবেচক লোকদের মতে কোন বিষয়ের ঐ পরিমাণ সম্মান করা উচিত যে পরিমাণ সম্মান আল্লাহ পাক ওতে দান করেছেন। বরং এগুলোর সম্মান না করা হারাম। এ মাসগুলোতে যা করা হারাম তা হালাল করা চলবে না এবং যা হালাল তা হারাম করা উচিত নয়, যেমন মুশরিকরা করতো। এটা তাদের কুফরীর মধ্যে বৃদ্ধিরই শামিল।(তাফসীরে ইবনে কাসির)

পবিত্র মুহাররাম মাস যেহেতু একটি সম্মানীত মাস তাই অন্যান্য মাসের চাইতে এ মাসে বিভিন্ন ইবাদতে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে তাওবাহ ও ইস্তেগফার বেশি বেশি করা। কারণ তাওবাহ ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে গুনাহের গন্ধে কলুষিত আত্মাকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা সম্ভব। আর যারা নিয়মিত তাওবাহ ও ইস্তেগফার করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন”। (সূরা আল-বাকারাহ ২২২)

এই সম্মানীত মাসে আমরা বেশি করে নেক আমল করার চেষ্টা করতে হবে। সম্মানীত মাস সমূহের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও হযরত কাতাদা (রা.) থেকে অপর আরেকটি বর্ণনা রয়েছে, এ মাসগুলোতে কোনো আমল করার দ্বারা অন্য মাসের তুলনায় অধিক সাওয়াব লাভ হয় এবং এ মাসগুলোতে কোনো গুনাহের কাজ করলে অন্য মাসের তুলনায় অধিক গুনাহ হয়। (তাফসীরে তাবারী)

হযরত ইমাম আবু বকর জাসসাস (র.) বলেন- এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয় এবং এ মাসগুলোতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। (আহকামুল কুরআন)

কোন চারটি মাস হারাম বা সম্মানীত?

আল্লাহ তাআলার বিধানে বারোটি মাসের মধ্য থেকে কোন চারটি মাস হারাম বা সম্মানীত সে বিষয়টি সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবূ বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত- “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন – বারো মাসে বছর। তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানীত। তিনটি ধারাবাহিক- জিলক্বদ, জিলহজ্ব, মুহাররাম আর চতুর্থটি হলো রজব। যা জুমাদিউল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস”। (সহীস বুখারী ও মুসলিম)। আলাদাভাবে মুহাররাম মাস সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে- (রামাদ্বানের পর) শ্রেষ্ঠ মাস হচ্ছে আল্লাহর মাস, যাকে তোমরা মুহাররাম বলে থাক”। (সুনানে কুবরা ও নাসাঈ)

হিজরী নববর্ষের সূচনা

বছরের প্রতিটি মাস যদিও আল্লাহর মাস তারপরও মুহাররাম মাসকে আলাদাভাবে আল্লাহর মাস বলার বিশেষ হেকমত রয়েছে। যেমন পৃথিবীতে যত মসজিদ আছে সব মসজিদ হচ্ছে মূলত আল্লাহর ঘর কিন্ত কাবা শরীফকে আলাদাভাবে বায়তুল্লাহ তথা আল্লাহর ঘর বলা হয়। কেননা কাবা ঘরের আলাদা অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আছে। সুতরাং মুহাররাম মাস যেহেতু হিজরী নববর্ষের সূচনার মাস তাই এ মাসের গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। আর হিজরী নববর্ষের গুরুত্ব সম্পর্কে নবী করিম (সা.) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- “লোকেরা আপনার কাছে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি তাদেরকে বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজ-কর্মের) হিসাব এবং হজ্বের সময় নির্ধারণ করার জন্য”। (সূরা আল-বাকারাহ ১৮৯)

 নতুন চাঁদ দেখার দুআ

মুহাররাম মাস দিয়ে যেহেতু নতুন বছরের সূচনা হয় তাই এ মাসের নতুন চাঁদ দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে রহমত ও বরকতের দুআ করা উচিত।
হযরত ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ (রা.) বলেন- “নতুন চাঁদ দেখার পর নবী করিম (সা.) বলতেন- আল্লাহুম্মা আহলিলহু আলাইনা বিল ইউমনী ওয়াল ঈমানী ওয়াস সালামাতী ওয়াল ইসলামী রাব্বী ওয়া রাব্বুকা। অর্থ- “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য চাঁদটিকে বরকতময় (নিরাপদ), ঈমান, নিরাপত্তা ও শান্তির বাহন করে উদিত করো। হে নতুন চাঁদ আল্লাহ তাআলা আমারও প্রভু, তোমারও প্রভু”। (সুনানে তিরমিজী)

উল্লেখিত দুআটি শুধু মুহাররাম মাসে না বরং প্রতি মাসের নতুন চাঁদ দেখার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দুআ পড়তেন। সুতরাং কেউ যদি এটার উপরে আমল করে তাহলে তার নতুন মাসের ও নতুন বছরের চাঁদ দেখার দুআ পড়া হয়ে যাবে। তারপরও নতুন বছরের আলাদা একটি দুআর বর্ণনা পাওয়া যায় হযরত ইমাম আবুল কাছেম বাগাভী (র.) থেকে। দুআটি হচ্ছে- আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল আমনী ওয়াল ঈমানী ওয়াস সালামাতী ওয়াল ইসলামী ওজি ওয়ারী মিনাশ শাইতানী ওয়া রিদওয়ানী মিনার রাহমানী। অর্থ- “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মাঝে এ মাস/বছরের আগমন ঘটান- শান্তি ও নিরাপত্তা এবং ঈমান ও ইসলামের (উপর অবিচলতার) সাথে, শয়তান থেকে সুরক্ষা ও দয়াময় আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে”। (মুজামুস-সাহাবাহ ও আল-ইসাবাহ)

পবিত্র আশুরার দিন

মুহাররাম মাসটি সম্মানীত হওয়ার পিছনে অনেক গুলো কারণের মধ্য অন্যতম হচ্ছে পবিত্র আশুরা তথা দশই মুহাররামের দিন। কেননা এই দিনে আল্লাহ তাআলা অনেক বড় বড় ঐতিহাসিক ঘটনা সংগঠিত করিয়েছেন। বিশেষ করে হযরত মুসা (আ.) কে বনী ইসরাঈলের কবল থেকে নীলনদ পার করিয়ে ফেরাউন ও তার দলবলকে নদীতে নিমজ্জিত করেছিলেন। তাই এই দিনকে বিজয়ের দিন, আনন্দের দিন ও নাজাতের দিন হিসাবে হযরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারীরা রোজা পালন করতেন। আর এই দিনে রোজা রাখার অনেক গুরুত্ব ও ফযীলত হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।

রামাদ্বানের পরেই আশুরার রোজার অবস্থান

আশুরার দিনের রোজার মর্যাদা হচ্ছে রামাদ্বান মাসের ফরয রোজার পরেই তার অবস্থান। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- রামাদ্বানের পরে সর্বোত্তম রোজা হল মুহাররাম মাসের রোজা (অর্থাৎ আশুরার রোজা) এবং ফরয নামাযের পরে সর্বোত্তম নামায হল রাতের নফল নামায (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামায)। (সহীহ মুসলিম)

রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই রোজা রেখেছেন

এই দিন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) রোজা রেখেছেন এবং সাহাবীদের রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- “রাসূলুল্লাহ (সা.) মাদিনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিঁনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন যে তোমরা রোজা পালন করছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ হযরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন মুসা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.) এর অধিকতর ঘনিষ্ট ও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) রোজা পালন করলেন ও অন্যদেরকে রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

আশুরার রোজার গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (সা.) পবিত্র আশুরার দিনের রোজাকে খুব গুরুত্ব দিতেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন- “আমি আল্লাহর রাসূল (সা.) কে আশুরার দিনের রোজার উপরে অন্য কোন দিনের রোজাকে গুরুত্ব দিতে দেখিনি এবং এ মাস, অর্থাৎ রামাদ্বান মাস এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখিনি। (সহীহ বুখারী)

অপর আরেকটি হাদীসে হযরত সালামাহ ইবনু আকওয়া (রা.) বলেন- “রাসূলুল্লাহ (সা.) আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে লোকজনের মধ্যে এ মর্মে ঘোষণা দিতে আদেশ করলেন যে, যে ব্যক্তি খেয়েছে, সে যেন দিনের বাকি অংশে রোজা পালন করে, আর যে খায়নি, সেও যেন রোজা পালন করে। কেননা আজকের দিন আশুরার দিন”। (সহীহ বুখারী)

 এক বছরের গুনাহ মাফ হয়

সম্মানীত মাসের এই পবিত্র দিনে রোজা পালন করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। হযরত আবূ কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত- “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- আশুরার দিনের রোজার দ্বারা আমি আল্লাহর নিকট বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি”। (সহীহ মুসলিম)

দুটি রোজা রাখা মুস্তাহাব

আশুরার রোজা মূলত একটি ছিল। কিন্ত ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের থেকে ব্যতিক্রম করতে রাসূলুল্লাহ (সা.) দুটি রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন-
“যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। তখন সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আগামী বছর এদিন আসলে, আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশা-আল্লাহ”। (সহীহ মুসলিম ও আবু-দাউদ)

অপর একটি হাদীস হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখ। আর এ ব্যাপারে ইহুদীদের সাথে বিরোধিতা/ব্যতিক্রম কর। আশুরার আগে বা পরের দিন রোজা রাখ”। (মুসনাদে আহমদ)

আশুরার রোজা বাধ্যতামুলক ছিল

পবিত্র রামাদ্বান মাসের রোজা ফরয হওয়ার পূর্বে আশুরার রোজা বাধ্যতামুলক ছিল। পরে রামাদ্বানের রোজা ফরয হলে আশুরার রোজার হুকুম নফল হয়ে যায়। হযরত আয়শা (রা.) বলেন-
“আল্লাহর রাসূল (সা.) প্রথমে আশুরার দিনে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরে যখন রামাদ্বানের রোজা ফরয করা হলো তখন যার ইচ্ছা আশুরার রোজা পালন করত আর যার ইচ্ছা করত না”। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

সমাজের কিছু ভুল ধারণা

এই দিনকে সামনে রেখে আমাদের সমাজে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে যাহা আসলে ঠিক নয়। যেমন, অনেকে মনে করেন এই দিন রোজা রাখা হয় কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অথচ এই রোজা কারবালার ঘটনার বহু আগ থেকেই শুরু হয়েছে হযরত মুসা (আ.) এর মাধ্যমে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই রেখেছেন। তবে কারবালার ময়দানে অত্যন্ত নির্মমভাবে হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) শহীদ হয়েছিলেন। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এই ঘটনার স্মৃতি বড় বেদনাদায়ক ও হৃদয় বিদারক।

শোকের মাস কিংবা অশুভ সময় মনে করে কেউ কেউ মুহররাম মাসে বিবাহ-শাদী থেকে বিরত থাকেন। এটি সম্পূর্ণ অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার। এ মাসকে অশুভ মনে করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসকে আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করেছেন।

 আশুরার দিনে যা করণীয়

উপরে উল্লেখিত কয়েকটি হাদীস থেকে আমরা যা পেয়েছি তার সারাংশ হচ্ছে- যেহেতু এই দিন হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে রোজা রেখেছেন, তাই আমরা এই দিন আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার মনোভাব সৃষ্টি করতে পারি। আল্লাহর রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল ছিল এই দিন রোজা রাখা সুতরাং আমরাও এই দিন রোজা রাখব এবং এই উত্তম দিনে বিভিন্ন নেক আমল, দুআ ও তাওবাহ -ইস্তিগফার করব ইনশা-আল্লাহ।

আবার সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজনদের জন্য উত্তম খাবারের ব্যবস্থাও করতে পারি। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত- “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- আশুরা দিবসে যে ব্যক্তি তার পরিবার-পরিজনের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ পাক সারা বছর তার স্বচ্ছলতার ব্যবস্থা করে থাকেন”। (হাদীসখানা মুয়জামু ইবনে আরাবী, মুয়জামুল কবীর তাবরানী, শুয়াবুল ঈমান, ফাদ্বয়েলু আওকাত, কানজুল উম্মাল ও মাজমাউয যাওয়াইদ লিল হায়ছামীসহ আরো অনেক কিতাবে এসেছে)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে- “আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবার-পরিজনদের রিযিককে প্রশস্ত করবে, আল্লাহ তাআলা সারা বছর তার রিযিককে প্রশস্ত করে দিবেন”। (মাকাসীদুল হাসানাহ)

আশুরার দিনে যা বর্জনীয়

হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) ও কারবালার ঘটনা মনে করে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যেগুলোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। যেমন, নিজের শরীরকে জখম ও রক্তাক্ত করা, বুক চাপড়ানো, চেহারায় আঘাত করা, মাতম বা আহাজারি করা, শোক মিছিল বা তাযিয়া বের করা, ইয়া আলী, ইয়া হুসাইন বলে আবেগ জাহির করা ও জাহিলি যুগের মতো কথা-বার্তা বলা ইত্যাদি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ইসলামি শরীয়তের সঠিক জ্ঞান জানার, বোঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

আরও সংবাদ